১৮৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত ঐতিহ্যবাহী চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের মিলনমেলা বসে গত ১৩ মে শুক্রবার চট্টগ্রাম নগরীর নেভী কনভেনশন হলে। এই উৎসবে যোগ দেন কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীগণ, তাদের পরিবার পরিজন। অনুষ্ঠান চলাকালীন উদ্ধুত যে কোন স্বাস্থ্যগত সমস্যা মোকাবেলায় গঠিত হয় চিকিৎসা উপ-কমিটি। এই কলেজের ৮০ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র হিসাবে আমিও এই মিলন মেলায় শরীক হই। চিকিৎসা উপ কমিটির অন্যতম সদস্য হওয়ায় ১০মে কলেজের রেড বিল্ডিং এ অনুষ্ঠিত চিকিৎসা উপ কমিটির সভায় যোগদান করি। এই সভায় চিকিৎসা উপ কমিটির করণীয় নির্ধারিত হয়। এতে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে অনুষ্ঠান স্থলের হেলথ বুথে স্থাপিত চিকিৎসকগণ সার্বক্ষণিক চিকিৎসা সহায়তায় নিয়োজিত থাকবেন। সাথে থাকবে চিকিৎসা সরঞ্জাম। এখানে থাকবে স্বাস্থ্য সচেতনতামূলক বিভিন্ন লিফলেট, যা অনুষ্ঠানে যোগদানকারী আগ্রহীদের মধ্যে বিতরণ করা হবে। আমি আমাদের প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ হাইপারটেনশন এন্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগ বিষয়ক প্রায় ৫০০ লিফলেট বিতরণের জন্য তৈরী করি, সাথে কিছু ব্যানারও। আমি সকাল ৮.৩০ টা নাগাদ অনুষ্ঠানস্থলে পৌঁছে নিবন্ধন বুথ থেকে আমার ব্যাচ, কুপন ও বিভিন্ন উপহার সামগ্রী সংগ্রহ করি। সেখানে ১৯৯৩ ব্যাচের প্রাক্তন ছাত্র মোঃ ওসমান গণি দায়িত্বে ছিলেন। আমি ওসমানের কাছ থেকে তা সংগ্রহ করি। তার সাথে আমার ব্যক্তিগত পরিচয় ছিল না। আমি ওসমানকে ধন্যবাদ দিয়ে পাশে স্থাপিত হেলথ বুথের চিকিৎসকদের সাথে প্রয়োজনীয় আলাপ সেরে কনভেনশন হলের তিন তলায় উদ্বোধন অনুষ্ঠানে গিয়ে আসন গ্রহন করি। আমি উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে ব্যক্তিগত কাজে কিছু সময় অনুষ্ঠানের বাইরে অবস্থান করি। আবার দুপুরে ফিরে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দিই। পুরানো বন্ধু ডা. কাসেম, ডা. সাইফুল্লাহ, ইঞ্জিনিয়ার প্রবীর কান্তি দাশ, ডা. মুজিব ও অন্যান্যদের সাথে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগে মত্ত হই। এতদিন করোনা পরিস্থিতিতে আমরা দীর্ঘ সময় পরস্পর থেকে অনেকটা দূরে ছিলাম। অনেকদিন পর এই ধরনের কোন মিলন মেলায় একত্রিত হওয়া। স্টেজে ততক্ষণে শুরু হয়ে গেছে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। সংগীত, নৃত্যানুষ্ঠান, কৌতুক, স্মৃতিচারণ, কুইজ। চলছে আড্ডা, ছবি তোলা, সেলফি।সবাই আবেগ আপ্লুত। স্টেজের কন্ঠ শিল্পীদের সাথে কন্ঠ মিলিয়ে গান গাওয়া, আর তালে তালে নৃত্য সব মিলিয়ে এক অনাবিল আনন্দঘন পরিবেশ।
চট্টগ্রাম কলেজের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের পরিবেশনায় বিভিন্ন সংগীত ও নৃত্য। সঙ্গীতানুষ্ঠানের উল্লেখ্যযোগ্য অংশজুড়ে ছিল চট্টগ্রামের আঞ্চলিক গান। কলেজের প্রাক্তন ছাত্র কলকাতা জিটিভির মীরাক্কেলের শিল্পী আরমান তার কৌতুক পরিবেশনার মাধ্যমে দর্শকদের মাতিয়ে রাখেন। তারপর শুরু হয় ঢাকা থেকে আগত শিল্পীদের পরিবেশনা। নৃত্যশিল্পী মৌ ও তার দলের পরিবেশনা দর্শকদের আনন্দে উদ্বেলিত করে । এই কলেজের প্রাক্তন ছাত্র সংগীত শিল্পী নকীব খান, কন্ঠশিল্পী সামিনা চৌধুরী ও বাপ্পা মজুমদার তাদের পরিবেশনায় দর্শকদের মন ভরিয়ে দেন। কলেজে ফেলে আসা স্মৃতি রোমন্থন, সোনালী দিনের বন্ধুদের সাথে মহামিলনের আনন্দ অনুভূতি, সাথে সঙ্গীত ও নৃত্যের সুর মুচ্ছনা- সে যেন এক অলৌকিক আনন্দ। কিন্তু শিল্পী সামিনা চৌধুরীর কন্ঠে তার পরিবেশনা শেষে অনেকটা অপ্রত্যাশিতভাবে প্রয়াত লাকী আকন্দের গানের কলি ‘আমায় ডেকো না ফিরানো যাবে না। ফেরারী পাখিরা কুলায় ফিরে না’ গেয়ে উঠেন। আনন্দ, উচ্ছ্বাসের মধ্যে বেদনার গান। অতঃপর তিনি মৃত্যু সম্পকীয় কিছু কথাও বলেন। তখন দর্শক এতে নড়ে চড়ে বসেন। আনন্দের মাঝে বিষাদের সুর। তারপরই স্টেজে এসে বাপ্পা মজুমদার তার পরিবেশনার ফাকে উল্লেখ করেন ইতিমধ্যে ঘটে যাওয়া বেদনাদায়ক সেই ঘটনা। যার কারণে চলমান এই আনন্দানুষ্ঠান কাট ছাট করতে হচ্ছে। ততক্ষণে সবাই জেনে গেলেন নিবন্ধন বুথে দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম কলেজের ৯৩ ব্যাচের ছাত্র ওসমান গণি হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন। রাত ৮.০০টার দিকে অনুষ্ঠানস্থলে ওসমান হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়েন। অজ্ঞান অবস্থায় তাকে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। ওসমানের এই অপ্রত্যাশিত ও হঠাৎ মৃত্যু সংবাদে চারিদিকে শোকের ছায়া নেমে আসে। স্টেজে উদ্যাপন কমিটির সদস্যগণ কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। গত তিনমাস যাবৎ ৪৬ বছর বয়সী ওসমান এই অনুষ্ঠানকে সফল করতে অক্লান্ত পরিশ্রম করে গেছেন।
যে অনুষ্ঠান স্থল একটু আগেই ছিল আনন্দ উচ্ছ্বাসে উদ্বেলিত তা নিমেষেই বিষাদে মলিন হয়ে পড়ে। কবিগুরু রবীন্দ্রনাথের ভাষায় ‘অলৌকিক আনন্দের ভার বিধাতা যাহারে দেন তার বক্ষে বেদনা অপার।’ এতে এই মিলন মেলার আয়োজক ও অংশগ্রহণকারীদের অলৌকিক আনন্দ অপার বেদনায় রূপ নেয়। আমাদের চিকিৎসা উপ কমিটির গৃহীত পদক্ষেপ ওসমানকে বাঁচাতে পারেনি।
বস্তুত তার জন্য কিছু করা সম্ভব হয়নি। আকস্মিকভাবে ওসমান মৃত্যুকে আলিঙ্গন করে এবং তা হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে। চিকিৎসা উপ কমিটির সদস্য ও সর্বোপরি হৃদরোগের চিকিৎসক হয়ে ওসমানের জন্য কিছু করতে না পারায় এক ধরনের অপরাধবোধ কাজ করছে আমার মধ্যে। স্টেজের পর্দায় ভেসে উঠল সদ্য প্রয়াত ওসমানের ছবি। তা দেখে আমি তাকে সনাক্ত করি। এই ওসমানের হাত থেকেই বারো ঘন্টারও কম সময় পূর্বে আমি অনুষ্ঠানের প্যাকেট গ্রহণ করি। সকাল বেলার অনেকটা অপরিচিত ওসমান সন্ধ্যায় এভাবেই আমার কাছে পরিচিত হয়ে উঠবে তা আমি ভাবিনি। এই এক নিষ্ঠুর বাস্তবতা। এই বাস্তবতাকে মেনে নিয়ে ওসমানের আত্মার শান্তি কামনা করে আমি অনুষ্ঠানস্থল ত্যাগ করি। মৃত্যুকালে ওসমানের বয়স মাত্র ৪৬। ওসমানে মতো ব্যক্তিদের এই রকম অপরিনত বয়সে এভাবে ধুম্ করে হঠাৎ মারা যাওয়ার কারণ কি? তা কি কোন ভৌতিক কারণে? তা ঘটেছে আদিকাল থেকেই। এটা অনেককাল ধরে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করেছে; চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের বিব্রত করেছে। চতুদ্দর্শ শতাব্দীর শেষের দিকে লিওনার্দো দ্যা ভিঞ্চি মৃতদেহ ব্যবচ্ছেদের মাধ্যমে দেখেন যে হঠাৎ মৃত্যুবরণকারীদের হৃৎপিণ্ডের রক্তনালী সংকুচিত ও অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। এটাই চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইতিহাসে হার্ট অ্যার্টাকজনিত হঠাৎ মৃত্যুর প্রথম পর্যবেক্ষণ। প্রচীন মিশরীয় প্যাপিরাসে উল্লেখ রয়েছে, যখন হৃৎপিণ্ডের রক্তনালী সংকুচিত ও অবরুদ্ধ হয় তখন তা দুর্বল ও অসুস্থ হয়ে পড়ে, হৃৎপেশীতে কাঁপন ধরে এবং হৃৎপিণ্ড বন্ধ হয়ে মৃত্যু ঘটে। এটাই ডেট্রিকুলার ফিব্রিলেশন, যা কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট জনিত হঠাৎ মৃত্যুর জন্য দায়ী। আমেরিকায় প্রতি ৪৫ মিনিটে একজন এভাবে হঠাৎ মৃত্যুবরণ করে। আমাদের দেশে এই ধরনের কোন পরিসংখ্যান নেই। হঠাৎ মৃতুবরণকারীদের প্রায় ক্ষেত্রে কোন পোস্ট মর্টেমও করা হয় না। তাই তার কারণ বয়ে যায় অজানা। তবে এই ধরনের মৃত্যু অপ্রত্যাশিতভাবে ঘটে যায়, যেমন ঘটেছে ওসমানের বেলায় অভিরাম পাম্প করে যাওয়া হৃৎপিণ্ড হঠাৎ থেমে গেলে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে জ্ঞান লোপ পায় । তা কয়েক মিনিটের বেশী স্থায়ী হলে মস্তিকের রক্ত চলাচল বন্ধ হয়ে দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষতি হয় এবং আক্রান্ত ব্যক্তির ‘ব্রেইন ডেথ’ ঘটে। এই অবস্থা থেকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে আর ফিরানো যায় না। তখনই চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। প্রয়াত লাকী আকন্দের সেই গানের কলির ‘ফেরারী পাখি’র মতো হৃৎস্পন্দন তথা জীবন আর ফিরে আসে না। কোন চেষ্টাই আর কাজে লাগে না। তবে তাৎক্ষণিক ভাবে বুকে ম্যাসাজা এবং নাক মুখে শ্বাস দিয়ে হঠাৎ বন্ধ হয়ে পড়া হৃৎযন্ত্রকে পুনরায় চালু করা যায়। এটাই কার্ডিওপালমোনারী রিসাসিটেশন (cardiopulmonary resuscitation) বা সিপিআর। এতে হঠাৎ অজ্ঞান হয়ে পড়া ব্যক্তিকে ঊর্ধ্বমুখী শোয়ানো অবস্থায় বুকের উপর চাপ প্রয়োগ করে বুকের চ্যাপ্টা হাড় স্টার্নামকে ২ ইঞ্চি দাবিয়ে দিয়ে হৃৎপিণ্ডকে স্টার্নাম ও পিঠের মেরুদন্ডের মাঝখানে সংকুচিত করা হয়। এতে মস্তিস্ক ও শরীরের অন্যান্য স্থানে রক্ত চলাচল পুণঃ প্রতিষ্ঠা হয় এবং থেমে যাওয়া হৃৎপিণ্ড আবার কাজ শুরু করে। এতে মৃত কিংবা মৃতপ্রায় ব্যক্তি প্রাণ ফিরে পায়। আমেরিকান হার্ট এসোসিয়েশন ১৯৬০ সাল থেকে এই সিপিআর প্রশিক্ষণ শুরু করে। সিপিআর-এ মিনিটে ১০০ বার ম্যাসাজ দিতে হয়। ঘটনাস্থলে দুইজন সেবাদানকারী উপস্থিত থাকলে ম্যাসাজ ও শ্বাস প্রশ্বাসের অনুপাত হবে ৩০:।
তবে অপরিচিত আক্রান্তের ক্ষেত্রে কিংবা পারিপাশ্বিক অবস্থা অনুকূলে না থাকলে কেবল ম্যাসাজ দিয়ে যাওয়াকে এক্ষেত্রে সুপারিশ করা হয়েছে। এ প্রক্রিয়া চালিয়ে যেতে হবে যতক্ষণ পর্যন্ত না আক্রান্ত ব্যক্তির হৃৎস্পন্দন ও শ্বাস প্রশ্বাস ফিরে আসে কিংবা তাকে অ্যাম্বুলেন্সে সিসিইউতে পৌঁছানো যায়। যেকোন পরিস্থিতিতে, যেকোন ব্যক্তির এই সিপিআর দেওয়ার ধারণা ও সক্ষমতা থাকা আবশ্যক। তাই তা মৌলিক জীবন রক্ষাকারী ব্যবস্থা। এখানে কালক্ষেপন মৃত্যু ডেকে আনবে। সিপিআর প্রয়োগে জ্ঞান ফিরে আসলে ডিসি শক্ দিয়ে হঠাৎ মৃত্যুর জন্য দায়ী অ্যারিথ্মিয়া ডেট্রিকুলার ফিব্রিলেশনকে নির্মূল করা হয়। তার জন্য আক্রান্ত ব্যক্তিকে নিকটস্থ সিসিইউতে স্থানান্তর করতে হয় জরুরী ভিত্তিতে। ওসমানের মতো কার্ডিয়াক অ্যারেষ্ট তথা হঠাৎ মৃত্যুর শতকরা ৬০ ভাগই ঘটে হাসপাতালের বাইরে। এই বাস্তবতায় বর্তমানে উন্নত বিশ্বে সিসিইউর বাইরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পাবলিক স্থানে যেমন খেলার মাঠ, বিনোদন কেন্দ্র, এয়ারপোর্ট, বাস ও রেলস্টেশন, কনভেনশন হলে স্বয়ংক্রিয় ডিফিব্রিলেটর দিয়ে ডিসি শক্ প্রয়োগের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। এই যন্ত্র আগে থেকেই তথায় স্থাপিত ও ব্যবহার উপযোগী থাকে। এটাই automatic external defibrillation বা AED (এইডি)।
এতে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সিপিআর দেওয়ার সম্ভাব্য স্বল্প সময়ের মধ্যে ডিসি শক্ দেওয়া সম্ভব হয়। অদূর ভবিষ্যতে এই ধরনের ব্যবস্থা আমাদের দেশেও গৃহীত হলে তা সিপিআর পরবর্তী সময়ে প্রয়োগের মাধ্যমে মৃত্যুপথ যাত্রীর জীবন ফিরিয়ে আনা সম্ভব হবে। তাই সবাই সিপিআর সম্পর্কে জানুন। ওসমানের মতো হঠাৎ হৃৎক্রিয়া বন্ধ হয়ে পড়াদের জন্য তা কাল বিলম্ব না করে শুরু করুন। তা এক মৃত্যুঞ্জয়ী ব্যবস্থা। এতে আপনি ফিরিয়ে আনতে পারেন এমন কারো জীবন যাকে আপনি অত্যন্ত ভালোবাসেন। এছাড়া স্বাস্থ্য ও জননিরাপত্তার সাথে সংশ্লিষ্ট বিভাগের উদ্যোগে বিভিন্ন জনবহুল স্থানে এইডি স্থাপন করা এখন সময়ের দাবী। তা অপ্রত্যাশিত হঠাৎ মৃত্যু ঠেকিয়ে জীবন ফিরাতে পারে।
লেখক : সভাপতি, হাইপারটেনশন এন্ড হার্ট ফেইলিউর ফাউন্ডেশন ও প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান, হৃদরোগ বিভাগ, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল।