চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়ে এ পর্যন্ত মারা যাওয়াদের সর্বোচ্চ ৬৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ নগরের বাসিন্দা। বাকি ৩৩ দশমিক ২৫ শতাংশ উপজেলার। তবে গত সাত দিনে মারা যাওয়াদের ৬১ দশমিক ৭৪ শতাংশ উপজেলার এবং ৩৮ দশমিক ২৩ শতাংশ নগরের বাসিন্দা। অর্থাৎ ধীরে ধীরে নগরের চেয়ে গ্রাম পর্যায়ে মৃত্যুর হার বাড়ছে। কোভিড-১৯ পজিটিভ হয়ে মৃত্যুবরণকারী রোগীদের পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে এ তথ্য জানা গেছে।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসে মৃত্যুর এক বছর দুই মাস ২৬ দিন পূর্ণ হয়েছে গতকাল। এসময়ে ৭২২ জন মারা গেছেন। এর মধ্যে নগরে ৪৮২ জন এবং উপজেলায় মারা গেছেন ২৪০ জন। এ পর্যন্ত নগরে মারা যাওয়াদের সর্বোচ্চ ৬১ জন হালিশহরের বাসিন্দা। উপজেলায় সর্বোচ্চ ৫৩ জন মারা গেছেন হাটহাজারীতে।
এদিকে গত সাত দিনে পুরো চট্টগ্রামে মারা গেছেন ৩৪ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ২১ জন উপজেলার বাসিন্দা। বাকি ১৩ জন নগরের। সর্বশেষ গতকাল নগরে একজন এবং উপজেলায় চারজন মারা গেছেন। আগের দিন ৪ জুলাই নগরে দুইজন এবং উপজেলায় চারজন মারা যান। এছাড়া ৩ জুলাই নগরে শূন্য এবং উপজেলায় একজন, ২ জুলাই নগরে ও উপজেলায় দুইজন করে, ১ জুলাই নগরে তিনজন ও উপজেলায় দুইজন, ৩০ জুন উপজেলায় ছয়জন ও নগরে চারজন এবং ২৯ জুন নগরে একজন এবং উপজেলায় দুইজন মারা যান। সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তথ্য বিশ্লেষণে জানা গেছে, নগরে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২০২০ সালের ১৩ এপ্রিল। তিনি ছিলেন ৫০ বছরের একজন নারী এবং সরাইপাড়া লোহারপুল এলাকার বাসিন্দা। তবে চট্টগ্রামে করোনায় প্রথম মৃত্যু হয়েছিল ২০২০ সালের ৯ এপ্রিল দিবাগত রাতে। সাতকানিয়া উপজেলার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়নের ইছামতি আলীনগর এলাকায় বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম (৬৫) নামের ওই ব্যক্তি মারা যান করোনা উপর্সগ নিয়ে। মৃত্যুর দিন রাতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তার নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছিল। পরে ১১ এপ্রিল রাতে প্রকাশিত রির্পোটে জানা যায়, তিনি কোভিড-১৯ পজিটিভ ছিলেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, সংক্রমণ কমানো গেলে মৃত্যুও কমে আসবে। সংক্রমণ ঠেকানোর জন্য সরকার যে কঠোর লকডাউন দিয়েছে তার নির্দেশনাগুলো সবাইকে অনুসরণ করতে হবে। যার যার অবস্থান থেকে সকলের উচিত জরুরি কাজ ছাড়া বাইরে না যাওয়া।
উল্লেখ্য, গতকাল পর্যন্ত চট্টগ্রামে ৬০ হাজার ৯২৭ জন করোনাভাইরাসে সংক্রমিত হয়েছেন। এর মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৪৭ হাজার ৩৮১ জন এবং উপজেলার বাসিন্দা ১৩ হাজার ৫৪৬ জন।
নগরে কোন এলাকায় কতজন মারা গেছেন :
সিভিল সার্জন অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ পর্যন্ত নগরের হালিশহরে ৬১ জন, চকবাজারে ২৭ জন, খুলশীতে ২৪ জন, বন্দর এলাকায় ২৩ জন, ডবলমুরিংয়ে ১৯ জন, বাকলিয়ায় ১০ জন, বায়েজিদে ১৮ জন, আকবর শাহ এলাকায় ১৪ জন, পতেঙ্গায় ১৩ জন, সুগন্ধা আবাসিক এলাকায় দুইজন, মোহরায় তিনজন, লালখানবাজারে চারজন, মাদারবাড়িতে পাঁচজন, কদমতলীতে একজন, আগ্রাবাদ এলাকায় ১৭ জন, কোতোয়ালীতে ৪৬ জন, চান্দগাঁওয়ে ৩৩ জন, পাঁচলাইশে ৩৬ জন, পাহাড়তলীতে ১৯ জন, ইপিজেড এলাকায় দুইজন, সদরঘাটে নয়জন, এনায়েত বাজারে তিনজন, দামপাড়ায় ১৯ জন, ঈদগাঁ-এ তিনজন, বউ বাজার এলাকায় একজন, মোগলটুলীতে একজন, মুরাদপুরে একজন, লেভেল পার্কে একজন, রাহাত্তারপুল এলাকায় চার জন, ফিরোজশাহ কলোনিতে তিনজন, আসকারদিঘী পাড় এলাকায় তিনজন, কর্ণফুলীতে ছয়জন, হাজারী লেইনে তিনজন, কাজীর দেউড়িতে দুইজন, নাছিরাবাদ হাউজিং সোসাইটিতে চারজন, কাট্টলীতে চারজন, বিশ্বকলোনিতে একজন, দেওয়ানবাজারে দুইজন, বড়পোলে একজন, মনসুরাবাদে দুইজন, রেয়াজউদ্দিন বাজারে দুইজন, হিলভিউতে একজন, চন্দনপুরায় একজন, দেওয়ানহাটে দুইজন, ব্যাটারি গলিতে একজন, কালুরঘাটে একজন এবং কাতালগঞ্জ আবাসিক এলাকায় একজন, আনন্দীপুরে একজন, মোহাম্মদপুরে একজন এবং অন্যান্য এলাকায় মারা গেছেন আরো ১৭ জন।
উপজেলায় শীর্ষে হাটহাজারী :
সিভিল সার্জনের প্রতিবেদন অনুযায়ী, চট্টগ্রামের ১৪ উপজেলার মধ্যে হাটহাজারীতে ৫৩ জন, সাতকানিয়ায় ১৮ জন, সীতাকুণ্ডে ২৮ জন, বোয়ালখালীতে ২০ জন, পটিয়ায় ২১ জন, আনোয়ারায় আটজন, চন্দনাইশে আটজন, ফটিকছড়িতে ২০ জন, মিরসরাইয়ে নয়জন, লোহাগাড়ায় নয়জন, সন্দ্বীপে চারজন, রাঙ্গুনিয়ায় ১৪ জন, বাঁশখালীতে আটজন এবং রাউজানে ২০ জন মারা গেছেন।