প্রাচ্যের রানী খ্যাত চট্টগ্রাম বেড়ানোর জন্য বেশ কিছু স্থান থাকলেও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা এবং উৎসব আনন্দে বিনোদনের জন্য ফয়‘স লেক কমপ্লেক্স অন্যতম বলে বিবেচিত হয়। নানা বয়সী মানুষের জন্য বিনোদন কিংবা দল বেঁধে ঘুরে বেড়ানোর জন্য প্রকৃতি ও আধুনিকতার সমন্বয়ে গড়ে ওঠা এক আধুনিক পর্যটন কেন্দ্র। শুরুতেই এ্যামিউজমেন্ট পার্ক যা বেশ কিছু রাইড নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে। পার্কের উল্লেখযোগ্য রাইডসগুলোর মধ্যে রয়েছে ফেরিস হুইল, বাম্পার কার, ফ্যামিলি রোলার কোস্টার, পাইরেট শীপ, বেবি কেরাওসাল, কফি কাপ, ড্রাই স্লাইড। প্রায় একশ ফুট উঁচু ফেরিস হুইলে উঠলে এক চক্করে দেখা যাবে প্রায় পুরো পার্ক। বাম্পার কার এ চলে খেলনা কার এ চড়ে আরেক জনের কারে ধাক্কা দেয়ার প্রতিযোগিতা। ফ্যামিলি রোলার কোস্টার এক সঙ্গে অনেকে উঠে ঢেউ খেলানো গতিতে দ্রুত এগিয়ে চলে। এর পরেই দেখা মিলবে পাইরেট শীপ এই প্রকাণ্ড আকারের রাইডটি দোলনার মতো দুলতে থাকে। বাচ্চাদের জন্য ‘ফয়‘স লেক এ্যামেউজমেন্ট ওয়াল্ড’ যেন এক স্বপ্নরাজ্য কেন না সাজানো গোছানো এই জায়গাতে ছোট বাচ্চারা ইচ্ছেমতো ছুটোছুটি করতে পারে। ছোটদের আনন্দ বিনোদনের জন্য সব রকম উপকরণ আছে এখানে ছোটদের রাইডগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বেবী–কেরাওসাল, ট্রেন, হ্যাপী জাম্প, দোলনা ইত্যাদি। কফি কাপ রাইডের পাশ দিয়ে সিঁড়ি বেয়ে পাহাড়ে উঠলে দেখা পাওয়া যাবে অনন্য সুন্দর এক পিকনিক স্পট যা ফটো কর্নার নামে পরিচিত। সেখান থেকে যাওয়া যাবে পর্যবেক্ষণ টাওয়ার। আগত দর্শণার্থী এখানে পরিচিত হতে পারবে প্রাণীজগতের সঙ্গে। পাহাড়চূড়ায় রয়েছে টিয়া পাখি, ঈগল পাখি, অজগর, চিতা বাঘ, ভালুক সহ নানা বন্যপ্রাণীর ভাস্কর্য।
পর্যটন টাওয়ার থেকে নেমেই দেখা যাবে পাহাড়ের বুক চিরে চলে যাওয়া জলধারা। লেকের স্বচ্ছ জলরাশিতে খেলা করে পানকৌড়ি, বক, মাছ শিকারে ব্যস্ত থাকা মাছরাঙ্গা। এঁকেবেঁকে চলা লেকের দুপাশে সংরক্ষিত বন আর পাহাড়ে খেলা করে বুনো হরিণ আর খরগোশের দল আর উড়ে বেড়ায় নানা রঙ্গের পাখি। লেকের শেষ প্রান্তে দেখা মিলবে রিসোর্ট যার গা ঘেঁষেই গড়ে তোলা হয়েছে পানির এক রোমাঞ্চকর রাজ্য–সী ওয়ার্ল্ড। ঈদের ছুটিতে সারাদিন জলকেলি উৎসবে মেতে উঠার জন্য রয়েছে আধুনিক সব রাইডস। সী–ওর্য়াল্ডের সবচেয়ে আকর্ষণীয় স্থান ওয়েভ পুল, সাগরের ঢেউয়ের মতো কৃত্রিম ঢেউ খেলা করে। ওয়েভ পুলের সামনের স্টেজে ঈদ উৎসবে দশদিন ব্যাপী পরিবেশিত হয় ডিজে শো। পাশেই ড্যান্সিং জোনে কৃত্রিম বৃষ্টি মন মাতানো মিউজিক আর রঙিন বাতির আলোক ঝর্না। অন্যান্য রাইডগুলো হচ্ছে টিউব স্লাইড, মাল্টি– স্লাইড, প্লে–জোন।
প্রকৃতি ও আধুনিকতার সম্বয়ে লেকের সামনে অনন্য এক স্থাপত্য শৈলীতে গড়ে তোলা হয়েছে ফয়‘স লেক রিসোর্ট ও বাংলো। শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত প্রতিটি কক্ষের সাথে রয়েছে ঝুলন্ত বারান্দা যেখান থেকে উপভোগ করা যাবে লেক ও সবুজ গাছগাছালির সৌন্দর্য। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের রিসোর্টে থেকে ফয়স লেক এর পরিপূর্ণ সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে। শীত, গ্রীষ্ম কিংবা বর্ষা সব সময় আকর্ষণ করে ফয়‘স লেক বাংলো রিসোর্ট। দিনে নানা রঙের পাখি আর রাতে শুধু ঝি–ঝি পোকার ডাক শুনতে পাওয়া যায়, এমন নিরিবিলি পরিবেশ যেন প্রিয়জনদের সাথে সময় কাটানের জন্য অনন্য এক স্থান।
লেকের পাড় বেয়ে উপড়ে উঠলেই বেইস ক্যাম্পের মূল ফটক আর এখানে ভেতরে প্রবেশ করে পাহাড়ী পথে সিড়ি পেরিয়ে জিপালাইনের কাঠামো, এখান থেকেই তারে ঝুলে শূন্যে ভেসে এক পাহাড় থেকে অন্য পাহাড়ে যাওয়ার ব্যবস্থা। জিপলাইনের চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে পাহাড়ী পথ বেয়ে উঠলেই ট্রিটপ এ্যাডভেঞ্চার যেখানে দশটি ধাপের নানারকম এ্যাডভেঞ্চারমূলক কার্যক্রম। বিভিন্ন ধাপের নিচে পাহাড়ি ঢল আর উপড়ে এক গাছ থেকে অন্য গাছে যেতে হয় হবে কাঠের পাটাতন টায়ার, সরু ব্রিজ, মাকড়সার জালের মতো জাল ধরে চলাচল, বাকা ত্যাড়া নানা নকশার ছোট ছোট সেতু। আরেক রোমাঞ্চকর অনুভূতি হবে জায়ান্ট সুইং–এ। প্রকাণ্ড এক লৌহ কাঠামোতে শূন্যে ভেসে দোলার অনুভূতি নিয়ে শিহরণ জাগাবে। পাহাড়ের পাদদেশে সাপের মতো আঁকা বাঁকা হ্রদ ভ্রমণে কায়া কিং উপভোগের দারুণ এক সুযোগ। বাচ্চাদের জন্য রয়েছে চিলড্রেন অক্টিভিটিস এক এলাকা। ভ্রমণের পরিপূর্ণতা দিতে সান্ধ্যকালীন পুরো ক্যাম্প জুড়ে নাইটসাফারীর ব্যবস্থা। ফয়স লেক বেইস ক্যাম্পে ভ্রমণ আরো রোমাঞ্চকর করতে খোলা আকাশের নিচে তাবু টাঙ্গিয়ে রাত কাটানোর সু–ব্যবস্থা। প্রাতঃরাশ থেকে শুরু করে দুপুর ও বিকেলের খাবার সহ বার–বি–কিউ–এর আয়োজন। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য, নিরাপত্তা, আতিথেয়তার সকল সুযোগ সুবিধা মিলে ফয়সলেক বেইস ক্যাম্প দেশের পর্যটনে এক বিশেষ মাইলফলক।