ঈদের পর কঠোর বিধিনিষেধ

১৪ দিন বন্ধ থাকবে সব অফিস-গণপরিবহন, শিল্প কারখানা আজ মধ্যরাত থেকে ৮ দিন লকডাউন নেই

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ১৪ জুলাই, ২০২১ at ১০:২১ পূর্বাহ্ণ

দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ আর মৃত্যুতে যখন নিত্যনতুন রেকর্ড হচ্ছে, তখন ঈদ উদযাপনে ৮ দিনের জন্য লকডাউনের সব বিধিনিষেধ স্থগিত রাখল সরকার। গতকাল মঙ্গলবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই সকাল ৬টা পর্যন্ত সকল বিধিনিষেধ শিথিল করা হলো।
পবিত্র ঈদুল আজহা উদযাপন, জনসাধারণের যাতায়াত, ঈদ পূর্ববর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা, দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা এবং অর্থনৈতিক কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার স্বার্থে এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে। তবে এই সময়েও জনগণকে সব অবস্থায় সতর্ক থাকতে, মাস্ক পরাসহ স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে বলেছে সরকার। ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আগের বিধিনিষেধগুলো আবারও কার্যকর হবে বলে প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়েছে। চলমান এই ‘কঠোর’ লকডাউনের বিধিনিষেধের মেয়াদ আজ মধ্যরাতে শেষ হচ্ছে। খবর বিডিনিউজের।
২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট বিধিনিষেধে পুরনো শর্তগুলোর সঙ্গে নতুন দুটো বিধিনিষেধ যোগ হবে। অফিস বন্ধ থাকলেও সরকারি কর্মচারীরা দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি সারবেন এবং সব ধরনের শিল্প কারখানাও তখন বন্ধ থাকবে। গত বছর ৮ মার্চ দেশে করোনা মহামারী শুরুর পর এ বছর দ্বিতীয়বারের মতো ঈদুল আযহা আসছে বাংলাদেশে। লকডাউন শিথিল হলে দূরপাল্লার চলাচলে কোনো বাধা থাকবে না। ১৭ জুলাই থেকে কোরবানির পশুর হাট বসবে ঢাকায়। গত বছর কোরবানির ঈদের পরপরই সংক্রমণ বেড়ে গিয়েছিল। তখন পরিস্থিতির অবনতির জন্য প্রধানত মানুষের চলাচলকেই দায়ী করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তার সঙ্গে সামাজিক দূরত্ব বিধি ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা তো ছিলই। এবারের মহামারী পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে বহু গুণে নাজুক। করোনার অতি সংক্রামক ডেল্টা ধরনের বিস্তারে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা হু হু করে বাড়ছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন রোববার এক ভার্চ্যুয়াল বুলেটিনে বলেছিলেন, লকডাউনেও সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে না আসায় আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে মহামারী পরিস্থিতি করুণ হয়ে উঠতে পারে। সেই আশঙ্কার মধ্যেই লকডাউন শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হলো।
বন্ধ থাকবে শিল্প কারখানা
কোরবানির ঈদের পর দেশে যখন আবার লকডাউনের কঠোর বিধিনিষেধ ফিরবে, তখন সব অফিস আদালতের মতো শিল্প কারখানাও বন্ধ থাকবে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ গতকাল এক প্রজ্ঞাপনে জানিয়েছে, ঈদের ছুটির পর ২৩ জুলাই সকাল ৬টা থেকে ৫ আগস্ট মধ্যরাত পর্যন্ত আগের বিধিনিষেধগুলো আবারও কার্যকর হবে।
২৩ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট আবার পুরনো বিধিনিষেধ কার্যকর হবে এবং সে সময় পুরনো শর্তগুলোর সঙ্গে নতুন দুটো বিধিনিষেধ যোগ হবে। অফিস বন্ধ থাকলেও সরকারি কর্মচারীরা দাপ্তরিক কাজ ভার্চুয়ালি সারবেন এবং সব ধরনের শিল্প কারখানাও তখন বন্ধ থাকবে। এতদিন অফিস আদালত বন্ধ রাখা হলেও অর্থনীতির চাকা সচল রাখার স্বার্থে শিল্প কারখানা খোলা রাখার অনুমতি দেওয়া হয়েছিল।
এছাড়া দুই ঘণ্টা সময় কমিয়ে কাঁচাবাজার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে তখন, যা এতদিন বিকাল ৫টা পর্যন্ত ছিল। বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেওয়ার কথা বলা হয়েছে প্রজ্ঞাপনে।
যা কিছু বন্ধ
১. সকল সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি অফিস বন্ধ থাকবে। তবে সরকারি কর্মচারীরা নিজ নিজ কর্মস্থলের এলাকায় অবস্থান করবেন এবং দাপ্তরিক কাজ ভার্চ্যুয়ালি সম্পন্ন করবেন। ২. সকল প্রকার শিল্প কারখানা বন্ধ থাকবে, যা এতদিন লকডাউনের মধ্যে খোলা রাখার অনুমতি ছিল।
৩. সড়ক, রেল ও নৌপথে গণপরিবহন (অভ্যন্তরীণ বিমানসহ) সকল প্রকার যন্ত্র চালিত যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকবে। ৪. শপিং মল/মার্কেটসহ সকল দোকানপাট বন্ধ থাকবে। ৫. সকল পর্যটনকেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র বন্ধ থাকবে। ৬. জনসমাবেশ হয় এই ধরনের সামাজিক (বিবাহোত্তর অনুষ্ঠান, জন্মদিন, পিকনিক পার্টি ইত্যাদি) রাজনৈতিক ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান বন্ধ থাকবে।
যা কিছু খোলা
১. আইন-শৃক্সখলা এবং জরুরি পরিষেবা, যেমন কৃষি পণ্য ও উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি) খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা দেওয়া, রাজস্ব আদায় সম্পর্কিত কার্যাবলী, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, ফায়ার সার্ভিস, টেলিফোন ও ইন্টারনেট (সরকারি-বেসরকারি), গণমাধ্যম (প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া), বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবা, ব্যাংক, ফার্মেসি ও ফার্মাসিউটিক্যালসহ অন্যান্য জরুরি/অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট অফিসের কর্মচারী ও যানবাহন প্রাতিষ্ঠানিক পরিচয়পত্র দেখিয়ে চলাচল করতে পারবে।
২. জরুরি পণ্য পরিবহনে নিযোজিত ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, কার্গো ভেসেল নিষেধাজ্ঞার আওতা বহির্ভূত থাকবে। ৩. সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৩টা পর্যন্ত উন্মুক্ত স্থানে কাঁচাবাজার এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে কেনাবেচা করা যাবে। এতদিন এই সময় ছিল সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা। ৪. খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ সকাল ৮টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত (অনলাইন/টেকওয়ে) খাবার বিক্রি করতে পারবে। ৫. বিমান, সমুদ্র, নৌ ও স্থল বন্দর এবং সংশ্লিষ্ট অফিস নিষেধাজ্ঞার আওতার বাইরে থাকবে।
সাধারণ চলাচল
১. অতি জরুরি প্রয়োজন ছাড়া (ওষুধ ও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়, চিকিৎসাসেবা, মৃতদেহ দাফন/ সৎকার ইত্যাদি) কোনোভাবে বাড়ির বাইরে বের হওয়া যাবে না। নির্দেশ অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
২. তবে যারা করোনাভাইরাসের টিকার তারিখ পেয়েছেন, তারা টিকা কার্ড দেখিয়ে নির্ধারিত দিনে টিকাকেন্দ্রে যাতায়াত করতে পারবেন।
৩. আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চালু থাকবে এবং বিদেশগামী যাত্রীরা তাদের আন্তর্জাতিক ভ্রমণের টিকেট দেখিয়ে গাড়ি ব্যবহার করে যাতায়াত করতে পারবেন।
এছাড়া বিভাগীয়, জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয় খোলা রাখার বিষয়ে অর্থ বিভাগ প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে। বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট আদালতের বিষয়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। ব্যাংকিং সেবা নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রয়োজনীয় নির্দেশনা জারি করবে। স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করে মসজিদে নামাজের বিষয়ে ধর্ম বিষয়ক মন্ত্রণালয় নির্দেশ দেবে।
‘আর্মি ইন এইড টু সিভিল পাওয়ার’ বিধানের আওতায় মাঠ পর্যায়ে কার্যকর টহল নিশ্চিত করার জন্য সশস্ত্র বাহিনী বিভাগ প্রয়োজনীয় সংখ্যক সেনা মোতায়েন করবে। জেলা ম্যাজিস্ট্রেট স্থানীয় সেনা কমান্ডারেরর সাথে যোগাযোগ করে বিষয়টি নিশ্চিত করবেন।
জেলা ম্যাজিস্ট্রেট জেলা পর্যায়ে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নিয়ে সমন্বয় সভা করে সেনাবাহিনী, বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার নিয়োগ ও টহলের অধিক্ষেত্র, পদ্ধতি ও সময় নির্ধারণ করবেন। সেই সঙ্গে স্থানীয় বিশেষ কোনো কার্যক্রমের প্রয়োজন হলে সে বিষয়ে পদক্ষেপ নেবেন। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় বা বিভাগ এ বিষয়ে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবে।
জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় মাঠ পর্যায়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করবে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর মহাপরিচালক তার পক্ষে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষমতা দেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধগণ টিকাদান শুরু, প্রথম দিনে ভিড়
পরবর্তী নিবন্ধ৩২০০ কোটি টাকার পাঁচ নতুন প্রণোদনা