একটাই মোমবাতি!

এমরান হোসাইন | শনিবার , ২২ অক্টোবর, ২০২২ at ৫:৫৮ পূর্বাহ্ণ

উফ কী যে গরম; সারাদিন হারভাঙা পরিশ্রম করে আসার পর বাসায় এসে দেখেন বাবা- পড়ার টেবিলে তাঁর ছেলে-মেয়ে সমানে কাঁদছে। বাবার মনটা তখন আর মানে না। কাচের স্ট্যান্ডের উপর মোমবাতি ঢিমেতালে জ্বলছে। এই বুঝি নিবে যাবে। ভেতরের রুম থেকে মা সুর করে বলছেন- এইটা শেষ মোমবাতি। দোকানে গিয়ে মোম নিয়ে এসো। বেলালের দোকান থেকে গিয়ে কাগজে মোড়ানো এক প্যাকেট মোমবাতি এনে বাবা একটা জ্বালিয়ে দিলেন। মোমের ফকফকা আলোতে ছেলেমেয়ের হাসিমাখা মুখ দেখে বাবার মনটা ভরে গেলো। বাবা বাথরুমে ফ্রেশ হতে ঢুকলেন, পড়ার টেবিল থেকে মেয়ের ডাক-বাবা মোমবাতি নিভে গেছে।

দৌড়ে এসে দেখলেন অন্ধকারে পড়ার টেবিলে আমরা ভাইবোন মিলে হাসাহাসি করছি। কি ব্যাপার মা মণি বলতে- বোনের অভিযোগ- বাবা মোমবাতিটা ভাল না। বাবার হাতে থাকা দিয়াশলাই জ্বালিয়ে দেখা গেলো মোমবাতির উপরের অংশ কিছুটা জ্বলেছে -নিচের অধিকাংশ জ্বলেনি। এ হলো মোমবাতির যুগ। তারওআগে কুপিবাতি, এরপর হারিকেন। মনে পড়ে-কুপিবাতি মাঝেমাঝে টেবিলে আসতো। তবে বাবার সাথে দেওয়ানহাটে গেলে দেখতাম কুপিবাতি। মাটিতে তরিতরকারির পসরা সাজিয়ে কুপিবাতি জ্বালিয়ে কেনাবেচা চলতো। এরপর হারিকেন কিছুটা সচ্ছল পরিবারে পড়ার টেবিলে শোভা পেত।

সময় এবং নদীর স্রোত কারও জন্য অপেক্ষা করেনা। ছোটবেলায় শুনতাম ওয়াবদার লাইন। তারমানে খাম্বা থেকে তার টেনে ভাল্ব জ্বালানো হতো। তখন দেশে দুবাই প্রবাসীরা অনেকে চার্জার পাঠাতে শুরু করলো। মনে পড়ছে- বাবার এক বন্ধুর ছেলে বাবার জন্য গোলাপী রংয়ের টাওয়ালে পেঁচিয়ে একটা চার্জার পাঠিয়েছিল।

একান্নবতী পরিবারে একটা চার্জার দিয়ে হয়না। অন্যরুমগুলোতে মোমবাতি ভরসা। এভাবে মোমবাতি পিছু ছাড়েনি আমার পরিবার পর্য়ন্ত। এরপর মোমবাতি দেখেছি মাজারে, কবরস্থানে, মসজিদ-মন্দির, গির্জায়। এ অভাবের সংসারে আর কতকাল মোমবাতি জ্বলবে। এব্যাপারে আমেরিকান রোমেন্টিক কবি জেমস রাসেল লয়েলের উক্তি মনে পড়ে- খ্যাতি হলো মোমবাতির আলোর মত, একটা দমকা হাওয়া এটিকে যখন-তখন নিভিয়ে দিতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধদক্ষিণ কাট্টলী কলেজ রোডের বেহাল অবস্থা
পরবর্তী নিবন্ধপ্রাণের ছোঁয়া