চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি চলছেই। মঙ্গলবার (২৭ এপ্রিল) চমেক ক্যাম্পাসে সংঘটিত দুই গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে বুধবার সকাল থেকেই ইন্টার্ন চিকিৎসকরা কর্মবিরতি পালন শুরু করেন। যা ৩য় দিনের মতো গতকালও পালন করেছেন তারা। চিকিৎসকদের ওপর হামলাকারীদের চিহ্নিত করে ত্বরিৎ ব্যবস্থা নেয়ার দাবিতে এ কর্মবিরতি অব্যাহত থাকবে বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতালের ইন্টার্ন ডক্টরস এসোসিয়েশন (আইডিএ)’র আহ্বায়ক ওসমান গণি। প্রসঙ্গত, কথা কাটাকাটির জের ধরে মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর থেকে চমেক ক্যাম্পাসে ও ছাত্রাবাসে দুই গ্রুপের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া, হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনা ঘটে। এতে দুজন চিকিৎসকসহ বেশ কয়েকজন ছাত্র আহত হন। সংঘর্ষে জড়িত দুই গ্রুপের একটি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী এবং অপর পক্ষ সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এই দুই নেতার অনুসারীদের মাঝে সামপ্রতিক সময়ে আরো বেশ কয়বার সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবারের রাতের ঘটনায় বুধবার দুপুরে সংশ্ল্লিষ্ট সব পক্ষকে নিয়ে বৈঠকে বসে চমেক হাসপাতাল ও কলেজ কর্তৃপক্ষ। বৈঠকে ঘটনা তদন্তে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠনসহ আরো কয়েকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। তবে কর্তৃপক্ষের এসব সিদ্ধান্তের পরও কর্মবিরতি প্রত্যাহার করেননি ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। দায়ীদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা না নেয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন তারা।
এদিকে, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতিতে চিকিৎসা সেবা যাতে ব্যাহত না হয়, সে বিষয়ে তৎপর রয়েছেন বলে জানিয়েছেন চমেক হাসপাতাল পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবীর। যদিও ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতির কারণে হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা কিছুটা হলেও ব্যাহত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন বিভিন্ন বিভাগের সিনিয়র চিকিৎসকরা।
পাল্টাপাল্টি মামলা :
মঙ্গলবারের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পক্ষই পাল্টাপাল্টি মামলা করেছে। বৃহস্পতিবার রাতে পাঁচলাইশ থানায় এ দুটি মামলা দায়ের করা হয়। পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কাশেম ভূঁইয়া মামলা হওয়ার তথ্য আজাদীকে নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ ও সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রথমে চমেক ছাত্রলীগের সভাপতি হাবিবুর রহমান বাদি হয়ে ১৩ জনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাত আরো ৭০-৮০ জনকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। হাবিবুর রহমান সাবেক মেয়র ও মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। তার দায়েরকৃত মামলার আসামিরা সবাই শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত। এক পক্ষের মামলার পর রাতে অপর পক্ষও একটি মামলা দায়ের করেছে। এ মামলার বাদি চমেক ছাত্র রিয়াজুল ইসলাম জয়। তিনি শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের অনুসারী হিসেবে পরিচয় দিয়ে থাকেন। এ মামলায় ১৭ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। আসামিরা সবাই সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
দুই পক্ষের দুটি মামলার তথ্য নিশ্চিত করে পাঁচলাইশ থানার ওসি আবুল কাশেম ভূঁইয়া বলেন, মঙ্গলবার রাতে চমেক ক্যাম্পাসে সংঘর্ষের ঘটনায় দুটি মামলা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।