উচ্চমূল্যে বিক্রির আশায় সড়কের পাশে ৩শ হেক্টর পতিত জমি

পটিয়ায় সেচের পানির অভাবে পড়ে রয়েছে আরও ৬শ হেক্টর

পটিয়া প্রতিনিধি | শুক্রবার , ২১ অক্টোবর, ২০২২ at ৬:১০ পূর্বাহ্ণ

কখন রাস্তার দুপাশ বড় হবে, সরকার জমি অধিগ্রহণ করবে, ভূমি মালিক পাবে উচ্চমূল্য- এ আশায় পটিয়ায় মহাসড়কের দু’পাশে অনাবাদী হিসেবে ফেলে রাখা হয়েছে ৩শ হেক্টর আবাদযোগ্য জমি। মহাসড়কের পটিয়ার দক্ষিণ সীমানা খরনা থেকে পশ্চিমে কুসুমপুরা ইউনিয়নের ভেল্লাপাড়া পর্যন্ত এবং বাইপাস সড়কের দুপাশে এসব অনাবাদী জমি পড়ে রয়েছে। পড়ে থাকা এসব অনাবাদী জমির ৯৮ শতাংশের মালিকানা আবার উচ্চবিত্ত ও বিভিন্ন শিল্প মালিক। তাদের চাষবাসের কোনো গরজ নেই। দাম বাড়লে বিক্রি বা ভবিষ্যতে শিল্পপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলাই তাদের একমাত্র লক্ষ্য।

স্থানীয়দের অভিযোগ, কৃষকদের কাছে মালিকানা না থাকায় এসব জমিতে হয় না বোরো বা আমন চাষ। বছরের পর বছর পড়ে রয়েছে অনাবাদী হিসেবে। অথচ এসব জমি আবাদ করলে প্রতিবছর শত শত টন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা সম্ভব হত। তাদের অভিমত, পটিয়ার বাইপাস সড়কের দুই পাশে ওয়াসা, বাংলাদেশ পাওয়ার ডেভেলপমেন্ট (পিডিবি) বোর্ডসহ বিভিন্ন শিল্পজোন গড়ে উঠায় দিনদিন বাড়ছে জমির দাম। উচ্চ মূল্যে জমি বিক্রির ঠিক এ অপেক্ষাতেই যেন রয়েছেন মালিকরা। বছরের পর বছর ধরে পড়ে থাকা অনাবাদী এসব জায়গা এখন এক প্রকার চারণভূমিতে পরিণত হয়েছে।

এদিকে উপজেলার আশিয়া, ছনহরা, জিরি, কাশিয়াইশ, শোভনদন্ডী, ধলঘাট, জঙ্গলখাইন ও কোলগাঁও ইউনিয়নে অনাবাদী পড়ে রয়েছে ৬শ হেক্টর জমি। জলাবদ্ধতা ও সেচের পানির অভাবে এসব জমি পরিণত হয়েছে স্থায়ী পতিত জমিতে। পটিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, পটিয়ায় মোট আবাদি জমির পরিমাণ ১৪ হাজার ১১৫ হেক্টর। দীর্ঘদিন ধরে উপজেলার পৌর এলাকা, কেলিশহর, জঙ্গলখাইন, শোভনদন্ডীসহ বিভিন্ন এলাকায় ১ হাজার ২১ হেক্টর অনাবাদী জমি ছিল। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের পরিকল্পিত উদ্যোগের ফলে গত দুই বছরেই ৪৫০ হেক্টর জমি চাষাবাদের আওতায় এসেছে। এসব জমির মধ্যে ধান চাষ, অপেক্ষাকৃত নিচু জমিতে কচু চাষ এবং অন্যান্য কৃষি জমিতে সবজি চাষ করা হচ্ছে। এদিকে কৃষকদের বিশেষ সহায়তা ও অনাবাদী জমিকে চাষের আওতায় আনতে জাতীয় সংসদের হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি স্থানীয় কৃষকদের জন্য ধান কাটা ও মাড়াইয়ের জন্য ভর্তুকি দিয়ে হারভেস্টর মেশিন সহায়তা দিয়েছেন। এছাড়া উপজেলা কৃষি অফিসের সহায়তায় বিএডিসির ট্রাক্টর দিয়ে কৃষকদের অনাবাদী জমিতে চাষের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে।

কয়েকজন কৃষকের সাথে কথা বলে জানা যায়, বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতা ও সেচের পানির অভাবে অনেক জায়গায় চাষাবাদ হচ্ছে না। তাছাড়া শ্রমিকের মজুরি ও চাষাবাদ ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় জমির মালিকরা চাষাবাদে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে বলেও জানান তারা। এছাড়াও পটিয়ার বড়লিয়া এলাকায় বেশ কয়েকটি খাল ভরাট হয়ে ও কচুরিপানায় পানি চলাচল ব্যাহত হওয়ায় পানির অভাবে এ এলাকায় অনেক কৃষি জমি পতিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

জানা গেছে, গত দুই বছর আগে পটিয়া কৃষি অফিসের আয়োজনে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার ও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে অনাবাদী জমিতে চাষাবাদ শুরু করার জন্য হুইপ সামশুল হক চৌধুরী এমপি নির্দেশনা দেন। এরপর উপজেলা কৃষি অফিসার কল্পনা রহমান মাঠ পর্যায়ে জমির জরিপ শুরু করেন। সহকারী কৃষি কর্মকর্তা ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের সহায়তায় মাঠ পর্যায়ের জরিপে অনাবাদী জমির তালিকা করা হয়। অনাবাদী জমির পরিমাণ, জমির প্রকার বা অবস্থান, কৃষি ও কৃষকের সমস্যা, কৃষক এবং জমির মালিকানা সহ নানা সমস্যার বিষয় জরিপে উঠে আসে।

পটিয়া উপজেলা কৃষি অফিসার কল্পনা রহমান জানান, জলাবদ্ধতা, সেচের পানির অভাব ও চাষের অনুপযোগী জমি হওয়ার কারণে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্থায়ী পতিত জমির পরিমাণ ৬০০ হেক্টর। অনাবাদী এসব জমি চাষাবাদের আওতায় আনতে আমরা কৃষকদের উদ্বুদ্ধকরণ, মাঠ সমাবেশ, বিনামূল্যে সার-বীজ বিতরণ ও ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা রেখেছি। এটি আমাদের চলমান একটি প্রক্রিয়া। এর মধ্যে সেচের মেশিন বিতরণ ও জলাবদ্ধতা নিরসনে পানি উন্নয়ন বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। আশাকরি অল্প সময়ের মধ্যে সব অনাবাদী জমি চাষাবাদের আওতায় চলে আসবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅনুমোদনহীন শিশু খাদ্য, ভেজাল প্রসাধনী বিক্রি লাখ টাকা জরিমানা
পরবর্তী নিবন্ধজাল ওয়ারিশ সনদ দিয়ে ফেঁসে গেল প্রতারক, মামলা