ঊর্ধ্বতনের সিদ্ধান্ত ছাড়াই ভবন মালিকদের নোটিশ

চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পরিশোধে নোটিশ দিচ্ছেন আদায়কারীরা

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ৪ এপ্রিল, ২০২২ at ৫:৫৯ পূর্বাহ্ণ

স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেও পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পৌরকর (হোল্ডিং ট্যাক্স, সড়ক বাতি ও আলোকায়ন রেইট) আদায়ের সিদ্ধান্ত এখনো নেয়নি চট্টগ্রাম সিটি কর্র্পোরেশন (চসিক)। এ বিষয়ে মেয়র এবং প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তার দপ্তর থেকেও কোনো অফিস আদেশ বা নির্দেশনা দেয়া হয়নি সংশ্লিষ্ট কর কর্মকর্তাদের। অথচ মাঠ পর্যায়ে ভবন মালিকদের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পৌরকর পরিশোধে নোটিশ দিচ্ছেন চসিকের কর আদায়কারীরা। এমনকি স্থগিত থাকাকালীন পৌরকর বকেয়া হিসেবে পরিশোধের জন্য চাপ দিচ্ছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ অবস্থায় প্রশ্ন উঠেছে, কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত ছাড়া পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের আলোকে পৌরকর আদায় করে ভবন মালিকের টাকা আত্মসাৎ করবেন না তো মাঠ পর্যায়ের কর্মীরা? ঊর্ধ্বতনের সিদ্ধান্ত ছাড়া ভবন মালিকদের নোটিশ দেয়া হচ্ছে কীভাবে?
চসিক সূত্রে জানা গেছে, করদাতাদের আপত্তির মুখে ২০১৭ সালের ডিসেম্বর মাসে পৌরকর নির্ধারণে চসিকের পঞ্চবার্ষিকী কর পুনর্মূল্যায়নের ওপর স্থগিতাদেশ দেয় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। বর্তমান মেয়র রেজাউল করিম চৌধুরীর আবেদনের প্রেক্ষিতে গত ১৮ জানুয়ারি সে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। এর ফলে চার বছর আগে রিঅ্যাসেসমেন্টের (ভবনের পুনর্মূল্যায়ন) মাধ্যমে যে হোল্ডিং ট্যাক্স প্রস্তাব করেছিল তা আদায় করার পথ সুগম হয় চসিকের। ওই অ্যাসেসমেন্টে পূর্বের চেয়ে শতভাগের বেশি পৌরকর ধার্য করা হয়েছিল।
স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হলেও কখন থেকে কার্যকর হবে সেটা চূড়ান্ত হয়নি। এক্ষেত্রে বকেয়া আদায় করা হবে নাকি বর্তমান বা সামনের কোয়ার্টার থেকে আদায় করা হবে সেটা নিয়েও সিদ্ধান্তহীনতায় রয়েছে চসিক। তবে বকেয়া আদায় হলে জনঅসন্তুষ্টির বিষয়টি মাথায় রেখে আগামী অর্থবছর থেকে চার বছর আগের পুনর্মূল্যায়নের ভিত্তিতে আদায়ের পরিকল্পনা রয়েছে বলে চসিকের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জানান। অর্থাৎ রিঅ্যাসেসমেন্টের ভিত্তিতে আদায় হলেও কারো কাছ থেকে গত চার বছরের বকেয়া আদায় করা হবে না। তবে ভবন মালিকরা অভিযোগ করেছেন, তাদের স্থগিতাদেশের আলোকে পৌরকর পরিশোধে নোটিশ দেয়া হচ্ছে। জানা গেছে, পশ্চিম বাকলিয়ার হোল্ডিং (৩৬৪/ই/৪৯০) মালিক আবদুল মাবুদকে কয়েকদিন আগে রাজস্ব সার্কেল-৩ থেকে একটি নোটিশ দেয়া হয়। নোটিশে কর ধার্যের বছর হিসেবে উল্লেখ করা হয়, ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরের ১ম কোয়ার্টার। এতে পৌরকর ধার্য করা হয় ১১ হাজার ২০০ টাকা। নোটিশ দাতা তাকে গত চার বছরের বকেয়া পরিশোধ করতে হবে বলেও জানান। অথচ তিনি পূর্বে পৌরকর পরিশোধ করতেন তিন হাজার ১৫০ টাকা। ২০২১ সালেও তিনি এ পৌরকর পরিশোধ করেছেন।
আবদুল মাবুদ আজাদীকে বলেন, ২০১৭ সালে রিঅ্যাসেসমেন্টের ওপর আমি আপিল করেছিলাম। রিভিউ বোর্ডে ১১ হাজার ২০০ টাকা চূড়ান্ত করা হয়। আপিল নিষ্পত্তির কয়েকদিনের মধ্যেই অ্যাসেসমেন্টটা স্থগিত হয়ে যায়। তার মানে ওই অ্যাসেসমেন্ট পরবর্তীতে কার্যকর ছিল না। তাই আমি পূর্বের ধার্যকৃত তিন হাজার ১৫০ টাকা পরিশোধ করে আসছি। সিটি কর্পোরেশন থেকেও এখন পর্যন্ত স্থগিতাদেশ থাকা অ্যাসেসমেন্টের আলোকে পৌরকর আদায়ের বিষয়ে কোনো ঘোষণা দেয়া হয়নি। কোনো প্রচার-প্রচারণা করা হয়নি। কিন্তু আমাকে নোটিশ দিয়েছে ২০১৮ সাল থেকে পরিশোধ করার জন্য। ওই সময় থেকে নাকি বকেয়াও দিতে হবে। কিন্তু এমন কেন? যেটা স্থগিত ছিল সেটার পৌরকর কেন পরিশোধ করব? এতে তো আমাদের ওপর করের বোঝা বাড়বে।
খবর নিয়ে জানা গেছে, চসিকের অন্যান্য সার্কেলেও রিঅ্যাসেসমেন্টের আলোকে পৌরকর আদায় করা হচ্ছে। এর মধ্য দিয়ে কর কর্মকর্তারা কর আদায়কারীর সঙ্গে যোগসাজশে হাতিয়ে নিচ্ছে বিপুল অর্থ। আর ‘বাড়তি’ কর পরিশোধ করতে হচ্ছে ভবন মালিককে। অবশ্য অনেক ভবন মালিক না জেনেও পৌরকর পরিশোধ করছেন।
এ বিষয়ে চসিকের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম আজাদীকে বলেন, স্থগিতাদেশ থাকা রিঅ্যাসেসমেন্টের আলোকে কখন থেকে আদায় করা হবে তার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে আমরা অফিসিয়াল কোনো নির্দেশনাও দিইনি। নোটিশ দেয়া প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখানে দেখতে হবে হোল্ডিংটা নতুন নাকি পুরাতন। যদি কেউ পুরাতন ভবনের জন্য নোটিশ দেয় সেটা অনিয়ম বলতে হবে।
চসিক সূত্রে জানা গেছে, স্থগিতাদেশ প্রত্যাহারের পর রিঅ্যাসেসমেন্টের আলোকে পৌরকর কখন থেকে আদায় করা হবে তা চূড়ান্ত না হলেও আপিল কার্যক্রম শুরু হয়েছে। ইতোমধ্যে গঠিত রিভিউ বোর্ডে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে আপিল। এ আপিল বোর্ড গঠিত হয়েছে স্থগিতাদেশ প্রত্যাহার হওয়ার বেশ কিছুদিন পর। তবে তার আগে থেকেই রাজস্ব সার্কেল-৩ থেকে হোল্ডিং মালিকদের আপিল করার জন্য নোটিশ দেয়া হয়। অর্থাৎ স্থগিতাদেশ থাকা অবস্থায় রিঅ্যাসেসমেন্টের আলোকে কর আদায় প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন বিষয়টি জানাজানি হলেও কারো বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়নি চসিক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধচেনা আবহে ইফতারি বাজার
পরবর্তী নিবন্ধগ্রিসে পোশাক রপ্তানির আড়ালে ৮ লাখ টাকা পাচারের চেষ্টা