চট্টগ্রামে গত ২৭ মার্চ মোট করোনা সংক্রমিতের ১০ দশমিক ৯০ শতাংশ ছিল উপজেলা পর্যায়ের বাসিন্দা। বাকি ৮৯ দশমিক ০৯ শতাংশ ছিল নগরের। এর সাতদিনের মাথায় গত শনিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা গেছে, মোট আক্রান্তের ১৭ দশমিক ৫৫ শতাংশ উপজেলার এবং ৮২ দশমিক ৪৪ শতাংশ নগরের বাসিন্দা। অর্থাৎ দ্রুত উপজেলা পর্যায়েও আক্রান্তের হার বাড়ছে। প্রসঙ্গত, গত রোববার পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনা শনাক্তদের ২০ দশমিক ২৩ শতাংশ উপজেলা পর্যায়ের। আবার উপজেলার মধ্যে সর্বোচ্চ ২২ দশমিক ৫৪ শতাংশ হাটহাজারীর।
উপজেলা পর্যায়ে, কারণ হিসেবে জানা গেছে, তুলনামূলকভাবে উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা বেশি। হাট-বাজারসহ জনসমাগম হয় এমন স্থানে মাস্ক না পরেই ঘুরতে দেখা যায় বেশিরভাগ লোকজনকে। স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতে শহরে জেলা প্রশাসন, সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন দপ্তরের মনিটরিং থাকলেও উপজেলা পর্যায়ে তা চোখেই পড়ে না। মাঝেমধ্যে সদরে উপজেলা প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করলেও ইউনিয়ন বা গ্রাম পর্যায়ে করা হয় না।
২০ শতাংশ উপজেলার বাসিন্দা : সিভিল সার্জন কার্যালয়ের গতকাল প্রকাশিত ফলাফলে দেখা দেখা গেছে, চট্টগ্রামে শুরু থেকে মোট করোনা সংক্রমিত হয়েছেন সাড়ে ৪১ হাজার জন। এর মধ্যে ১৪ উপজেলার বাসিন্দা আছেন ৮ হাজার ৩৯৮ জন। যা মোট আক্রান্তের ২০ শতাংশ। এখানে উল্লেখ্য, আক্রান্তদের মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৩৩ হাজার ১০২ জন। উত্তর চট্টগ্রাম এগিয়ে : নমুনা পরীক্ষার ফলাফল বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, দক্ষিণের চেয়ে উত্তর চট্টগ্রামের মানুষ বেশি সংক্রমিত হচ্ছেন। গতকাল পর্যন্ত উপজেলা পর্যায়ে মোট শনাক্তের ৫ হাজার ৪১০ জন উত্তর চট্টগ্রামের সাত উপজেলার বাসিন্দা। যা উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তের ৬৪ দশমিক ৪২ শতাংশ। সর্বোচ্চ শনাক্ত তিন উপজেলা তথা হাটহাজারী, রাউজান ও ফটিকছড়িও উত্তর জেলার আওতাভুক্ত।
এছাড়া উপজেলা পর্যায়ে মোট শনাক্তের ২ হাজার ৯৮৮ জন দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাত উপজেলার বাসিন্দা। যা উপজেলা পর্যায়ে শনাক্তের ৩৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ।
হাটহাজারীতে বেশি : উপজেলা পর্যায়ে সংক্রমিতদের মধ্যে এগিয়ে আছে হাটহাজারী। গত শনিবার পর্যন্ত উপজেলাটির এক হাজার ৮৯৩ জন শনাক্ত হয়েছেন। এছাড়া রাউজানে এক হাজার ৬৫ জন ও ফটিকছড়িতে ৭৫৯ জন শনাক্ত হয়েছেন। উপজেলায় আক্রান্তদের মধ্যে রাউজানের হার ১২ দশমিক ৬৮ এবং ফটিকছড়ির হার ৯ দশমিক ০৩ শতাংশ।
এছাড়া সীতাকুণ্ডে ৭৪৫ জন, বোয়ালখালীতে ৪৯৩ জন, পটিয়ায় ৭১৯ জন, আনোয়ারায় ৩৫৬ জন, মীরসরাইয়ে ৩৭১ জন, লোহাগাড়ায় ২৬৫ জন, সন্দ্বীপে ১৩৩ জন, রাঙ্গুনিয়ায় ৪৪৪ জন, বাঁশখালীতে ৪৩৬ জন শনাক্ত হয়েছেন।
এদিকে সংক্রমিতের হার কমিয়ে আনতে কঠোর হবেন বলে গতকাল সার্কিট হাউজ অনুষ্ঠিত সচেতনতামূলক সভায় ঘোষণা দিয়েছেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মো. মমিনুর রহমান। তিনি বলেন, শুধু শহর নয়, পুরো চট্টগ্রামজুড়েই কঠোরভাবে লকডাউন কার্যকর করা হবে। আশা করছি, জনগণ নিজেদের স্বার্থে লকডাউনকে সমর্থন করবে এবং অপ্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হবেন না।
হাটহাজারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার রুহুল আমীন দৈনিক আজাদীকে বলেন, আমরা নমুনা বেশি পাঠিয়েছি। সে কারণে শনাক্তও বেশি হয়েছে। তবু কাল থেকে (আজ) লকডাউন বাস্তবায়নে মাঠে থাকব। মানুষকে বুঝাবো। প্রয়োজনে কঠোর হবো।