উচ্চ জোয়ারে কক্সবাজার উপকূলের ২০ গ্রাম প্লাবিত

ঘূর্ণিঝড় দেখতে সৈকতে পর্যটকের ভিড় আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার মানুষ

কক্সবাজার প্রতিনিধি | সোমবার , ২৭ মে, ২০২৪ at ৭:৩৩ পূর্বাহ্ণ

বঙ্গোসাগরে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে কক্সবাজারে সাগর উত্তাল রয়েছে। গতকাল রোববার সকালে সাগরে জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৫ ফুট উচ্চতা বাড়ে। জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে কক্সবাজার উপকূলের নিম্নাঞ্চল। শহরের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, মধ্যম কুতুবদিয়া পাড়া, ফদনার ডেইল, নাজিরারটেকে জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া ঈদগাঁওয়ের গোমাতলী, পোকখালী, মহেশখালীকুতুবদিয়াসহ জেলার ২০টি গ্রামে সাগরের জোয়ারের পানি ঢুকেছে। সেন্টমার্টিনেও বঙ্গোপসাগরে পানি বেড়েছে। গতকাল কয়েকটি গ্রাম জোয়ারের পানিতে প্লাবিত হয়েছে। দ্বীপের বাসিন্দাদের নিরাপদে নিয়ে গেছে স্থানীয় প্রশাসন।

কক্সবাজার পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর আকতার কামাল আজাদ বলেন, সমুদ্রের পাশের এলাকায় জোয়ারের পানি প্রবেশ করেছে। ফলে অনেকেই আশ্রয়কেন্দ্রে গেছে। সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান বলেন, জোয়ারের সঙ্গে বঙ্গোপসাগরে পানির উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। দ্বীপের অধিকাংশ লোকজনকে আশ্রয়কেন্দ্রে সরিয়ে নেয়া হয়েছে।

এদিকে কক্সবাজার সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা পর্যটকদের নিরাপদে রাখতে দিনভর সক্রিয় ছিল জেলা প্রশাসন, ট্যুরিস্ট পুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা। সৈকতের লাবণী, কলাতলী ও সুগন্ধা পয়েন্টে গভীর রাত পর্যন্ত সতর্কতার বিষয়ে মাইকিং করা হয়েছে। নির্দেশনা না মেনে অনেকেই সাগরে নামার চেষ্টা করেছেন। সি সেফ লাইফ গার্ড সংস্থার কর্মী জয়নাল আবেদীন বলেন, ঘূর্ণিঝড় রেমালের প্রভাবে সাগর উত্তাল ছিল। সৈকতের প্রতিটি পয়েন্টে টাঙানো হয়েছে লাল পতাকা। লাল পতাকা মানেই সতর্ক করা, যাতে কেউ সমুদ্রস্নানে না নামে। আমরা কাউকে সৈকতে সমুদ্রস্নানে নামতে দিইনি। কিন্তু উৎসুক পর্যটকদের থামানো যায়নি। ঢাকার খিলগাঁও থেকে বন্ধুবান্ধব নিয়ে গতকাল ‘ঘূর্ণিঝড়’ দেখতে কক্সবাজারে এসেছেন আবদুল বারী। তিনি বলেন, ঘূর্ণিঝড়ের সময় সাগরের ঢেউয়ের তীব্রতা দেখার সুযোগ আগে হয়নি। জীবনে প্রথমবার এ অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। হোটেলমোটেল মালিক সমিতি সূত্রে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরের হোটেলমোটেল, রিসোর্ট ও গেস্ট হাউজে গতকাল অন্তত ১৫ থেকে ২০ হাজার পর্যটক অবস্থান করছেন।

কক্সবাজার বিমানবন্দরে গতকাল সকাল থেকে সব ধরনের বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। এছাড়া কক্সবাজারটেকনাফ মেরিন ড্রাইভ রোডের বেশ কয়েকটি পয়েন্টে গাছ ভেঙে পড়ায় ৩ ঘণ্টা যান চলাচল বন্ধ ছিল।

ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট উচ্চ জোয়ারে মহেশখালী পৌরসভার ৮ নং ওয়ার্ডে সিকদার পাড়া এলাকায় বেড়িবাঁধ ভেঙে লোকালয়ে পানি প্রবেশ করেছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন ওই এলাকার মানুষ। এছাড়া বন্যা নিয়ন্ত্রণকারী মূল বাঁধের বেশ কিছু এলাকা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ায় আতঙ্কে রয়েছে স্থানীয়রা। এ অবস্থায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে ঝুঁকিপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে একটানা মেরামতের কাজ করছেন শ্রমিকরা। মহেশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মীকি চাকমা বলেন, বেড়িবাঁধের অনেক পয়েন্ট ভেঙে গেছে। পানি প্রবেশ করায় মেরামত করা যাচ্ছে না। জোয়ারের পানি কমলে তা মেরামত করা হবে।

আশ্রয়কেন্দ্রে ৬ হাজার মানুষ : কক্সবাজার জেলায় ৬ হাজার ৩৩২ জন মানুষ ৬৩৮টি কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। গতকাল বিকাল ৬টায় বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা প্রশাসক মুহম্মদ শাহীন ইমরান। তিনি বলেন, আশ্রয় নেয়া মানুষের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পাশাপাশি মেডিকেল টিম কাজ করছে।

কক্সবাজার পৌর প্রিপ্যার‌্যাটরি উচ্চ বিদ্যালয় আশ্রয় কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, ১ নং ওয়ার্ডের সমিতি পাড়া, কুতুবদিয়া পাড়া, নাজিরারটেক ও ফদনার ডেইল এলাকার মানুষ আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। তাদের মধ্যে নারী ও শিশুর সংখ্যা বেশি। অনেকেই গবাদিপশুও নিয়ে এসেছেন। অনেকেই অভিযোগ করেছেন, বেলা ১২টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কারও কপালে খাবার জুটেনি। তবে কক্সবাজার পৌরসভার ভারপ্রাপ্ত মেয়র সালাউদ্দিন সেতু বলেন, পৌরসভা ২৩টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে। সেখানে ৬ হাজার মানুষের জন্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা ছিল।

কক্সবাজারের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আবদুল হান্নান বলেন, রোববার (গতকাল) সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত ২০ মি. মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড় রেমাল ইতোমধ্যে উপকূলীয় এলাকায় আঘাত হেনেছে। তবে কক্সবাজার বিপদমুক্ত ছিল।

পূর্ববর্তী নিবন্ধনির্বাচনের দিন কেইপিজেড বন্ধের সিদ্ধান্ত এখনো হয়নি
পরবর্তী নিবন্ধবান্দরবানে পাহাড় ধসের শঙ্কা ঝুঁকিপূর্ণ বসতি ছাড়তে মাইকিং