একই দিনে সংসদ নির্বাচন ও গণভোট নিয়ে জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের প্রস্তাবে বিএনপি সম্মতি দিয়েছে বলে জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেছেন, সংস্কার কমিশনে আমরা বলেছি, একই দিনে নির্বাচন হবে, সেদিনই গণভোটের প্রস্তাবে রাজি হয়েছি। যে বিষয়গুলোতে আমরা একমত হয়েছি, সে বিষয়গুলো নিয়ে আমরা গণভোটে জনগণের কাছে যেতে পারি।
গতকাল মঙ্গলবার ঠাকুরগাঁও জেলা শিল্পকলা অ্যাকাডেমিতে সদর উপজেলা ও রুহিয়া থানা বিএনপির বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন। মির্জা ফখরুল বলেন, আগামী শুক্রবার সংস্কার কমিশনের মাধ্যমে একটা সনদ প্রকাশিত হবে। সেই সনদে সমস্ত রাজনৈতিক দল স্বাক্ষর করব। আর যেগুলোতে আমরা একমত হতে পারিনি, সেগুলো নির্বাচনের পরে পার্লামেন্টে নির্ধারিত হবে। রাজনৈতিক দলগুলো এসব বিষয় নিয়ে জনগণের সামনে উপস্থিত হবে। জনগণের মতামতের ভিত্তিতে সে সমস্ত বিষয় নিষ্পত্তি হবে। খবর বিডিনিউজের।
২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে জানিয়ে ফখরুল বলেন, এই সময়টাতে অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পা ফেলতে হবে। আমাদের ভুলের কারণে বা রাজনৈতিক কোনো ভুল পদক্ষেপের কারণে আমরা যেন আবার ফ্যাসিস্টদের নির্যাতনের কবলে না পড়ি। ফ্যাসিস্টদেরকে আমরা আর ফেরত দেখতে চাই না।
বিগত সরকারের আমলে বিএনপি সামগ্রিকভাবে সবচেয়ে বেশি নির্যাতনের শিকার হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে ছয় বছর কারাগারে আটক করা হয়েছিল। আমাদের প্রায় ৬০ লাখ কর্মী–সমর্থকের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। ২০ হাজার নেতাকর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। ইলিয়াসসহ এক হাজার ৭০০ নেতাকর্মীকে গুম করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত তাদের কোনো চিহ্ন আমরা খুঁজে পাইনি। আমাদের নেতা তারেক রহমানকেও মিথ্যা মামলায় জড়িয়ে দেশ থেকে নির্বাসিত করা হয়েছে। তিনি এখনও ফিরে আসতে পারেননি।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। আমরা আবার গণতান্ত্রিক একটা ব্যবস্থায় ফিরে যেতে চাই। মানুষ নির্বাচন চায়। তারা ১৫ থেকে ১৬ বছর যে ভোট দিতে পারেননি। আবার তারা ভোট দিয়ে তাদের প্রতিনিধি নির্বাচিত করতে চান। তারা নিজস্ব সরকার তৈরি করতে চান। সেই পার্লামেন্ট ও সরকারের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে আবার সচল করে একটা সমৃদ্ধশালী বাংলাদেশ নির্মাণ করতে চায়।
সংবাদকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আপনারা রাষ্ট্রের একটা অন্যতম স্তম্ভ, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের একটা খুঁটি হচ্ছে গণমাধ্যম। আপনাদের বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ পরিবেশনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্র টিকে থাকে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের নিয়ম এবং সেখানেই গণতন্ত্রের সাফল্য। সংবাদমাধ্যমের কাছে আমরা প্রত্যাশা করি, শুধুমাত্র চটকদার বা বেশি বিক্রি হবে এ ধরনের সংবাদ ছাপিয়ে আমরা যেন মূল জায়গা থেকে সরে না যাই।
তিনি বলেন, আরেকটি বড় মাধ্যম হচ্ছে সোশ্যাল মিডিয়া, যেখানে অনেক ধরনের অপপ্রচার হয়। এখানে জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য অনেক কিছু প্রচার করা হয়, যা সত্য নয়। সেগুলোকে বাছাই করে রাজনৈতিক কর্মীকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে জানিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়া এবং গণতন্ত্রের সমস্ত প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে আমরা কাজ শুরু করেছি। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছেন; সেইভাবে আমরা কাজ করছি। গণতন্ত্র ফিরে আসার জন্য আমাদের সঙ্গে যারা লড়াই–সংগ্রাম করেছেন, সে সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আমরা সুসম্পর্ক রাখছি। আশা করছি সবাই মিলে গণতন্ত্রকে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারব।