ইতিহাস গড়ে ফাইনালে ইংল্যান্ড

ভারতকে হারাল ১০ উইকেটে

ক্রীড়া প্রতিবেদক | শুক্রবার , ১১ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৩ পূর্বাহ্ণ

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট দুই দল ছিল ভারত এবং ইংল্যান্ড। শক্তি-সামর্থ্য আর ফর্মের দিক থেকে দুই দলকে আলাদা করা ছিল কঠিন। তাই ক্রিকেট প্রেমীদের আশা ছিল জমজমাট একটি সেমিফাইনাল হবে। বিশেষ করে এই ম্যাচে ভারতের জয় প্রত্যাশা করেছিল সবাই। তার অবশ্য একটি কারণও আছে।
তা হচ্ছে ভারত জিতলে ফাইনাল হবে ভারত এবং পাকিস্তান। আর এই দুই দলের ফাইনাল মানে অন্য রকম এক উত্তেজনা। শুধু তাই নয়, ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল মানে আইসিসিরও পকেট ভর্তি টাকা আসা। কিন্তু ইংল্যান্ড জানিয়ে দিয়েছিল তারা ভারত-পাকিস্তান ফাইনাল দেখতে চায়না। শেষ পর্যন্ত সেটাই হলো। টুর্নামেন্টের দুই সেরা দলের লড়াইটা বারুদের মত হবে তেমনটি প্রত্যাশা করেও হতাশই হতে হয়েছে ক্রিকেট প্রেমীদের। কারণ মাঠের ক্রিকেটে লড়াইটা জমলই না। একেবারে এক তরফা এক ম্যাচে ভারতকে উড়িয়ে দিয়ে টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ফাইনালে পাকিস্তানের সামনে ইংল্যান্ড। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের ইতিহাসে সেমিফাইনালে কোন দল হারল ১০ উইকেটের ব্যবধানে।
তাও ভারতের মত দল। বলা যায় ভারতকে একেবারে উড়িয়ে দিয়েই ফাইনালে গেছে ইংল্যান্ড। অথচ বিরাট কোহলির ফর্মে ফেরা, সুরিয়া কুমার যাদবের মত টর্নেডোর আবির্ভাব, হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটে রান সব মিলিয়ে দারুন ছন্দে ছিল ভারতীয় দল। কিন্তু কে জানতো আসল লড়াইয়ে এসে ছন্দ পতন ঘটবে রোহিত-বিরাটদের। খেলাটি হচ্ছিল অস্ট্রেলিয়াতে। কিন্তু কে বলবে খেলাটি মুম্বাই কিংবা কলকাতায় হচ্ছে না? কারণ এডিলেইড ক্রিকেট স্টেডিয়ামের প্রায় ৪০ হাজার সিট দখলে ছিল ভারতীয় দখলে। ম্যাচের শুরু থেকেই গগনবিধারী আওয়াজে মুখরিত ছিল এডিলেইড স্টেডিয়ামে। কিন্তু সময় গড়ানোর সাথে সাথে হতাশ হয়েই ফিরতে হয় তাদের। কারণ তাদের দল যে দশ উইকেটে হেরে বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিয়েছে। আর ইংল্যান্ড পৌঁছে গেছে স্বপ্নের ফাইনালে। দারুণ বোলিংয়ে ভারতীয়দের রানের পাহাড়ে চড়তে দেননি ইংলিশ বোলাররা। তারপরও ১৬৯ রানের লক্ষ্য অতিক্রম করে গেলেন জস বাটলার এবং আলেক্স হেলস মিলে।
আরো একবার হতাশ হয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে ভারতীয়দের শূন্য হাতে। অথচ বিরাট কোহলি আর হার্দিক পান্ডিয়ার ব্যাটিং আশা জাগিয়েছিল ভারতীয়দের। কিন্তু বাটলার এবং হেলস সে আশাকে গুড়ে বালি করে দিল। ২০১৩ সালের পর এবারেও বিশ্বকাপের শিরোপা জেতা হলো না ভারতীয়দের। টসে হেরে ব্যাট করতে নামা ভারত দ্বিতীয় ওভারেই হারায় লোকেশ রাহুলকে। ওকসের বলে উইকেটের পেছনে বাটলারের হাতে ক্যাচ দিয়ে ফিরেন রাহুল ৫ রান করে।
অধিনায়কের সাথে যোগ দিয়ে ঝড় তোলার আভাস দিতে থাকেন এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে সবচাইতে সফল ব্যাটসম্যান বিরাট কোহলি। কিন্তু দুজনের পথ চলা দ্রুত গতির ছিল না। পাওয়ার প্লেতে মাত্র ১ উইকেট হারালেও রান আসে মাত্র ৩৮। ২৮ বলে ২৭ রান করে ফিরেন রোহিত। ভারতীয় দলের বর্তমান সেনসেশন সুরিয়া কুমার যাদবও পারেননি জ্বলে উঠতে। আদিল রশিদের স্পিনে ১৪ রানেই থামে যাদবের অভিযান। ১০ ওভারে ভারতের রান ছিল ৬২। তবে এরপর বিরাট কোহলির সাথে হার্দিক পান্ডিয়া যোগ দিলে দ্রুত ঘুরতে থাকে রানের চাকা। দুজন মিলে ৪০ বলে ৬১ রান যোগ করেন। ৪০ বলে ৫০ রানের ইনিংস খেলার পথে প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে কোহলি স্পর্শ করেন টি-টোয়েন্টিতে ৪ হাজার রান। এবারের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে চতুর্থ হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন কোহলি। এরপর ঝড় তুলতে থাকেন হার্দিক পান্ডিয়া। ইনিংসের শেষ বলে আউট হওয়ার আগে ৩৩ বলে ৬৩ রান করেন পান্ডিয়া। শেষ বলে হিট আউট না হলে আরো চার রান পেতে পারতেন পান্ডিয়া। তার কল্যাণে শেষ ৫ ওভারে ভারত তোলে ৬২ রান। আর তাতে তাদের স্কোর গিয়ে দাঁড়ায় ১৬৮ রানে।
জবাব দিতে নামা ইংল্যান্ডের পক্ষে দারুণ সূচনা করেন দুই ওপেনার জস বাটলার এবং আলেক্স হেলস। কিন্তু কে জানতো বাটলার ও হেলস ভিনগ্রহের ব্যাটিং করবে। টি-টোয়েন্টি ব্যাটিং কতটা বিধ্বংসী আর কার্যকর হতে পারে সেটা যেন দেখিয়ে দিল এই দুজন। ৪টি চার এবং ৭ টি ছক্কার সাহায্যে ৪৭ বলে ৮৬ রানে অপরাজিত থাকেন হেলস। ৯ টি চার ও ৩ টি ছক্কার সাহায্যে ৪৯ বলে ৮০ রানে অপরাজিত ছিলেন বাটলার। ১৬ ওভারে দুজনের ১৭০ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের সব আসর মিলিয়ে সব উইকেটেই সেরা জুটি। আর ইংলিশদের সর্বোচ্চ রানের উদ্বোধনী জুটি। সব মিলিয়ে দ্বিতীয় সেরা জুটি। তার আগেরটি ছিল ১৮২ রানের। যা করেছিলেন ডেভিড মালান এবং ইয়ন মরগ্যান। ২০১৯ সালে নেপিয়ারে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। অবশ্য সেটা তৃতীয় উইকেটে। বড় বাধা পেরিয়ে ফাইনালে যাওয়া ইংল্যান্ড এখন পাকিস্তানকে হারিয়ে শিরোপা ঘরে তুলতে চায়। মেলবোর্নে শেষ হাসি কার সেটা দেখতে এখন অপেক্ষা।

পূর্ববর্তী নিবন্ধইউক্রেন থেকে এলো সাড়ে ৫২ হাজার টন গম
পরবর্তী নিবন্ধট্রেনে টয়লেটের দরজা খুলতে দেরি, স্টাফদের মধ্যে সংঘর্ষ