উত্তরাধিকার : প্রাণবন্ত বোধের শিল্পিত উদ্ভাস

আজাদী প্রতিবেদন | রবিবার , ৯ জানুয়ারি, ২০২২ at ৯:৫৮ পূর্বাহ্ণ

বাংলাদেশ গ্রুপ থিয়েটার আন্দোলনের সহযাত্রী সংগঠন নাট্যদল উত্তরাধিকার, চট্টগ্রামের আত্মপ্রকাশ ২০০২ সালের ৭ মার্চ। নিয়মিত নাট্যচর্চা এবং নাটকের শিল্পিত উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও সমাজের নানামুখী সংকট ও সম্ভাবনাকে মঞ্চালোকে উন্মোচন করা এ দলের অন্যতম লক্ষ্য। লোকজ সৌন্দর্য অনুসন্ধান করে মঞ্চে তার শিল্পিত রুপকল্প নির্মাণে উত্তরাধিকার বিশেষ নজর দিয়ে থাকে। দেশজ প্রয়োগ রীতির সাথে বিশ্বনাট্যের উপস্থাপন কৌশলের সংমিশ্রণে এক নয়া নাট্য সড়ক আবিষ্কার করা এ দলের অন্যতম অভীপ্সা। জীবনের নানা টানাপোড়নে আজ বিছিন্ন মঞ্চের পরিচর্যা থেকে, পুনর্বার তাঁদের নাটকের সান্নিধ্যে এনে উত্তরাধিকার গড়ে তুলতে চায় মঞ্চের মুখরতা। সৌম্য, প্রশান্তি আর বর্ণনাতীত উৎকর্ষতায় উত্তরাধিকার, চট্টগ্রামের স্বপ্নীল যাত্রা। এ দলের প্রতিষ্ঠাতাদের মধ্যে নাট্যজন মোসলেম উদ্দিন সিকদার, অসিত দাশ পুলক, মঈন উদ্দিন কোহেল ও তাসনুভা তানজিল মিশু অন্যতম। প্রতিষ্ঠার পর থেকে উত্তরাধিকার একটা দারুণ শৃঙ্খলার মধ্য দিয়ে পরিচালিত হচ্ছে। একজন অধিকর্তা ও ছয়জন নির্বাহী সদস্যকে নিয়ে গঠিত পরিচালনা পর্ষদ উত্তরাধিকারের সামগ্রিক বিষয় দেখভাল করেন।
উত্তরাধিকার পথচলার বিশ বছরে সাতটি প্রযোজনার ৩১৪টি প্রদর্শনী সম্পন্ন করেছে চট্টগ্রাম, ঢাকা, চাঁদপুর, বরিশাল, ভারতের ত্রিপুরা, কলকাতার হালিশহর ও মধুসুদন মঞ্চে। নাটকগুলোর মধ্যে উত্তরাধিকারের প্রথম প্রযোজনা সাম্পাননাইয়া, রচনা করেছেন আমিনুর রহমার মুকুল, নিদের্শনায় ছিলেন মোসলেম উদ্দিন সিকদার, প্রদর্শনীর সংখ্যা ৮৮। শ্রেণিহীন শোষণমুক্ত সমাজ অনুসন্ধান এ নাটকের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। দ্বিতীয় প্রযোজনা প্রেম পুরাণ। রচনায় আফসার আহমেদ, নির্দেশনায় মোসলেম উদ্দিন সিকদার, প্রদর্শনীর সংখ্যা ৪৮। ইতিহাসের এক অপুরাণ সত্যের বয়ান প্রেম পুরাণ। তৃতীয় প্রযোজনা সাগরঘাট। রচনায় রোকনুজ্জমান, রুপান্তরায়ন আমিনুর রহমান মুকুল, নির্দেশনায় মঈন উদ্দিন কোহেল, প্রদর্শনীর সংখ্যা ৪৩। পূর্বপুরুষের স্মৃতিধন্য বসতভূমি রক্ষায় জোটবদ্ধ চরবাসীর রক্তাক্ত সংগ্রাম এ নাটকের মূল উপজীব্য। চতুর্থ প্রযোজনা চন্দ্রলোকের মন ময়ুরী। রচনায় হাসান শাহারিয়ার, নিদের্শনায় অসিত দাশ পুলক, প্রদর্শনীর সংখ্যা ৪১। দ্রোহী যুবকের স্বপ্নভঙ্গ ও প্রতিবাদের চিত্র নিয়ে চন্দ্রলোকের মন ময়ুরীর কাহিনী রচিত। পঞ্চম প্রযোজনা মন তার শঙ্খিনী। রচনায় আমিনুর রহমান মুকুল, নির্দেশনায় মঈন উদ্দিন কোহেল, প্রদর্শনীর সংখ্যা ২৮। এই নাট্য কাহিনীতে এক ঘুঁটে কুড়ানি মেয়ে হামিদার চাওয়া-পাওয়া-আকাঙক্ষা, পূর্ণতা, প্রাপ্তি, অপূর্ণতা ফুটে উঠে। ষষ্ঠ প্রযোজনা মৃত্যুপাখি। রচনায় তানভীর আহমেদ সিডনি, নির্দেশনায় মোসলেম উদ্দিন সিকদার। প্রদর্শনীর সংখ্যা ৪৩। স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধীতাকারীদের পরাজয়ের গল্প বলবে আমাদের মস্তিষ্কে জন্ম নেয়া পাখি, যার নাম মৃত্যুপাখি। সপ্তম প্রযোজনা ফুলকুমারী। রচনায় আমিনুর রহমান মুকুল, নির্দেশনায় মোসলেম উদ্দিন সিকদার। প্রদর্শনীর সংখ্যা ২৩। নদীমাতৃক এই বঙ্গে নদীর সরল রৈখিক গতির সঙ্গে মানুষের জীবনের রৈখিক টানা পোড়নে ঘটেছে নানান গীতি, কথা, সুর ও তালের সংমিশ্রনে গল্প ও কাহিনি। তেমনি টাঙ্গাইল জেলার একটি গীতি কাহিনী ফুলকুমারী।
এছাড়া নিয়মিত নাট্য কর্মশালা, থিয়েটার বিষয়ক আড্ডা, বিশ্ব নাট্য দিবস পালন, মে দিবস ও দলীয় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে নাট্যোৎসব আয়োজন উত্তরাধিকারের নিয়মিত কাজ। উত্তরাধিকারের মঞ্চ প্রযোজনার পাশাপাশি রয়েছে মুক্তাঙ্গন প্রযোজনা। মুক্তাঙ্গন প্রযোজনায় উত্তরাধিকারের বক্তব্য স্পষ্ট। সাধারণত মঞ্চনাটকে শিল্পগত দিক বিবেচনায় দলগুলোর ভাবনা লক্ষণীয়। অভিনয় শৈলির পাশাপাশি সেট, লাইট, মিউজিক, কোরিওগ্রাফি ইত্যাদির শৈল্পিক সমাবেশে মঞ্চ নাটক হয় বেশ প্রাণবন্ত। উত্তরাধিকার মনে করে মুক্তাঙ্গনেও শিল্পগত দিক সমুন্নত রেখে নাটক করা যায়। অনেকে মনে করে গাঁটের পয়সা খরচ করে টিকিট কেটে ও সময় নষ্ট করে এক বিশেষ শ্রেণি। অপর পক্ষে পথ নাটক পরিবেশন করা হয় মূলত নিরক্ষর, জীবন বাস্তবতার টানাপোড়নে কর্মব্যস্ত ও ভাসমান জনগোষ্ঠীর কথা মাথায় রেখে। উত্তরাধিকার মনে করে এদের মঞ্চ নাটকের শিল্পগত দিক উপভোগ করার অধিকার রয়েছে। তাই উত্তরাধিকার পথের ধারে কিংবা মুক্তাঙ্গনে পরিবেশিত নাটকে শিল্পের শাখাসমূহ যথাযথ ব্যবহার করে নাটক পরিবেশন করে। তাই শিল্পচর্চায় তাদের ভাবনা ‘মুক্তাঙ্গন প্রযোজনা’।

পূর্ববর্তী নিবন্ধএসডিজি অর্জনে সকল প্রতিষ্ঠানকে এগিয়ে আসতে হবে
পরবর্তী নিবন্ধউন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হতে দেয়া যাবে না