ইসরায়েলে ইরানের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা

পাল্টা হামলা হলে আরও বড় জবাবের হুঁশিয়ারি তেহরানের প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র

| মঙ্গলবার , ১৬ এপ্রিল, ২০২৪ at ৬:৩০ পূর্বাহ্ণ

শতাধিক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলে হামলা চালিয়েছে ইরান। গত শনিবার রাতে ওই হামলা চালানো হয়। এই প্রথম তেহরান সরাসরি ইরায়েলের ভূখণ্ডে হামলা চালালো। এ হামলার মধ্য দিয়ে গাজা যুদ্ধ মধ্যপ্রাচ্য জুড়ে ছড়িয়ে পড়ার যে শঙ্কা এতদিন করা হচ্ছিল তা হয়তো বাস্তব রূপ নেবে। যুক্তরাষ্ট্র ‘দৃঢ়ভাবে’ ইসরায়েলকে সমর্থন করার প্রতিজ্ঞা করেছে।

ইরান এ অভিযানের নাম দিয়ে ‘ট্রু প্রমিজ’। ইরানের এ হামলার পর লেবানন, জর্ডান ও ইরাক তাদের আকাশ পথ বন্ধ করে দিয়েছিল। আর ইরান ও ইসরায়েল সামরিক উড়োজাহাজ বাদে বাকি সব উড়োজাহাজের জন্য তাদের আকাশপথ সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেয়। খবর বিডিনিউজের।

গাজা যুদ্ধের কারণে কয়েক মাস ধরেই ইসরায়েলের সঙ্গে ইরানের আঞ্চলিক মিত্রদের সংঘাত চলছে। এর মধ্যেই ১ এপ্রিল সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক ইরানি কনস্যুলেটে সম্ভাব্য ইসরায়েলি হামলায় ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের শীর্ষ কয়েকজন কমান্ডার নিহত হন। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে ইসরায়েলে সরাসরি হামলা চালিয়েছে ইরান। তবে কয়েকশ ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে চালানো এই হামলায় ইসরায়েলের ক্ষতি অপেক্ষাকৃত কম হয়েছে। কারণে এসব ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোনের অধিকাংশই যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও জর্ডানের সহায়তায় গুলি করে ধ্বংস করা হয়েছে। ইসরায়েলের দক্ষিণাঞ্চলে বিমান বাহিনীর একটি ঘাঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পরও সেটি স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে পারছে। ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাতে ৭ বছর বয়সী এই ইসরায়েলি শিশু গুরুতর আহত হয়েছে। এছাড়া গুরুতর ক্ষয়ক্ষতির আর কোনো খবর হয়নি বলে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে।

ইরানি হামলার জবাব কী হতে পারে তা নিয়ে ইসরায়েলের মন্ত্রিসভার পরিকল্পিত বৈঠকের আগে দেশটির প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সামাজিক মাধ্যমে বলেছেন, আমরা বাধা দিয়েছি, প্রতিহত করেছি, একসঙ্গে আমরা জিতব। ইসরায়েলের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইওভ গ্যালান্ট বলেছেন, হামলা ব্যর্থ করা হলেও সামরিক অভিযান এখনও শেষ হয়নি আর ‘আমাদের যেকোনো পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে’। ইসরায়েলের চ্যানেল টুয়েলভ টেলিভিশন অনামা এক ইসরায়েলি কর্মকর্তাকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে, ইরানি হামলায় ‘উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়া’ দেখানো হবে।

এদিকে বিশ্ব শক্তি রাশিয়া, চীন ও ফ্রান্স এবং মিশর, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতের মতো আরব দেশগুলো সংযত হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘে নিযুক্ত ইরানের কূটনৈতিক মিশন বলেছে, তাদের পদক্ষেপের লক্ষ্য ছিল ‘ইসরায়েলের অপরাধের’ শাস্তি দেওয়া, কিন্তু এখন তারা ‘বিষয়টি শেষ হয়েছে বলে মনে করেন’। ইরানের সেনা প্রধান মেজর জেনারেল মোহাম্মদ বাঘেরি বলেছেন, ইসরায়েল যদি ইরানের বিরুদ্ধে প্রতিশোধমূলক হামলা চালায় তাহলে আমাদের জবাব আজ রাতের সামরিক পদক্ষেপের চেয়ে অনেক বড় হবে। প্রতিশোধমূলক হামলা চালাতে ইসরায়েলকে যুক্তরাষ্ট্র সাহায্য করলে তাদের ঘাঁটিগুলোও হামলার শিকার হতে পারে বলে ওয়াশিংটনকে সতর্ক করেছেন তিনি।

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ইরানের সামরিক পদক্ষেপকে ‘নির্লজ্জ হামলা’ বলে অভিহিত করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। এই হামলার বিষয়ে কূটনৈতিক প্রতিক্রিয়া সমন্বয় করতে গত রোববার তিনি শীর্ষ অর্থনীতির দেশগুলোর গোষ্ঠী জি৭ এর নেতাদের বৈঠক আহ্বান করবেন বলে বাইডেন জানিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন বলেছেন, আমেরিকা ইরানের সঙ্গে সংঘাত চায় না কিন্তু মার্কিন বাহিনীগুলোকে সুরক্ষা দিতে ও ইসরায়েলের প্রতিরক্ষায় সহায়তা করতে দ্বিধা করবে না। হোয়াইট হাউস ইসরায়েলকে সতর্ক করেছে যে, ইরানের বিরুদ্ধে কোনো প্রতিশোধমূলক হামলায় অংশ নেবে না যুক্তরাষ্ট্র। বাইডেন প্রশাসনের সিনিয়র কর্মকর্তারা এই সতর্কতার কথা জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঈদের ছুটিতে চট্টগ্রামে সড়কে ঝরল ১২ প্রাণ
পরবর্তী নিবন্ধসেবার জগতে অনন্য নজির স্থাপন করেছেন লায়ন রূপম কিশোর বড়ুয়া