দীর্ঘ এক সপ্তাহ পর মিয়ানমার আর্মি ও বিদ্রোহী গ্রুপ আরাকান আর্মির মধ্যে সম্মুখ লড়াইয়ের খবর পাওয়া গেছে। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে বাংলাদেশের তুমব্রু কোনারপাড়া সীমান্তের ওপারে অন্তত দুটো স্থানে উভয়ের গ্রুপে সংঘর্ষ হয়। উভয় পক্ষের গুলি বিনিময়কালে একটি আর্টিলারি গোলা তুমব্রু সীমান্তে এসে পড়েছে। তবে কোনো ক্ষয়ক্ষতির খবর পাওয়া যায়নি।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার তুমব্রু সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের উত্তর মংডু জেলার কয়েক কিলোমিটার জুড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে স্বাধীনতাকামী সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) সংঘর্ষ ও গোলাগুলি চলছে। এত দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি চললেও গতকাল শুক্রবার দুপুর দুটো থেকে হালকা ও মাঝারি ধরনের গোলাগুলি চলেছে। বিকেল পাঁচটার দিকেও বাংলাদেশের তুমব্রু বাজার থেকে ওপারে মুহুর্মুহু গুলির শব্দ শোনা গেছে। তুমব্রু কোনারপাড়ার বাসিন্দা ও ঘুমধুম উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খাইরুল বাশার বলেন, আমাদের পাড়ার ওপারে মিয়ানমার সামরিক বাহিনী ও বর্ডার গার্ড পুলিশের সঙ্গে বিদ্রোহী আরাকান আর্মির সম্মুখ লড়াই চলছে। বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত বাড়িতে থেকে অনবরত গোলাগুলির শব্দ শুনতে পাই।
তুমব্রু কোনারপাড়ার আবুল কালাম জানান, সীমান্ত এলাকার বাসিন্দাদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। একই পাড়ার মোঃ শাহজাহান জানান, প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দে তারা আতঙ্কিত হয়ে সবাইকে নিয়ে বাড়িতে অবস্থান করছেন। বিকেল ৩টার দিকে হঠাৎ একটি মাঝারি ধরনের গোলা এসে বাড়ির উঠানে পড়ে। এতে কেউ ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।
ফখরুদ্দিন জানান, অন্যদিন কামান, মর্টার শেলের গোলার বিকট শব্দে আশপাশের এলাকায় ভূ-কম্পন হতো। কিন্তু আজ হালকা ও মাঝারি গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। আমরা শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে চরম উদ্বিগ্ন।
দুপুরে হঠাৎ গোলাগুলির শব্দে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন তুমব্রু ও কোনারপাড়া এলাকার স্থানীয় লোকজন। আতঙ্ক বিরাজ করছে দুই দেশের মধ্যবর্তী তুমব্রু কোনারপাড়া শূন্যরেখার আশ্রয় শিবিরে; যেখানে চার হাজারের বেশি রোহিঙ্গার বসতি। ২০১৭ সালে গড়ে তোলা হয় এই আশ্রয় শিবির।
আশ্রয় শিবির ব্যবস্থাপনা কমিটির চেয়ারম্যান দিল মোহাম্মদ শুক্রবার বিকেলে জানান, আরাকান আর্মি ও মিয়ানমার নিরাপত্তাবাহিনীর মধ্যে তুমুল গুলিবর্ষণ ও সংঘর্ষ চলছে। মাঝেমধ্যে আর্টিলারি ও মর্টার শেলের গোলার বিকট শব্দ শোনা যাচ্ছে। এতদিন দুপুরের আগে গোলাগুলি থেমে যেত। বিকেলে ক্যাম্পের নারী-পুরুষেরা ঘরের বাইরে এসে প্রয়োজনীয় কাজ করতেন এবং শিশুরা খেলাধুলা করত। আশ্রয়শিবিরের কাছাকাছি রাখাইনের তুমব্রু লেওয়ার মেধাই, পানিরচরার দিকে প্রচণ্ড গোলাগুলি হওয়ায় আতঙ্ক বেশি।
সীমান্ত রক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক স্থানীয় সূত্র ও রোহিঙ্গা নেতা বলেন, গত ৩১ আগস্ট থেকে দুই দিন বিরতি রেখে বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী স্থল ও আকাশপথে ভারী অস্ত্রের ব্যাপক গোলাবর্ষণ চালিয়েছিল। আরাকান আর্মির লক্ষ্যবস্তুতে ছোড়া হয়েছিল শত শত আর্টিলারি, মর্টার শেল ও বোমা। বাংলাদেশের ভূ-খণ্ডেও দুবার মর্টার শেল এসে পড়ার ঘটনা ঘটেছিল।












