ইভ্যালির সম্পদের চেয়ে দেনা ৬ গুণ বেশি

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন ।। ১ টাকা আয় করতে ব্যয় ৩.৫৭ টাকা

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ২৩ জুন, ২০২১ at ৬:০৩ পূর্বাহ্ণ

অনলাইনভিত্তিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান (ই-কমার্স) ইভ্যালির চলতি সম্পদের পরিমাণ ৬৫ কোটি ১৭ লাখ টাকা। এর বিপরীতে প্রতিষ্ঠানটির দেনার পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪০৩ কোটি ৮০ লাখ টাকা। চলতি সম্পদ দিয়ে ৬ গুণের বেশি এই দেনা পরিশোধ করার সক্ষমতা কোম্পানিটির নেই বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া কোম্পানিটি প্রতি এক টাকা আয়ের জন্য তিন টাকা ৫৭ পয়সা ব্যয় করেছে বলে স্টেটমেন্টে প্রদর্শন করেছে এবং এই অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে সন্তোষজনক কোন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি বলেও প্রতিবেদনে জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অনুরোধে সমপ্রতি ইভ্যালি.কম.বিডি-এর ওপর পরিচালিত কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এক পরিদর্শন প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। গত ১৭ জুন প্রতিবেদনটি বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের ৬ জন কর্মকর্তার একটি দল পাঁচদিন ব্যাপী এই পরিদর্শন কার্যক্রম পরিচালনা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক জানিয়েছে, ইভ্যালির চলতি দায় ও লোকসান দুটিই ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। কোম্পানিটি চলতি দায় ও লোকসানের দুষ্টু চক্রে বাধা পড়ছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, ‘ক্রমাগতভাবে সৃষ্ট দায় নিয়ে প্রতিষ্ঠানটির অস্তিত্ব টিকে না থাকার ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে।’ ক্রয়াদেশ প্রাপ্তির ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে পণ্য সরবরাহে ব্যর্থ হলে কোন কোন ক্ষেত্রে গ্রাহককে তার পরিশোধিত হ্রাসকৃত মূল্যের পরিবর্তে পণ্যটির বাজার মূল্য (যা পরিশোধিত মূল্য অপেক্ষা অধিক) ফেরত দিয়ে তা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচার করে ইভ্যালি। এর ফলে বিপুল সংখ্যক গ্রাহক লোভনীয় মূল্যছাড়ে পণ্য বা পরিশোধিত অর্থ হতে অনেক বেশি অর্থ ফেরত পাওয়ার আশায় ই-ভ্যালির প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে বলে মনে করছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
পণ্যমূল্যের অগ্রিম হিসাবে সাধারণ গ্রাহকের বিপুল অর্থ ব্যবহার করে উচ্চ ডিসকাউন্ট প্রদানের মাধ্যমে ইভ্যালি গ্রাহকের অর্থ ঝুঁকিতে ফেলেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, ইভ্যালি চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত পণ্যমূল্য বাবদ গ্রাহকদের কাছ থেকে অগ্রিম ২১৩ কোটি ৯৪ লাখ টাকা নিয়ে কোনো পণ্য সরবরাহ করেনি। অন্যদিকে তারা যেসব কোম্পানির কাছ থেকে পণ্য কেনে, তাদের কাছে ইভ্যালির বকেয়া ১৮৯ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। সব মিলিয়ে ইভ্যালির চলতি সম্পদ দিয়ে গ্রাহক ও পাওনাদারদের বকেয়া অর্থের মাত্র ১৬ দশমিক ১৪ শতাংশ পরিশোধ করা সম্ভব। বাকি প্রায় ৮৪ শতাংশ বা ৩৩৮ কোটি ৬২ লাখ টাকার সমপরিমাণ দায় অপরিশোধিত থেকে যাবে। ইভ্যালির চলতি সম্পদের স্থিতি দিয়ে শুধু গ্রাহক দায়ের এক-তৃতীয়াংশেরও কম পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
২০২০ সালের জুলাই থেকে চলতি বছরের ১৪ মার্চ পর্যন্ত ইভ্যালির মোট আয় (রেভিনিউ) ২৮ কোটি ৫৪ লাখ টাকা। এ সময়ে কোম্পানিটির বিক্রয় ব্যয় হয়েছে ২০৭ কোটি টাকা। এ তথ্য উল্লেখ করে বাংলাদেশ ব্যাংক বলেছে, কোম্পানিটি প্রতি এক টাকা আয়ের জন্য তিন টাকা ৫৭ পয়সা বিক্রয় ব্যয় করেছে বলে স্টেটমেন্টে দেখিয়েছে এবং এই অস্বাভাবিক ব্যয়ের বিষয়ে সন্তোষজনক কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
গত ২৮ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ইভ্যালির মোট গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৪৪ লাখ ৮৫ হাজার ২৩৪ জন। ক্রয়াদেশ বাতিল, ইভ্যালির দেওয়া ক্যাশব্যাক, বিক্রিত গিফটকার্ডের সমন্বয়ে এ গ্রাহকদের ভার্চুয়াল আইডিতে (অ্যাকাউন্ট, হোল্ডিং, গিফটকার্ড, ক্যাশব্যাক) মোট ৭৩ কোটি ৩৯ লাখ টাকা মূল্যমানের ই-ভ্যালু সংরক্ষিত ছিল। অথচ ওই দিন (২৮ ফেব্রুয়ারি) ইভ্যালি.কম.বিডির ১০টি ব্যাংক হিসাবে জমা ছিল ২.০৪ কোটি টাকা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিদর্শন দলের দেওয়া ইভ্যালির স্টেটমেন্ট অব ফাইন্যান্সিয়াল পজিশনের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৪ মার্চ তারিখে ইভ্যালির মোট দায় (ইক্যুইটি বাদে) অপেক্ষা মোট সম্পদের ঘাটতি ৩১৫.৪৯ কোটি টাকা, চলতি দায় (ইক্যুইটি বাদে) অপেক্ষা চলতি সম্পদের ঘাটতি ৩৪২ কোটি টাকা। অর্থাৎ, ইভ্যালির মোট সম্পদ প্রতিষ্ঠানটির মোট দায়ের মাত্র ২২.৫২ শতাংশ এবং চলতি সম্পদের পরিমাণ চলতি দায়ের মাত্র ১৬.০১ শতাংশ। কোম্পানিটির ১ কোটি টাকার শেয়ার মূলধনের বিপরীতে ২৬.৫১ কোটি টাকার স্থায়ী সম্পদ রয়েছে, কিন্তু কোনো দীর্ঘমেয়াদি দায় নেই।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, লোকসানে পণ্য বিক্রি করার কারণে ইভ্যালি গ্রাহক থেকে অগ্রিম মূল্য নেওয়ার পরও মার্চেন্টদের কাছে তাদের বকেয়া অস্বাভাবিকভাবে বাড়ছে। গ্রাহক ও মার্চেন্টের বকেয়া ক্রমাগত বাড়ার কারণে এক সময় বিপুল সংখ্যক গ্রাহক ও মার্চেন্টের পাওনা অর্থ না পাওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধকারে চড়ে গেলেন ক্রেতা তারপর যা হলো
পরবর্তী নিবন্ধঢাকায় ৭১, চট্টগ্রামে ৫৫ শতাংশ বস্তিবাসীর শরীরে অ্যান্টিবডি