উৎপাদন করেও সুখ নেই সীতাকুণ্ডের ২৪ হাজার কৃষকের

একটি হিমাগারের স্বপ্ন

সীতাকুণ্ড প্রতিনিধি | বুধবার , ২৪ মার্চ, ২০২১ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

শীতকালীন সবজি সংরক্ষণের সুযোগ না থাকায় সীতাকুণ্ড উপজেলার ২৪ হাজার কৃষক হতাশ। সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে এ উপজেলায় কোনো হিমাগার না থাকায় কৃষকেরা উৎপাদিত পণ্য সংরক্ষণ করতে পারছেন না। এতে তারা ভর মৌসুমে কম মূল্যে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন। তাদের স্বপ্ন, শীঘ্রই এই এলাকায় একটি হিমাগার নির্মাণ হবে। এর জন্য তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্র জানায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা এলাকায় ২৪ হাজার কৃষক ২ হাজার ৭শ হেক্টর জমিতে সবজি চাষ করে থাকেন। উৎপাদন হয় বেগুন, মুলা, টমেটো, বরবটি, শসা, লাউ, কুমড়া, ফুলকপি, বাঁধাকপি, ক্ষিরাসহ বিভিন্ন জাতের প্রায় ৪০ হাজার মেট্রিক টন সবজি। এছাড়া প্রায় দুই হাজার আটশ হেক্টর জমিতে শিমের চাষ করা হয়। উপজেলার সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা ও মুরাদপুর ইউনিয়ন এবং সীতাকুণ্ড পৌরসভার কৃষকেরা বিভিন্ন জাতের শীতকালীন ফসল উৎপাদন করে থাকেন। চলতি মৌসুমে প্রতিটি এলাকায় ফসলের ভালো ফলন হয়েছে। এছাড়া সীতাকুণ্ডের শতাধিক একর পাহাড়ি এলাকায়ও সবজির ভালো ফলন হয়েছে। উপজেলার ৬টি ইউনিয়নের প্রায় ১৫ কিলোমিটার পাহাড়ি এলাকার ঢালু জমিতে স্থানীয় কৃষকরা সবজি চাষ করেছেন। সৈয়দপুরের শেখের হাট, জাফরনগর, মীরের হাট গ্রামের কৃষক আবুল হোসেন, মনির উল্ল্যা, ফজল হকসহ আরো কয়েকজন কৃষক জানান, কীটনাশক ও সারের মূল্য বৃদ্ধির পরও আশা নিয়ে জমিতে টমেটো, ফুলকপি, মরিচ ও বেগুন চাষ করেছিলাম। বাজারমূল্য না পাওয়ায় আমরা হতাশ হয়ে পড়েছি।
প্রথমবারের মতো শালগম চাষ করা বহরপুরের কৃষক পরিতোষ জানান, অল্প পুঁজি বিনিয়োগ করে শালগম ফলানো যায় বিধায় প্রায় দেড় একর জমিতে চাষ করেছিলাম। ফলনও ভালো হয়েছে। কিন্তু বাজারে এনে উৎপাদন খরচও উঠাতে কষ্ট হচ্ছে। আর টমেটো না তোলার কারণে জমিতেই পচে যাচ্ছে।
কৃষকদের অভিযোগ, ফলন ভালো হওয়ায় বাজারে এখন সব ধরনের সবজিতে ভরপুর। যার কারণে ক্রেতাদের কাছে কমমূল্যে টমেটো বিক্রি করতে হচ্ছে। অন্যদিকে ফসল ভালো উৎপাদন হলেও সংরক্ষণের অভাবে অধিকাংশ সবজি মাঠেই নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। উপজেলায় সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে কোনো হিমাগার না থাকায় কৃষকরা ভর মৌসুমে কম মূল্যে সবজি বিক্রি করতে বাধ্য হয়।
সীতাকুণ্ড ব্যবসায়ী দোকান মালিক কমিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ বেলাল হোসেন বলেন, সবজি চাষের উপর নির্ভরশীল এই এলাকার ৯০ শতাংশ চাষি। এসব কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ করলে এলাকার কৃষকরা লাভবান ও উৎসাহী হয়ে উঠবেন।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন রায় ও কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ বলেন, সমতল ভূমির পাশাপাশি বিস্তীর্ণ পাহাড়ি অঞ্চল সবজি চাষের উর্বর জায়গা। এখানকার মাটি সবজি চাষের জন্য প্রকৃতির তৈরি ক্ষেত্র। ফলে একটু যত্ন নিলেই এখানে সবজির ভাল ফলন পাওয়া যায়। এসব কৃষিপণ্য সংরক্ষণের জন্য হিমাগার নির্মাণ হলে কৃষকরা সরাসরি বিক্রির পাশাপাশি সারাবছর আয় করার সুযোগ পেতেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য দিদারুল আলম জানান, সীতাকুণ্ডের কৃষকরা আমাদের প্রাণ। সবজি সংরক্ষণের জন্য হিমাগার খুবই প্রয়োজন। সরকারি প্রচেষ্টার পাশাপাশি বেসরকারি উদ্যোগে কেউ হিমাগার নির্মাণ করতে এগিয়ে এলে তাকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনেপালের রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সোলায়মান শেঠের সাক্ষাৎ
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের উদযাপন জনগণকে বাদ দিয়ে : ফখরুল