একজন প্রমা অবন্তী ও তাঁর স্বপ্নের ওড়িশী নৃত্য

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ৩০ ডিসেম্বর, ২০২১ at ৫:৪৯ পূর্বাহ্ণ

২০ বছরে পদার্পণ করল খ্যাতিমান নৃত্যশিল্পী প্রমা অবন্তীর স্বপ্নের প্রতিষ্ঠান ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার চট্টগ্রাম। দীর্ঘ সময় ধরে এই প্রতিষ্ঠান দেশে বিদেশে তিনশর বেশি একক ও দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছে। ভারতে রাউলকেল্লা, উড়িষ্যায় ২০১৪ সালে ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড ড্যান্স ফেস্টিভ্যালে বিদেশি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ দল ও ‘ফিরে চল মাটির টানে’ নৃত্যনাট্যের জন্য দ্বিতীয় পুরস্কার অর্জন করে ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার। বাংলাদেশে শুদ্ধ ওড়িশী নৃত্যের প্রচার ও প্রসারের লক্ষ্যে ২০১৬ সালে ঢাকায় ইন্দিরা গান্ধী সাংস্কৃতিক কেন্দ্র ও ভারতীয় সাংস্কৃতিক সম্বন্ধ পরিষদের আয়োজনে ওড়িশী নৃত্য, ছায়ানট আয়োজিত অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ এবং রাজশাহী জেলা প্রশাসনের আয়োজনে ওড়িশী নৃত্য পরিবেশন ছাড়াও পশ্চিমবঙ্গের বিশ্ব ওড়িশী নৃত্য মেলায় অংশগ্রহণ সংগঠনটির অন্যতম অর্জন।
ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টারের উদ্যোক্তা প্রমা অবন্তী প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় দীক্ষিত প্রথম বাংলাদেশি ওড়িশী নৃত্যশিল্পী। চট্টগ্রাম আলাউদ্দিন ললিতকলা একাডেমীতে নাচ শিখতে শিখতেই তিনি ১৯৯০ সালে পশ্চিমবঙ্গের রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চ মাধ্যমিক (প্রি-ডিগ্রি) নৃত্যকলায় ভর্তি হন। গুরু কেলুচরণ মহাপাত্রের ওড়িশী নৃত্য দেখে ১৯৯৪ সালে রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্সে ভর্তি হন ওড়িশী নৃৃত্য বিভাগে। শিক্ষা গুরু হিসেবে পান মুরলীধর মাঝি ও পৌষালী মুখার্জিকে। ওড়িশী বিভাগ থেকে বিএ (অনার্স) এবং এমএ (মাস্টার্স) প্রথম শ্রেণী অর্জন করেন প্রমা। ১৯৯৩ সালে তিনি আইসিসিআর বৃত্তি লাভ করেন।
প্রমা অবন্তী রবীন্দ্র ভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে ওড়িশী নৃত্যের জন্য ‘উদয় শংকর’ এবং ‘চন্ডিগড়’ বৃত্তি লাভ করেন। পরবর্তীতে ‘ওড়িশী’ নৃত্যের ওপর বিশেষ তালিম নেন ওড়িশী নৃত্যের প্রবাদ পুরুষ পদ্মবিভূষণ পদক প্রাপ্ত শিল্পী গুরু কেলুচরণ মহাপাত্র ও পদ্মশ্রী পদকপ্রাপ্ত শিল্পী পানিগ্রাহীর কাছে। ২০ বছর ধরে নৃত্যচর্চা করে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের বিখ্যাত ওড়িশী শিল্পী ও গুরু পৌষালী মূখার্জির তত্ত্বাবধানে।
ওড়িশী নৃত্যের প্রসারে বিশেষ অবদানের জন্য প্রমা অবন্তীকে ইতোমধ্যে অনুশীলন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র, চট্টগ্রাম (২০০১), আকৃতি কলাকেন্দ্র, ঢাকা (২০০২), খেলাঘর আসর রাঙামাটি জেলা কমিটি (২০১০), রূপক তবলা একাডেমী ইন্সটিটিউট (২০১২), সদারঙ্গ উচ্চাঙ্গ সংগীত পরিষদের (২০১৬) পক্ষ থেকে সম্মাননা দেওয়া হয়। বাংলাদেশ টেলিভিশন, চট্টগ্রাম কেন্দ্র ২১ বছরে পর্দাপণ উপলক্ষে ওড়িশী নৃত্যের প্রচার ও প্রসারের জন্য ২০১০ সালে তাঁকে সম্মানিত করেন। পশ্চিমবঙ্গের ‘পৌষালী মুর্খাজী ডান্স একাডেমী’ বাংলাদেশে ওড়িশী নৃত্য প্রচার ও প্রসারের জন্য আজীবন সম্মানে ভূষিত করে প্রমা অবন্তীকে।
প্রমা অবন্তীর নিবিড় তত্ত্বাবধানে ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার ২০১৪ সালে ভারতের রাউলকেল্লা, উড়িষ্যায় অনুষ্ঠিত ইন্টারন্যাশনাল ডান্স ফেস্টিভ্যালে বিদেশি ক্যাটাগরিতে শ্রেষ্ঠ দল ও নৃত্যনাট্য পরিচালনার জন্য পুরস্কৃত ও সম্মানিত হয়। তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন ঢাকা ও চট্টগ্রাম কেন্দ্রের তালিকাভুক্ত নৃত্যশিল্পী ও নৃত্য পরিচালক। ওড়িশী অ্যান্ড টেগোর ডান্স মুভমেন্ট সেন্টার পরিচালনার পাশাপাশি তিনি ২০১০ সাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের নাট্যকলা বিভাগের অতিথি শিক্ষক এবং চট্টগ্রাম জেলা শিল্পকলা একাডেমির নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন। এ পর্যন্ত তিনি ২৫টির অধিক নৃত্যনাট্য পরিচালনা করেন এবং চট্টগ্রামে ১৫টির অধিক নাটকের কোরিওগ্রাফি করেন।
এই প্রতিষ্ঠানে বর্তমানে তিনশ শিক্ষার্থী নৃত্যের প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন। আগমনী, হাসি-খুশি, প্রজাপতি, সূর্যমূখী ও শাপলা এ পাঁচটি বিভাগে নৃত্য শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এই প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে ভারতের বিভিন্ন প্রদেশ ছাড়াও আমেরিকা, জাপান, জার্মানি, থাইল্যান্ড ও পাকিস্তানে একক ও দলীয় ওড়িশী নৃত্য পরিবেশন করে সুনাম অর্জন করেছে।
প্রতিষ্ঠানটি এ পর্যন্ত মঞ্চে এনেছে রবীন্দ্রনাথের নৃত্যনাট্য ‘চন্ডালিকা’, ‘চিত্রাঙ্গদা’, ‘সোনার তরী’, ‘শ্যামা’, ‘শাপমোচন’ ও ‘ঋতুরঙ্গশালা’। তাছাড়া ‘ফিরে চল মাঠির টানে’, ‘বাঁশরী ও তূর্য হাতে কবি’, প্রধানমন্ত্রীর ৭৩তম জন্মদিন উপলক্ষে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির প্রযোজনায় নৃত্যনাট্য ‘একলা চল, একলা চল রে’ মঞ্চস্থ করেছে।
প্রমা অবন্তী বলেন, আমি এবং আমার প্রতিষ্ঠান বিশ্বাস করে, নেচে গেয়ে আনন্দ চিত্তে জেগে উঠুক তাদের অন্তর্জগৎ। কল্পনার জগতে সৃষ্টি হোক অবাধ ভাবনার স্বাধীনতা। শৃঙ্খল নয়, সুশৃঙ্খল হোক তাদের শিল্পী জীবনের পথ চলা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধউন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখতে হবে : এমপি মোস্তাফিজ
পরবর্তী নিবন্ধ‘মুক্তিযুদ্ধের চেতনা হারিয়ে গেলে বিপন্ন হবে আমাদের অস্তিত্ব’