একটি নাইট কোচের সন্ধানে পিবিআই

কদমতলীতে উদ্ধার লাশ ইয়াবা পাচারকারীর

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ২৯ অক্টোবর, ২০২০ at ৬:২০ পূর্বাহ্ণ

একটি নাইট কোচের সন্ধানে মরিয়া হয়ে উঠেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ডবলমুরিং থানাধীন কদমতলী ফ্লাইওভারের নিচে পাওয়া রাজমিস্ত্রি নূরুল আলমের মৃত্যুরহস্য উদঘাটন করতে দরকার বাসটি। মৃত্যুর ঘটনাটি তদন্ত করতে গিয়ে পিবিআই জানতে পারে, পেশায় রাজমিস্ত্রি হলেও তার আড়ালে নূরুল আলম টেকনাফ থেকে ইয়াবা নিয়ে আসতেন। সেদিনও পেটের ভেতরে করে ইয়াবা নিয়ে এসেছিলেন তিনি। এখন বাসটির সন্ধান পাওয়া গেলে তার মৃত্যুরহস্য উদঘাটনের পাশাপাশি ইয়াবার গন্তব্য সম্পর্কেও ধারণা পাওয়া যাবে বলে জানায় পিবিআই। এ ঘটনায় তিন আসামি ইতোমধ্যে ধরা পড়েছে। তারা মাঝপথে নূরুল আলম থেকে ছিনতাই করার কথা আদালতে স্বীকার করেছে। কিন্তু পরবর্তীতে কী হয়েছে তা আর জানাতে পারেনি তারা।
পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রোর জনসংযোগ কর্মকর্তা এবং এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর সন্তোষ কুমার চাকমা আজাদীকে বলেন, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকাল পৌনে নয়টার দিকে ডবলমুরিং থানাধীন দেওয়ানহাট মোড় সংলগ্ন কদমতলী ফ্লাইওভারের নিচে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তির (২২) লাশ পাওয়া যায়। মৃত ব্যক্তির জন্মসনদ ও সাদা কাগজে লেখা মোবাইল নম্বর পেয়ে যোগাযোগ করে জানা যায়, মৃত ব্যক্তির নাম নূরুল আলম, পেশায় রাজমিস্ত্রি। তিনি টেকনাফের শিয়াইল্যা ঘোনার (নূর মোহাম্মদের বাড়ি) কালা মিয়ার ছেলে। নূরুল আলমের মা বাদী হয়ে ডবলমুরিং থানায় একটি হত্যা মামলা (নং ৩৯) দায়ের করেন। পরবর্তীতে মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। ইন্সপেক্টর সন্তোষ চাকমা তদন্ত করতে গিয়ে গত ২৭ সেপ্টেম্বর রিয়াদ হোসেন প্রকাশ আব্দুর রহিম নামে একজনকে সীতাকুণ্ড থানাধীন শীতলপুর বাজার থেকে গ্রেপ্তার করেন। তার থেকে নূরুল আলমের মোবাইল ফোনটি উদ্ধার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পরদিন দ্বিতীয় আসামি ফারুককে এবং তৃতীয় দিন খোকনকে নিজ বাড়ি থেকে গ্রেপ্তার করেন। এদের মধ্যে আসামি খোকন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
পুলিশের কাছে দেওয়া তাদের তিনজনের তথ্য থেকে জানা যায়, নূরুল আলম ২৩ সেপ্টেম্বর টেকনাফ থেকে চেয়ার কোচ যোগে পেটের ভেতরে করে ইয়াবা নিয়ে আসছিলেন। সীতাকুণ্ড থানাধীন শীতলপুর এলাকায় পৌঁছলে তার তীব্র বমি ভাব আসে। এক পর্যায়ে তিনি বাস থেকে নেমে যান। রাস্তার পাশে গিয়ে উপর্যুপরি বমি করতে থাকেন। অদূরেই বসেছিলেন তিন আসামি। তাদের মধ্যে রিয়াদ প্রথমে ছুটে আসে নূরুল আলমের কাছে। সে নূরুল আলমের কিছু উপসর্গ দেখে বুঝতে পারে তার পেটে নিশ্চয়ই কিছু আছে। তারা তিনজন নূরুল আলমকে সুস্থ করার ছলে এক পাশে নিয়ে যায় এবং তাকে জোরপূর্বক বিভিন্ন খাবার খাওয়ানো হয়। পরবর্তীতে রিয়াদ নিজের পরিচয় দিয়ে জেরা করলে এক পর্যায়ে নূরুল আলম স্বীকার করেন, তার পেটে ইয়াবা আছে। এরপর তাকে ওষুধ খাইয়ে মলত্যাগ করানো হয়। সেখান থেকে তারা তিনশ পিস ইয়াবা উদ্ধার করে। তখনো পেটে আরো ইয়াবা ছিল যেগুলো পেটের ভেতরেই গলে যায়। কিছু সময় পর তিনি আবারো অসুস্থ হয়ে পড়েন। রাত তখন সাড়ে তিনটা। এসময় চট্টগ্রামগামী একটি চেয়ার কোচ এসে থামে বগুলা বাজারে। ৪০/৪৫ বছর বয়স্ক মাথায় টুপি দেয়া মুখভর্তি দাঁড়িওয়ালা এক ব্যক্তি সেখানে নেমে যান। ঐ নাইটকোচে তুলে দেওয়া হয় নূরুল আলমকে।
ইন্সপেক্টর সন্তোষ চাকমা বলেন, আমরা ধারণা করছি পেটে ইয়াবা গলে যাওয়ার কারণে বিষক্রিয়ায় নাইট কোচেই তার মৃত্যু হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে নাইট কোচের চালক হেলপার ও সুপারভাইজার মিলে তার লাশটি ফ্লাইওভারের নিচে রেখে চলে গেছে। তিনি বলেন, আমরা এখনো সেই নাইট কোচের সন্ধান পাইনি। কিংবা বগুলা বাজারে নেমে যাওয়া ভদ্রলোকটির সন্ধান পেলেও মামলাটির তদন্ত শেষ করতে পারব। এ সংক্রান্ত কোনো তথ্য কারো কাছে থাকলে তিনি পিবিআই, চট্টগ্রাম মেট্রো অফিসে জানানোর অনুরোধ করেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকরোনায় আরও ২৩ মৃত্যু, শনাক্ত ১৪৯৩
পরবর্তী নিবন্ধছোট ভাইকে মারধরের প্রতিশোধ নিতে খুন