ইমরানের রাজনীতির ইনিংস ঝুলছে সুতোয়

বললেন মাথা নত করব না

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ১ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:০৪ পূর্বাহ্ণ

ক্ষমতা ধরে রাখতে হলে ইমরান খানকে ৩৪২ আসনের পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অন্তত ১৭২ জন সদস্যের সমর্থন পেতে হবে। কিন্তু তার বিরোধীরা এরই মধ্যে ১৭৭ জন সদস্যের সমর্থন জড়ো করে ফেলেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের বিরুদ্ধে পার্লামেন্টে যে অনাস্থা প্রস্তাব বিরোধী দলগুলো এনেছে, তার ভোটাভুটি হওয়ার কথা আগামী সোমবার। কিন্তু সামগ্রিক পরিস্থিতিতে সেই ভোটের সম্ভাব্য ফলাফল ইতোমধ্যে স্পষ্ট হয়ে গেছে।
নিজের ভবিষ্যত যখন সুতোয় ঝুলছে, সেই অবস্থায় গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় জাতির উদ্দেশে ভাষণ দিতে এসে ইমরান বলেছেন, দেশ আজ এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে উপনীত হয়েছে। সামনে এখন দুটি পথ আছে। তিনি বলেন, রাজনীতিতে যোগদানের শুরু থেকেই তিনি বলে এসেছেন, কারও কাছে মাথা নত করবেন না। নিজের দেশকেও নত হতে দেবেন না; কারও দাস হতে দেবেন না। তার বক্তব্যের মোদ্দা কথা হল, ‘আস্থা ভোটের ফল যাই হোক, আরও শক্তিশালী হয়ে আমি ফিরে আসব।’ এই কথায় ইমরান কি আপাতত হার মেনে নেওয়ার ইংগিত দিলেন? পাকিস্তানের স্থানীয় গণমাধ্যমে গুঞ্জন আছে, পার্লামেন্টে ভোটের আগে তিনি নিজেই হয়ত সরে দাঁড়াতে পারেন। আর পুরো পরিস্থিতি ফিরিয়ে আনছে পাকিস্তানের সেনা শাসনে ফেরার শঙ্কা।
বিবিসি লিখেছে, ক্রিকেট মাঠ থেকে রাজনীতিতে এসে ছক্কা হাঁকিয়ে ক্ষমতার কেন্দ্রে বসে যাওয়া ইমরান খান তার রাজনৈতিক জীবনের সবচেয়ে সংকটময় সময়টা পার করছেন এখন। বিরোধী দলীয় নেতা শাহবাজ শরীফ গত ২৮ মার্চ পার্লামেন্টে অনাস্থা প্রস্তাব উত্থাপন করেছিলেন। তিন দিন বিরতির পর গতকাল বৃহস্পতিবার সেই প্রস্তাবের ওপর বিতর্ক শুরু হলেও চরম হট্টগোলে কয়েক মিনিটের মধ্যে অধিবেশন রোববার সকাল পর্যন্ত মুলতবি করতে বাধ্য হন স্পিকার।
পাকিস্তান হল সেই দেশ, যেখানে কোনো সরকার পুরো মেয়াদ শেষ করতে পারেনি। ক্রিকেটের মাঠে নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে ওঠা ইমরান খানও এবার রাজনীতির মাঠে কঠিন এক ঘূর্ণিতে কুপোকাত হতে চলেছেন।
ইমরানের জোট সরকারের অন্যতম শরিক দল এমকিউএম বুধবার বিরোধীদের মিছিলে যোগ দিয়েছে। আর এর মধ্য দিয়েই পার্লামেন্টে সংখ্যাগরিষ্ঠতার ১৭২ ভোটের সেই ম্যাজিক নম্বরটি পেয়ে গেছে বিরোধীরা।
দুর্নীতি ঠেকানো ও অর্থনীতিকে ঠিক করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে ২০১৮ সালে ক্ষমতায় আসেন ইমরান খান। কিন্তু কোনো প্রতিশ্রুতিই ঠিকভাবে পূরণ করে উঠতে পারেননি। অনাস্থা ভোটের ঝড়ের সামনে জনসমর্থন বাড়ানোর মরিয়া চেষ্টায় রোববার ইসলামাবাদে বিশাল জনসভা করেন তিনি। সমর্থকদের উদ্দেশে একটি চিঠি দেখিয়ে দাবি করেন, তার বিরুদ্ধে ‘বিদেশি ষড়যন্ত্র’ ও ‘দুর্নীতিবাজ চোরদের’ কারসাজির প্রমাণ সেটা।
ইমরানের প্রধানমন্ত্রী হওয়ার সাধ পূরণ হয়েছিল পাকিস্তানের সামরিক বাহিনীর সমর্থন পাওয়ার মধ্য দিয়ে। এখন সেই সেনাবাহিনীর সঙ্গে তার টানাপড়েন চলছে। আর এ বিষয়টিকে তার বিদায় ঘণ্টা বাজতে শুরু করার বড় কারণ বলে মনে করছেন অনেক বিশ্লেষক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধখুরুস্কুলে ৯শ কোটি টাকায় নির্মিত হচ্ছে বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প
পরবর্তী নিবন্ধমিলবে অত্যাধুনিক ও মানসস্মত চিকিৎসা সেবা