উজ্জ্বল আলোকবর্তিকা ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক

ফখরুল ইসলাম নোমানী | রবিবার , ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ


সৃষ্টিকর্তার অপূর্ব সৃষ্টি এই পৃথিবী। পৃথিবী সৃষ্টির পর থেকে কোটি কোটি মানব সন্তানের জন্ম হয়েছে এই পৃথিবীতে আবার অবধারিত মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করে চলেও গেছেন অনেকে। যারা চলে গেছেন তাঁদের মধ্যে কিছু মানুষকে মানবকূল এখনও স্মরণ করে তাঁদের কর্মের গুণে এবং স্মরণ করে যাবে অনন্তকাল ধরে। ঠিক তেমনই একজন স্মরণযোগ্য মানুষ চট্টগ্রামের সাংবাদিকতা জগত ও আধুনিক সংবাদপত্রের পথিকৃৎ, সংবাদপত্র শিল্পের অন্যতম অগ্রদূত, স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম জনপ্রিয় সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ও প্রকাশক চট্টল গৌরব ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক। তাঁর ৬০ তম মৃত্যুবার্ষিকীতে তাঁকে বিনম্র শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি ও স্মৃতির প্রতি গভীর শ্রদ্ধা নিবেদন ও রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।
চট্টগ্রাম জেলার ঐতিহ্যবাহী রাউজান সুলতানপুর গ্রামে ১৮৯৬ সালের ২০ জুলাই জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর ৬৬ বছর বয়সে তিনি ইন্তেকাল করেন। সংবাদপত্র ও আধুনিক মুদ্রণ শিল্প জগতের পথিকৃৎ চট্টগ্রামের প্রথম ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক-এর বিচরণ বা অবদান অন্তত চট্টগ্রামবাসীকে স্মরণ করিয়ে দেয়ার খুব প্রয়োজন নেই। তিনি রাউজান সুলতানপুর গ্রামে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করে রাউজান আরআরএসি ইনস্টিটিউশন থেকে ১৯১২ সালে প্রবেশিকা এবং চট্টগ্রাম কলেজ থেকে ১৯১৪ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন। ১৯১৯ সালে শিবপুর ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে প্রথম বিভাগে স্বর্ণপদকসহ তড়িৎ প্রকৌশলে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন।
গ্রামের স্কুলে শিক্ষকতা পেশার মধ্য দিয়ে শুরু হয় তাঁর কর্মজীবন। তড়িৎ প্রকৌশলী হিসেবে কিছুকাল রেঙ্গুনে চাকরি করেন। চট্টগ্রাম ইলেক্ট্রিক কোম্পানিতে তড়িৎ প্রকৌশলী হয়ে যোগদান এবং চট্টগ্রামে বিদ্যুৎ ব্যবস্থা চালু করার ক্ষেত্রে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। পরে চাকরি ছেড়ে ব্যবসা শুরু করেন। চট্টগ্রামের শিক্ষা-সাহিত্য ও সাংবাদিকতায় পৃষ্ঠপোষকতা এবং এ বিষয়ে অগ্রণী ভূমিকা পালনের জন্য ১৯৩০ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন কোহিনুর ইলেক্ট্রিক প্রেস। যা ছিল চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ছাপাখানা।
চট্টল গৌরব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের চেতনার বাতিঘর। একজন সমাজ সংস্কারক হিসেবে তাঁর ভূমিকা ছিল অনন্য। তিনি সমাজে পরিবর্তন আনার জন্যই সারাজীবন কাজ করেছেন। কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশে নয়, চট্টগ্রামের মাটি ও মানুষের কথা বলার জন্যই মূলত তিনি দৈনিক আজাদী প্রকাশ করেছিলেন। তিনি সাংবাদিকতা জগতে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন এবং সমাজে পরিবর্তন আনার জন্য নিজেকে নিবেদন করেছেন। চট্টগ্রামবাসীর উজ্জ্বল আলোক-বর্তিকাছিলেন ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক।
মহামনীষী ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক একজন অনুস্মরণীয়ব্যক্তিত্ব ও আলোকিত মানুষ। তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত মানব সেবায় নিয়োজিত ছিলেন। চট্টগ্রামের প্রথম মুসলিম প্রকৌশলী, সম্পাদক, প্রকাশনা-উদ্যোক্তা এবং দৈনিক আজাদীর প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। একাধারে বহুমুখী প্রতিভাসম্পন্ন এ দুর্লভ ব্যক্তিত্বের বর্ণাঢ্য জীবনালেখ্য সংক্ষেপে শেষ করা যাবে না। চট্টগ্রামের এ স্বপ্নদ্রষ্টা আমাদের মাঝে আর নেই, ভাবতেই বুকটা কেঁপে উঠে। তার এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। ভাষা আন্দোলনের উত্তাল সময়। একদিকে রাজপথে বাংলার দামাল ছেলেরা, অন্যদিকে পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু। এই রক্তচক্ষুতে যখন অনেকে তটস্থ, তখন ভাষা আন্দোলনের সমর্থনে কবি মাহবুব উল আলম চৌধুরীর লেখা অমর কবিতা ‘কাঁদতে আসিনি, ফাঁসির দাবি নিয়ে এসেছি’ ছাপানোর মতো দুঃসাহস দেখিয়েছিলেন এক প্রকাশক-সম্পাদক তাঁর নাম ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক। তৎকালীন নুরুল আমিন সরকারের প্রশাসনের নির্যাতনের ভয়ে সেই কবিতা ছাপাতে কেউই রাজি হননি। অমিত সাহসের অধিকারী ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক মাতৃভাষার প্রতি প্রগাঢ় শ্রদ্ধার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে তার আন্দরকিল্লার কোহিনুর ইলেকট্রিক প্রেস থেকে ছাপিয়ে দেওয়ার ঝুঁকি নেন।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক প্রতিষ্ঠিত দৈনিক আজাদী ও চট্টগ্রাম একে অপরের পরিপূরক। দৈনিক আজাদী পত্রিকাকে বাদ দিলে চট্টগ্রাম নিয়ে আলোচনা চলে না। আবার ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেককে বাদ দিলে চট্টগ্রামের ইতিহাস বিশেষ করে আধুনিক মানুষের মনন চর্চার ইতিহাস অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক সংবাদপত্র জগতে না এসে অন্য কাজও করতে পারতেন। কিন্তু তিনি ওই সময়েই চিন্তা করেছিলেন চট্টগ্রামের মানুষের মনের কথা, মানুষের সুখ-দুঃখের কথা, মানুষের সমস্যা এবং চট্টগ্রামের অপার সম্ভাবনার কথা তুলে ধরার জন্য সংবাদপত্রের বিকল্প নেই। তাই তিনি পত্রিকা প্রকাশনার পথে আসেন এবং তার আসাটা সার্থক হয়েছে। কারণ আজ আজাদী পত্রিকাকে মানুষ নিজের করে নিয়েছে। দীর্ঘ এ পথচলায় অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আজাদী নিরপেক্ষ সাংবাদিকতায় অটল রয়েছে আজও। চট্টগ্রামের স্বার্থে আপোষহীন দৈনিক আজাদী। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে আজাদী পড়তে না পারলে মানুষের মন কেমন যেন আনচান করে।
পেশাগত জীবন শুরু করার কিছুদিনের মধ্যে তিনি চট্টগ্রামের প্রতি নানা বঞ্চনা খুব কাছ থেকে দেখেন। পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি সরকারের অবহেলা এবং সেই পূর্ব পাকিস্তানের অবহেলিত জনপদ চট্টগ্রামের মানুষের অভাব অভিযোগ তুলে ধরার পাশাপাশি মানুষকে শিক্ষিত এবং নিজের অধিকার সম্পর্কে সচেতন করার জন্য তিনি পত্রিকা প্রকাশনায় আত্মনিয়োগ করেন। এখানকার মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে তিনি নিজেকে নিবেদিত করেন।
সংবাদপত্র জগতের প্রাণপুরুষ ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক ১৯২৯ সালে চট্টগ্রাম শহরে প্রতিষ্ঠা করেন পুস্তক প্রকাশনা ও বিক্রির প্রতিষ্ঠান কোহিনুর লাইব্রেরি। ১৯৩২ সালে তার প্রতিষ্ঠিত কোহিনূর ইলেকট্রিক প্রেস এবং ১৯৫০ সালের ২২ ডিসেম্বর তার সম্পাদনায় সাপ্তাহিক কোহিনুর পত্রিকার আত্মপ্রকাশ ঘটে। এরপর তিনি প্রকাশ করেন দৈনিক আজাদী। আজাদী পত্রিকা প্রকাশের মাধ্যমে এই অঞ্চলের মানুষের সুখ-দুঃখ তুলে ধরতে পালন করেছেন অগ্রণী ভূমিকা। স্বাধীনতা যুদ্ধের পর ১৭ ডিসেম্বর ঢাকা থেকে কোনো পত্রিকা প্রকাশিত না হলেও দৈনিক আজাদী প্রকাশিত হয়। সেদিন পত্রিকার শিরোনাম ছিল ‘জয় বাংলা, বাংলার জয়’।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক তাঁর সম্পাদনায় প্রকাশিত দৈনিক আজাদী চট্টগ্রামের বুকে জন্ম দিয়েছে বহু সাংবাদিক, সাহিত্যিক, কবি ও গবেষককে-যারা এই পত্রিকায় লেখালেখির মাধ্যমে তাদের প্রতিভার বিকাশ ঘটিয়েছেন। তাঁর প্রেস ও প্রকাশনা সংস্থা থেকে আবদুল করিম সাহিত্যবিশারদ এবং ড.এনামুল হকের যৌথ গ্রন্থ ‘চট্টগ্রামী ভাষার রহস্যভেদ আরাকান রাজ সভার বাংলা সাহিত্য’ প্রকাশিত হলে সবত্র সুনাম ছড়িয়ে পড়ে। শুধু তাই নয় ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক শিশুপাঠ্য ও শিশুতোষসহ বহু গ্রন্থের রচয়িতাও ছিলেন।
মেধা ও মননের সংমিশ্রণে তিনি সৃজনশীল প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছিলেন। জ্ঞান নির্ভর সমাজ নির্মাণে আল্লাহ্‌-রসুল প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষে তাঁর সমুদয় কর্মকাণ্ড আবর্তিত হতো। নিষ্কলুষ চরিত্রের অধিকারী, জনদরদী, ফানাফিশ্‌ শায়খ, সহজ-সরল, নিষ্ঠাবান, ধার্মিক ব্যক্তি আলহাজ্ব ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক বহুমুখি প্রতিভাসম্পন্ন এক বিরল ব্যক্তিত্ব। তিনি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলের আদর্শ ব্যক্তি। তাঁর সমকক্ষ মানুষ এখন খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। তিনি শুধু লাইব্রেরি, ছাপাখানা, পত্রিকা, মাদরাসা, খানকা প্রতিষ্ঠা করেই ক্ষান্ত হননি। তিনি নিজেও একজন সুলেখক, সমালোচক, সংবাদকর্মী হিসেবে সমধিক পরিচিত। মহাকবি স্যার আল্লামা ইকবালকে নিয়ে তাঁর লেখা কবিতার কয়েকটি চরণ :
‘কবি ইকবাল তুমি দিকপাল
বলিয়াছে কতজনে
আমি শুধু রূপ অভিনব,
আকিঁয়াছি মনে মনে।’
তাঁর উল্লেখযোগ্য গ্রন্থগুলো যথাক্রমে : শহীদে কারবালা হযরত হোসাইন (রাঃ), হযরত ইমাম আবু হানিফা (রঃ), বার আউলিয়া, চট্টগ্রামের অস্ত্রাগার লুণ্ঠন (১৯৩০), দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন (১৯৫৭), দেশপ্রিয় যতীন্দ্রমোহন, শেখে চাঁটগাম কাজেম আলী, নেপোলিয়ান, মৌলানা মোহাম্মদ আলী শওকত আলী, ইতিহাসের শহীদ, নেপোলিয়ান, প্রাথমিক ভূগোল, বিজ্ঞান ও গ্রাম্য জীবন, রচনার প্রথম ছড়া, উর্দু প্রাউমার, বযয়েস ইংলিশ গ্রামার, ফার্স্ট বুক অব ট্রান্সলেশন, চাইল্ড পিকচার ওয়ার্ড বুক, ব্যাকরণ মঞ্জুষা, তাওয়াফ, ঝলমল (শিশুপাঠ), মুসলিম বাল্য শিক্ষা, সহজ পাঠ (শিশুপাঠ্য) প্রভৃতি।
ইঞ্জিনিয়ার মোহাম্মদ আবদুল খালেক চট্টগ্রামের সংবাদপত্র ও আধুনিক মুদ্রণ শিল্প জগতের পথিকৃৎই ছিলেন না, তিনি উপমহাদেশের অন্যতম সুফি সাধক হযরত সৈয়দ আহমদ শাহ ছিরিকোটি (র.)’র প্রধান খলিফা হিসেবে ধর্মীয় ক্ষেত্রেও একজন উল্লেখযোগ্য ব্যক্তি ছিলেন। তিনি বিভিন্ন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি সিলসিলাহ ও আলিয়া কাদেরিয়ারও একজন খলিফা ছিলেন। আজ থেকে শত বছর আগে রেঙ্গুন গিয়ে হযরত সিরিকোটি হুজুরের হাতে বয়াত গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে নবী বংশের এমন একজন কামেল অলীকে চট্টগ্রামে এনে দেশের হাজার হাজার মানুষকে কাদেরিয়া ত্বরিকায় সম্পৃক্ত হবার সুযোগ করে দেন। তিনি নিজের বাসভবন আন্দরকিল্লার কোহিনুর মঞ্জিলকে সিরিকোটি হুজুরের বাসভবন তথা প্রথম খানকাহ্‌ হিসেবে চালু করেন। আর এখান থেকে প্রজ্জ্বলিত সুন্নিয়াত ও কাদেরিয়া সিলসিলাহর আলো আজ সমগ্র দেশে পৌঁছে গেছে। চট্টগ্রামে ত্বরিকতের আবাদের ক্ষেত্রে তিনি যে ভূমিকা রেখেছিলেন তা ক্বেয়ামত পর্যন্ত জারি থাকবে। ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক নিজের আক্বিদা-বিশ্বাস ও আদর্শকে প্রাধান্য দিয়ে ১২ রবিউল আউয়াল পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী (দ.) দিবসেই দৈনিক আজাদী পত্রিকার প্রকাশনার সূচনা করেন। ১৯৫৪ সালে চট্টগ্রামে
+প্রতিষ্ঠিত জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার সাথেও জড়িত ছিলেন এবং মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটিরও কোষাধ্যক্ষ ছিলেন।
আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নগরের আন্দরকিল্লায় ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক চত্বর প্রতিষ্ঠা করেছে। চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে ইঞ্জিনিয়ার আবদুল খালেক মিলনায়তন গড়ার পাশাপাশি চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (চুয়েট) আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারের নামে শিক্ষার্থীদের জন্য বৃত্তি চালু করা হয়েছে।
ব্যক্তি জীবনে অত্যন্ত সৎ ও ধর্মপ্রাণ আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ারকে কোনো প্রকার সংকীর্ণতা ও একদেশদর্শীতা কোনোদিন স্পর্শ করতে পারেনি। আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার সাহেবের মধ্যে ধর্ম ও প্রগতির সুষম সমন্বয় তাঁকে এক অনবদ্য আধুনিকতার প্রতীক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। আলহাজ্ব আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার বিরল প্রতিভার স্বাক্ষর রেখে নশ্বর পৃথিবী ত্যাগ করলেও তাঁর সৃষ্টি ও কর্ম তাঁকে যুগ যুগ ধরে বাঁচিয়ে রাখবে। মানবসেবা ধর্মের একটি গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। একথা তিনি মনে প্রাণে বিশ্বাস ও চর্চা করতেন কখনো নীরবে নিভৃতে, কখনো প্রকাশ্যে। ১৯৩৮ সালে তুরস্কে এক ভয়াবহ ভূমিকম্পে দুর্গত মানুষের জন্য সাহায্য সংগ্রহ করে সংগৃহীত অর্থ তুরস্কে প্রেরণ করেন। ১৯৬০ সালের ৩১ অক্টোবর চট্টগ্রামসহ দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে প্রলয়ংকরী ঘূর্ণিঝড় ও জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্তদের সাহায্যার্থে ত্রাণ কমিটি গঠন করে তিনি সাহায্য করেন।
চট্টগ্রাম অঞ্চলের প্রথম মুসলিম ইঞ্জিনিয়ার আলহাজ্ব মোহাম্মদ আবদুল খালেক এর একমাত্রপুত্র স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম সংবাদপত্র দৈনিক আজাদীর সম্পাদক সর্বজন শ্রদ্ধেয় দেশের প্রবীনতম সম্পাদক এম এ মালেক সাহেব সাংবাদিকতায় জাতীয় পর্যায়ে অনন্য অবদানের স্বীকৃতি স্বরূপ গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক একুশে পদকের জন্য ভূষিত হওয়ায় শুভেচ্ছা ও প্রাণঢালা অভিনন্দন। ৫-সেপ্টেম্বর, ২০২২-দৈনিক আজাদীর পরিচালনা সম্পাদক জনাব ওয়াহিদ মালেক ৬৩ তম বর্ষপূর্তি সংকলন প্রকাশ করে সাড়া ফেলে দিলেন। তিনি দারুণ এক ইতিহাসের দ্বার উন্মোচন করলেন। প্রমাণ করলেন তাঁর যোগ্যতা, আন্তরিকতা ও নির্ভরতা। দৈনিক আজাদীর সফলতা কামনায় ৬৩ বছরে পদার্পণ উপলক্ষ্যে চট্টগ্রামসহ দেশবাসী সকলের প্রতি অনাবিল শুভেচ্ছা ও ভালোবাসা রইল। আবদুল খালেক ইঞ্জিনিয়ার তাঁর সৎকর্মের জন্য আমাদের মাঝে এখনো বেঁচে আছেন, থাকবেন অনন্তকাল। উন্নয়ন-বঞ্চিত এই জনপদের ভাগ্য পরিবর্তনে তিনি ছিলেন অকুতোভয় এক সংগ্রামী। দরিদ্র মানুষের সেবায় এবং মসজিদ, মাদরাসা, এতিমখানায় তিনি ব্যাপক দান-খয়রাত করতেন।
শেষ কথা : তিনি একজন স্বনির্মিত মানুষ ছিলেন। ১৯৬২ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর চট্টলার এই মহামনীষী সদা হাস্যোজ্জল শুভ্র হাসির সরল প্রাণ মানুষটির মহাপ্রয়াণ ঘটে। চট্টগ্রামের জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া আলিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন কবরস্থানে তাঁকে দাফন করা হয়। তিনি মৃত্যুর আগমুহূর্ত পর্যন্ত একাধারে মানব সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রেখে শিখিয়ে গেছেন কিভাবে সমাজের মানুষকে ভালোবাসতে হয়। কিভাবে ক্ষুদ্র স্বার্থকে ত্যাগ করে মহৎ জীবনকে গড়তে হয়। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬০ বছর। এ শূন্যতা পূরণ হওয়ার নয়। আল্লাহতায়ালা তাকে জান্নাতের উঁচু মাকাম দান করুন। আমীন।
লেখক : ইসলামি গবেষক ও কলামিস্ট।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠীর শরৎ সন্ধ্যা
পরবর্তী নিবন্ধকোদালা যুবলীগের ত্রি-বার্ষিক সম্মেলন