উপজেলা পরিষদের ক্ষমতা বৃদ্ধির রায়ের বাস্তবায়ন চান উপজেলা চেয়ারম্যানগণ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ at ৫:৫৬ পূর্বাহ্ণ

উপজেলা পরিষদ আইনে সরকারের ১৭টি বিভাগকে স্থানীয় পর্যায়ে উপজেলা পরিষদের কাছে ন্যস্ত করার আদালতের দেয়া নির্দেশনার দ্রুত বাস্তবায়ন দেখতে চান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানরা। তবে এই রায় আদৌ আলোর মুখ দেখবে কিনা তা নিয়ে রয়েছে অনেকের মাঝে সংশয়।
উল্লেখ্য, গত ২১ সেপ্টেম্বর এক সম্পূরক আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মো. কামরুল হোসেন মোল্লার সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চের রায়ে বলা হয়- উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন দপ্তরের কাগজপত্র ও নথি অনুমোদনের জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) মাধ্যমে উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে উপস্থাপন করতে হবে। বর্তমানে বিদ্যমান উপজেলা পরিষদের সাইন বোর্ডে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ের পরিবর্তে উপজেলা পরিষদ কার্যালয় সাইনবোর্ড টাঙ্গানোসহ কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
আদালত এই আদেশে ইউএনওদের প্রতি সার্কুলার জারি করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিবের প্রতিও নির্দেশ দেন। এর আগে উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও দুমকি উপজেলা চেয়ারম্যান হারুন-অর-রশিদ এবং সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খানসহ পাঁচজন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি রিটটি করেন।
আদালতে রিট আবেদনকারীদের পক্ষে শুনানিতে অংশ নেয়া আইনজীবী মনজিল মোরসেদ ও হাসান এম এস আজিমের দেয়া ভাষ্যানুসারে সরকারের ১৭টি বিভাগে কোনো কমিটি গঠন করা হলে সেটার সভাপতি হওয়ার কথা উপজেলা চেয়ারম্যানগণ। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব দপ্তরের বিভিন্ন কমিটিতে পরিপত্রের মাধ্যমে ইউএনওদের সভাপতি করা হয়েছে। সমপ্রতি এর সংখ্যা আরও বেড়েছে।
সর্বশেষ উপজেলা পরিষদ আইনের ৩৩ ধারা চ্যালেঞ্জ করে হাইকোর্টে রিট করেন উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের নেতারা। রিটকারী আইনজীবীদের মতে আদালতের রায় অনুসারে মহামান্য হাইকোর্টের নির্দেশনা অনুযায়ী আইন, বিধি ও নোটিফিকেশন অনুযায়ী ইউএনওদের চলতে হবে। এই রায়ের ফলে আগের সব পরিপত্র বাতিল হয়ে যাবে বলে আইনজীবীদের অভিমত।
জানা যায়, উপজেলা পরিষদের জনপ্রতিনিধিরা এই রায়ে সন্তুষ্ট হলেও অনেকের মধ্যে রয়েছে এই রায় বাস্তবায়ন নিয়ে সংশয়।
উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের চট্টগ্রাম বিভাগের সভাপতি রাউজান উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এহেছানুল হায়দর চৌধুরী বাবুল এ প্রসঙ্গে বলেন, এরশাদ সরকার উপজেলা পরিষদ ব্যবস্থার প্রবর্তন করেছিলেন। ১৯৯১ সালে বিএনপি ক্ষমতায় এসে এই ব্যবস্থা বাতিল করে। আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলো শক্তিশালী করতে যুগান্তকারী বহু উদ্যোগ নিয়েছেন। উপজেলা ব্যবস্থাকে আবার চালু করেছেন। তিনি উপজেলা পরিষদের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগোষ্ঠিকে সেবা দিতে বহুমুখী পদক্ষেপ নিয়ে কাজ করে আসছেন। প্রধানমন্ত্রীর মনের লালিত অনেক স্বপ্ন উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিগণ বাস্তাবায়নে আন্তরিক ভাবে চেষ্টা করেন। তিনি মনে করেন আমলাতান্ত্রিক মারপ্যাচে আটকে পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যাণগণ বহুমুখী উন্নয়ন ও জনকল্যাণমুখী কাজ স্বাধীনভাবে করতে পারেন না।
রাউজান উপজেলা পরিষদের এই চেয়ারম্যান বলেন, আমলারা প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন বাস্তবায়নে কাজ করছেন, দেশকে এগিয়ে নিতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে চান উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরাও। রায় প্রসঙ্গে তিনি বলেন, মহামান্য আদালত রিট আবেদন বিচার বিশ্লেষণ করেই যুগান্তকারী রায় প্রদান করেছেন। এখন সংশ্লিষ্ট পক্ষের উচিত দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রা ও জনকল্যাণমূলক কাজে অবদান রাখতে উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা যাতে স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারে সেই পরিবেশ সৃষ্টি করা। আদালতের রায় দ্রুত কার্যকর করতে সার্কুলার জারি করা। উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক, মনোহরদী উপজেলা চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম খান বিরু এ প্রসঙ্গে আজাদীকে বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি মহামান্য আদালতের রায় দ্রুত কার্যকর করবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। তবে তিনি এই আশংকার কথা জানান হয়ত এই আদেশের বিরুদ্ধে বিবাদী পক্ষ আপিলও করতে পারেন। যদি কোনো কারণে আপিল করা হয়, তাহলে উপজেলা পরিষদ অ্যাসোসিয়েশন ন্যায্য দাবি প্রতিষ্ঠায় আইনি লড়াই চালিয়ে যাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধট্রেনে পাথর ছোড়া রোধে আরও জনবল চায় মন্ত্রণালয়
পরবর্তী নিবন্ধবিদ্যুৎকেন্দ্রের ফার্নেস ওয়েল আমদানি ও খালাসে নৈরাজ্য!