উৎপাদনশীল খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ বাড়াতে হবে

| শুক্রবার , ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৮:২৫ পূর্বাহ্ণ

করোনা মহামারির কারণে গত দুই বছরে বহু মানুষ বেকার হয়েছে। কেউ পেশা পরিবর্তন করেছে, কেউ আর কাজে ফিরতে পারেনি। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর কোনো জরিপ পরিচালিত না হওয়ার কারণে দেশে কতজন মানুষ কর্মহীন বা বেকার-সেই সংখ্যা জানা নেই। তবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা, শহর ও গ্রামে দারিদ্র্য বেড়েছে। এর আগে সর্বশেষ ২০১৬ সালে শ্রমশক্তি জরিপ করে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো (বিবিএস)। সেটির ফল প্রকাশ করা হয় এক বছর পর ২০১৭ সালে, কিন্তু পাঁচ বছর ধরে দেশে আর এই জরিপ হয়নি। অথচ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী দেশে দুই বছর পর পর বিবিএসের এই জরিপ করার কথা।
অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, একটি দেশের অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে সে দেশের পরিসংখ্যান। বিশেষ করে দেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যা, বেকারত্বের হার, দারিদ্র্যের প্রবৃদ্ধি অন্যতম। তাঁরা মনে করেন, দেশের দারিদ্র্য ও বেকারত্বের হার জানা খুবই জরুরি। কারণ সরকারের হাতে সঠিক তথ্য থাকলে সরকার সঠিকভাবে বাজেট করতে পারবে। যদি সময়মতো শ্রমশক্তি জরিপ করা যায়, সেটা এ ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এই মহামারিকালে দেশে একাধিক সংস্থা দারিদ্র্য নিয়ে জরিপ করেছিল। বেকারত্ব ও দারিদ্র্য নিয়ে গবেষণা করেছে বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম)। তারা বলছে, করোনার প্রভাবে দেশে সার্বিক দারিদ্র্যের হার (আপার পোভার্টি রেট) বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২ শতাংশ। তারা দেশব্যাপী খানা পর্যায়ের জরিপের ভিত্তিতে এই তথ্য জানিয়েছে। বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ (সিপিডি) জানিয়েছে, করোনার কারণে আয় কমে যাওয়ায় দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়েছে। ফলে সার্বিকভাবে দারিদ্র্যের হার ৩৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
বাংলাদেশে সর্বশেষ শ্রমশক্তি জরিপ হয়েছে ২০১৭ সালে। সেই জরিপ অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী ৬ কোটি ৩৫ লাখ। আর তাঁদের মধ্যে কাজ করেন ৬ কোটি ৮ লাখ নারী-পুরুষ। দুই সংখ্যার মধ্যে বিয়োগ দিলেই পাওয়া যায় বেকারের সংখ্যা। আর সেটি হলো ২৭ লাখ। আর শতাংশ হিসাবে বাংলাদেশে বেকারত্বের হার ৪ দশমিক ২ শতাংশ।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, কখনো অর্থনীতির ওঠানামার কারণে বেকারত্ব সৃষ্টি হতে পারে। যেমন মন্দার সময় বেকারত্ব বাড়ে, তেজিভাব ফিরে এলে পরিস্থিতি পাল্টে যায়। সমস্যা দেখা যায় মন্দা দীর্ঘস্থায়ী হলে। একে বলা হয় বাণিজ্য চক্রজনিত বেকারত্ব। আবার চাহিদা ও সরবরাহের পরিবর্তনের ফলে শ্রমশক্তির চাহিদায়ও পরিবর্তন ঘটে। এর ফলে কিছু শ্রমিক বেকার হয়ে যেতে পারে। প্রযুক্তিগত পরিবর্তনের ফলেও বেকারত্বের সৃষ্টি হতে পারে। এ ধরনের বেকারত্বকে কাঠামোগত বেকারত্ব বলা হয়। সপ্তাহে এক ঘণ্টা কাজ করলে বেকার না বলার সংজ্ঞাটা উন্নত দেশের জন্য যতটা প্রযোজ্য, অন্যদের ক্ষেত্রে তা নয়। কারণ, উন্নত দেশে বেকার ভাতা পাওয়া যায়। বাংলাদেশের মতো দেশে জীবনধারনের জন্য কোনো না কোনো কাজে নিয়োজিত থাকতে হয়। যদিও সেসব শোভন কাজ নয়, মজুরিও কম।
বিশ্লেষকরা বলেন, তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে তরুণরা যত বেশি পড়ালেখা করছে, তাদের তত বেশি বেকার থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার (আইএলও) আঞ্চলিক কর্মসংস্থান নিয়ে এক প্রতিবেদনেও এই চিত্র উঠে এসেছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের উচ্চশিক্ষিতদের মধ্যে বেকারত্বের হার সবচেয়ে বেশি পাকিস্তানে ১৬ দশমিক ৮ শতাংশ। বাংলাদেশে এ হার ১০ দশমিক ৭ শতাংশ, যা এ অঞ্চলের ২৮টি দেশের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। দেশে তরুণদের বিশেষত শিক্ষিত তরুণদের এক বৃহদাংশ বেকার জীবনযাপন করছে এবং সেটা বেড়েই চলছে।
২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (ইআইইউ) এক পরিসংখ্যানে দেখিয়েছে, বাংলাদেশে শতকরা ৪৭ ভাগ গ্র্যাজুয়েট হয় বেকার, না হয় তিনি যে কর্মে নিযুক্ত এ জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট হওয়ার কোনো প্রয়োজন ছিল না। প্রতি বছর বাংলাদেশে ২২ লাখ কর্মক্ষম মানুষ চাকরি বা কাজের বাজারে প্রবেশ করছেন। এই বিশাল সংখ্যক কর্মক্ষম মানুষের মাত্র সাত শতাংশ কাজ পাবেন। এর অর্থ হচ্ছে, দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ বেকারের তালিকায় নাম লেখাচ্ছেন।
এখন দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারের পথে। এর মধ্যেই নতুন করে দারিদ্র্যসীমার নিচে নেমে গেছে বড় একটি জনগোষ্ঠী। এই মানুষগুলোকে টেনে তুলতে হলে কাজে ফেরাতে হবে। সুতরাং পুনরুদ্ধারের পরিকল্পনাকে অবশ্যই কর্মসংস্থানের সঙ্গে যুক্ত করতে হবে। আর এ জন্য প্রয়োজন উৎপাদনশীল খাতে বেসরকারি বিনিয়োগ।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধকুয়েতের জাতীয় দিবস