দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর আগামীকাল মঙ্গলবার থেকে ই-অকশন (অনলাইন নিলাম) যুগে প্রবেশ করছে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউস। এর আগে গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পরীক্ষামূলকভাবে ই-অকশন চালু করার উদ্যোগ নেয় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। কিন্তু সফটওয়্যারে শেষ মুহূর্তে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি দেখা দেওয়ায় উদ্বোধন প্রক্রিয়া পিছিয়ে যায়।
এবার ১৬টি লটে ফেব্রিক্স, আয়রন পাইপ এবং রসুনসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে প্রাথমিকভাবে অনলাইন নিলাম অনুষ্ঠিত হবে। বিডাররা (নিলামে অংশগ্রহণকারীরা) www.nbr.gov.bd/ অথবা www.chc.gov.bd/ ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে ই-অকশন ক্যাটাগরিতে নিবন্ধন করে দরপত্র জমা দিতে পারবেন। ইতোমধ্যে ওয়েবসাইটে পণ্যের বিবরণ ও ছবি সংযুক্ত করা হয়েছে। আগামীকাল দুপুর ১২টায় এনবিআরের সদস্য (কাস্টমস অডিট, মডারাইজেশন অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড) খন্দকার মুহাম্মদ আমিনুর রহমানের আনুষ্ঠানিকভাবে নিলাম কার্যক্রম উদ্বোধন করার কথা রয়েছে। দরপত্র জমা দেওয়ার সময়সীমা নির্ধারণ করা হয়েছে দুপুর ১২টা থেকে পরদিন ২৮ অক্টোবর বিকাল ৫টা পর্যন্ত।
কয়েকজন বিডার জানান, বর্তমানে চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসে জব্দ পণ্যের নিলাম প্রক্রিয়া ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে হয়। প্রক্রিয়াটি জটিল এবং সময়সাপেক্ষ। ই-অকশন সেবা পুরোপুরি চালু হলে বিডাররা ঘরে বসে প্রয়োজনে ডকুমেন্ট উপস্থাপন করে নিলামে অংশ নিতে পারবেন। এতে সময় বাঁচবে। একইসাথে পুরো প্রক্রিয়ার মধ্যে স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে।
কাস্টমস কর্মকর্তারা বলছেন, জব্দ পণ্য নিলামে তোলার ক্ষেত্রে কিছু আইনগত প্রক্রিয়া মানতে হয়। বাংলাদেশ কাস্টমস আইনে একটি নীতিমালা রয়েছে। এছাড়া কিছু কিছু পণ্য নিলামে তোলার জন্য বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুমতি (সিপি) নিতে হয়। এতে সময়ক্ষেপণ হয়। ই-অকশন সফটওয়্যারটি চালু হলে পণ্যের তালিকা ও দরপত্রের সবকিছু অনলাইনে দেখা যাবে। নিলামে অংশ নিতে ইচ্ছুকরা কাস্টমস অফিসে না এসে আবেদন করতে পারবেন। এরপর অনলাইনের মাধ্যমে নিলাম প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সর্বোচ্চ দরদাতার নামে পণ্য বরাদ্দ দেওয়া হবে।
তারা জানান, নিলাম কাজ যাতে সহজ ও দ্রুত করা যায়, সেজন্য পুরো প্রক্রিয়াটি অনলাইনে করার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত বছরে কী পরিমাণ পণ্যের নিলাম সম্পন্ন হয়, তার সঠিক পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। পুরাতন পদ্ধতিতে কাগজপত্রের ঝামেলাও বেশি। নিলামে অংশগ্রহণকারীকে কাস্টমসের নিলাম সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন শাখায় দৌড়ঝাঁপ করতে হয়। এতে তাদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। পুরো নিলাম প্রক্রিয়া অনলাইন হয়ে গেলে সেই ভোগান্তি আর থাকবে না।
কাস্টমসে নিয়মিত নিলামে অংশগ্রহণকারী ব্যবসায়ী ফজলুল আমিন আজাদীকে বলেন, ই-অকশন চালু হচ্ছে। এটি আমাদের জন্য স্বস্তির। প্রাথমিকভাবে হয়তো পরীক্ষামূলক চালু হচ্ছে। তবে ভবিষ্যতে এটির সুফল পাবো বলে মনে করি। পুরোপুরি অনলাইন হয়ে গেলে নিলামের গতিও বৃদ্ধি পাবে।
কাস্টম হাউসের উপ-কমিশনার (নিলাম শাখা) মো. ফয়সাল বিন রহমান আজাদীকে বলেন, প্রাথমিকভাবে ১৬টি লট নিয়ে ই-অকশন কার্যক্রমের যাত্রা করছি। যদি কোনো ত্রুটি-বিচ্যুতি থাকে, সেটি সংশোধন করে ভবিষ্যতে বৃহৎ আকারে অনলাইন নিলাম সম্পন্ন করা হবে। নিলাম কাজের গতি বাড়ানোই আমাদের লক্ষ্য। করোনাকালেও আমরা নিয়মিত নিলাম কার্যক্রম চালাচ্ছি।
উল্লেখ্য, আমদানিকৃত পণ্য জাহাজ থেকে বন্দর ইয়ার্ডে নামার ৩০ দিনের মধ্যে সরবরাহ নিতে হয়। এই সময়ের মধ্যে কোনো আমদানিকারক পণ্য সরবরাহ না নিলে তাকে নোটিশ দেয় কাস্টমস। নোটিশ দেওয়ার ১৫ দিনের মধ্যে এই পণ্য সরবরাহ না নিলে তা নিলামে তুলতে পারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। এছাড়া মিথ্যা ঘোষণায় জব্দ পণ্যও নিলামে তোলা যায়। ৪৫ দিনের মধ্যে নিলামে তোলার এই নিয়ম দীর্ঘদিন ধরে কার্যকর করতে পারেনি বন্দর ও কাস্টমস। এতে করে বন্দরের ইয়ার্ডে এসব কন্টেনার পড়ে থাকে। আমদানি পণ্য যথাসময়ে খালাস না নেওয়ায় বন্দরগুলোতে প্রায়ই কন্টেনার জট লাগে। দিনের পর দিন কন্টেনার পড়ে থাকলে বন্দর কর্তৃপক্ষও চার্জ পায় না।