ইসরায়েল ভ্রমণে নিষেধাজ্ঞা বহাল আছে

আমরা ফিলিস্তিনের পক্ষেই সোচ্চার : পররাষ্ট্রমন্ত্রী

| সোমবার , ২৪ মে, ২০২১ at ৬:০০ পূর্বাহ্ণ

পাসপোর্ট থেকে ইসরায়েল প্রসঙ্গ বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে অবিচল থাকার কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের মত তিনিও বলেছেন, পাসপোর্টের ‘আন্তর্জাতিক মান’ রাখতে গিয়েই ওই পরিবর্তন আনা হয়েছে, এর সঙ্গে বাংলাদেশের ইসরায়েল-নীতির কোনো সম্পর্ক নেই। বাংলাদেশ সরকারের দেওয়া সব পাসপোর্টে এতদিন লেখা থাকত- ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড এক্সসেপ্ট ইসরায়েল’। কিন্তু নতুন ইস্যু করা ই পাসপোর্টে এখন লেখা থাকছে ‘দিস পাসপোর্ট ইজ ভ্যালিড ফর অল কান্ট্রিজ অব দ্য ওয়ার্ল্ড’। অর্থাৎ, এই পাসপোর্ট বিশ্বের সব দেশের ক্ষেত্রে বৈধ। গাজায় সামপ্রতিক ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধের মধ্যে বাংলাদেশের পাসপোর্টে এই পরিবর্তনের বিষয়টি নিয়ে গত দুদিন ধরেই আলোচনা চলছে। ইসরায়েলের ক্ষেত্রে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতিতে কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না- সেই প্রশ্নও তোলা হচ্ছে। রোববার সন্ধ্যায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক অনুষ্ঠান শেষে এ বিসয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের মুখোমুখি হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। উত্তরে তিনি বলেন, ‘আমরা ই-পাসপোর্ট চালু করেছি। খুব স্ট্যান্ডার্ড পাসপোর্ট আমরা তৈরি করেছি। প্রায় ছয় মাস আগে আমরা যখন ই-পাসপোর্ট তৈরি করি, তখন ওখানে যে একটা সিল লাগানো হত, অল কান্ট্রিজ এক্সসেপ্ট ইসরায়েল, ওটা ডিলিট করেছি। এটা পাসপোর্টের স্ট্যান্ডার্ডাইজেশনের জন্য। এই ডিলিট ডাজ নট মিন, আমাদের পররাষ্ট্র নীতিতে কোনো পরিবর্তন হয়েছে।’ খবর বিডিনিউজের।
বাংলাদেশের পাসপোর্টে ওই পরিবর্তনের খবরকে স্বাগত জানিয়ে ইসরায়েলের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে উপ পরিচালক রাষ্ট্রদূত গিলাড কোহেন রোববার একটি টুইট করেন। ইসরায়েলের সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনে বাংলাদেশ সরকারকে এগিয়ে আসারও আহ্বান জানানো হয় সেখানে।
এই প্রেক্ষাপটে বিকালে বাংলাদেশের অবস্থান স্পষ্ট করতে একটি বিবৃতি দেয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। সেখানে বলা হয়, ‘বাংলাদেশি পাসপোর্টধারীদের ইসরায়েল ভ্রমণে আগের মতই নিষেধাজ্ঞা আছে। ইসরায়েলের বিষয়ে বাংলাদেশের যে অবস্থান সেখান থেকেও বাংলাদেশ সরে আসেনি।’
আট দশক ধরে মধ্যপ্রাচ্যে জিইয়ে থাকা ফিলিস্তিন-ইসরায়েল দ্বন্‌দ্েব বাংলাদেশ শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের পক্ষে। বাংলাদেশ এখনও ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দেয়নি, ফলে দেশটির সঙ্গে কূটনৈতিক সম্পর্কও নেই। বরং ফিলিস্তিনকে দূতাবাস করতে ঢাকায় জায়গা দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশ সেই নীতিতেই অটল আছে জানিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমরা এখনো ইসরায়েলকে রিকগনাইজ করি নাই এবং প্যালেস্টাইনের স্বপক্ষে এখনো অত্যন্ত সোচ্চার। আমরা বিশ্বাস করি যে, টু-স্টেট সলিউশন, ১৯৬৭ সালের বর্ডার ছিল, আল কুসেন আল শরীফ প্যালেস্টাইনের ক্যাপিটাল হবে। সেটাতে একই অবস্থানে আমরা আছি। সুতরাং ইট ইজ নট এ বিগ ডিল।
পাসপোর্টে পরিবর্তনের কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে তিনি বলেন, পাসপোর্ট একটা আইডেন্টিটি, আইডেন্টিটি একই আছে। শুধু ছোট্ট লেখা ছিল যেগুলো, এগুলো আমরা বাদ দিয়েছি। স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন করার জন্য। আমাদের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, তারা বহু দেশের ই-পাসপোর্ট দেখেছেন, যারা এটা তৈরি করেছেন, তারা দেখিয়েছেনৃ এটা বাদ দিলে আমাদের পররাষ্ট্রনীতিকে খুব একটা প্রভাবিত করবে না।
পাসপোর্টের মান বলতে কি বোঝানো হচ্ছে- এমন প্রশ্নে মোমেন বলেন, অন্যান্য দেশে যেভাবে করে, আমরা সেভাবে করেছি। অন্যান্য দেশের পাসপোর্টের কোথাও এটা লেখা থাকে না। আমাদের দেশে একমাত্র লেখা ছিল, আমরা এজন্য এটা বাদ দিয়েছি। এবং এটা বাদ দেওয়া মানে এটা না যে আপনি ইসরায়েলে যেতে পারবেন। না, সেটা আমরা এখনো অ্যালাউ করব না। ফিলিস্তিনের অধিকার প্রশ্নে বাংলাদেশ নীতি বদলায়নি জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ছয় মাস আগে এই পরিবর্তন হয়েছে। কিন্তু এখন গাজায় সংঘাতের মধ্যে একজন বাঙালি সাংবাদিক এটা ফলাও করে প্রচার করেছে এবং ওরা (ইসরায়েল) এটা পিক করেছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবোয়ালখালীতে কর্ণফুলী নদী থেকে অজ্ঞাত মরদেহ উদ্ধার
পরবর্তী নিবন্ধচট্টগ্রামে প্রস্তুত ৫শ আশ্রয়কেন্দ্র