নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতিহাস গড়ার সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে। যে দেশটিতে বাংলাদেশ কখনোই জয়তো দূরের কথা ড্র করতে পারেনি। সে নিউজিল্যান্ডের মাটিতে এবার ইতিহাস গড়ার সামনে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশ দল। মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের চতুর্থ দিন শেষে বাংলাদেশ এখন জয়ের স্বপ্ন দেখতেই পারে। টেস্টের টানা তিনদিন একেবারে শতভাগ আধিপত্য বজায় রেখেছে বাংলাদেশ দল। গতকাল চতুর্থ দিনে এবাদত হোসেনের পেস আক্রমণে পুড়ে এখন এক রকম হারের সামনে দাঁড়িয়ে নিউজিল্যান্ড। আর বাংলাদেশ দেখছে ইতিহাস গড়া এক জয়ের স্বপ্ন। ম্যাচের চতুর্থ দিন শেষে দ্বিতীয় ইনিংসে নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১৪৭। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের ১৩০ রানের লিড বাদ দিলে নিউজিল্যান্ডের রান এখন ৫ উইকেটে ১৭। আর তাতেই জয়ের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছে বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ রস টেইলরকে আজ সকালে তুলে নিতে পারলেই বাংলাদেশের ইতিহাস গড়ার রাস্তাটা আরো সহজ হয়ে যাবে। বলা যায় মাউন্ট মঙ্গানুই টেস্টের নিয়ন্ত্রণ এখন বাংলাদেশের হাতে।
দুটি ক্যাচের সঙ্গে একটি রান আউটের সহজ সুযোগ হাতছাড়া না হলে হয়তো স্বপ্নের জয়ের আরো কাছে থাকতো বাংলাদেশ। ধারহীন বোলিংয়ের জন্য যাকে নিয়ে ছিল বেশি সমালোচনা সেই ইবাদত হোসেন চৌধুরী জ্বলে উঠলেন বোলিংয়ে। ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে তিনি বাংলাদেশকে নিয়ে গেলেন এমন এক জায়গায় যেখান থেকে জয় খুব নাগালেই। দুটি সহজ সুযোগ দিয়েও বেঁচে যাওয়া রস টেইলর ১০০ বলে ৩৭ রান করে বাংলাদেশের সামনে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। প্রথম ইনিংসে ১৩০ রানে পিছিয়ে থাকা নিউজিল্যান্ড যখন দ্বিতীয় ইনিংসে তা তুলে নিল তখন তাদের হাতে উইকেট ছিল ৮টি। স্বাগতিকদের রান ছিল এক পর্যায়ে ২ উইকেটে ১৩৬। উইকেটে তখন রস টেইলর এবং উইল ইয়াং। কিন্তু এরপর দুই ওভার মিলিয়ে ৭ বলের মধ্যে ইয়াংসহ ৩ ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন এবাদত। চা-বিরতির আগে ৯ ওভারের টানা স্পেলে ২৩ রান দিয়ে তার উইকেট ছিল ১টি। শেষ সেশনে অসাধারণ এক স্পেলে ৭ ওভারে ১৫ রানে তুলে নেন ৩ উইকেট। সব মিলিয়ে ১৭ ওভারে ৩৯ রানে তার শিকার ৪টি। আগের ১০ টেস্টে তার উইকেট ছিল মাত্র ১১টি। ক্যারিয়ারে এই প্রথম পেলেন চার উইকেট।
দ্বিতীয় ইনিংসে বল করতে নেমে নিউজিল্যান্ডকে সহজে রান তুলতে দেয়নি বাংলাদেশের বোলাররা। দলকে প্রথম সাফল্য এনে দিয়েছিলেন তাসকিন। কিউই অধিনায়ক টম ল্যাথাম ফিরেন বোল্ড হয়ে। আরেক ওপেনার ইয়াং ও প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান ডেভন কনওয়ে ছিলেন সাবধানী। তবে তাদের এগুতে দেননি এবাদত। এবাদতের বলে ডিফেন্স করতে গিয়ে সাদমানের অসাধারণ এক ক্যাচে পরিণত হলেন কনওয়ে। ১৩ রান করেছেন তিনি। মিরাজের বলে ইয়াংয়ের ব্যাটের বাইরের কানা ছুঁয়ে আসা ক্যাচ গ্লাভসে নিতে পারেননি লিটন। সে সময় ৩১ রানে ছিলেন কিউই ওপেনার। রস টেইলরের সাথে ৭৩ রানের দারুণ এক জুটি গড়েন ইয়াং। এবাদতের বলে বোল্ড হয়ে ফিরেন ইয়াং। তবে ফিরে আসার আগে করেন ১৭২ বলে ৬৯ রান। নতুন ব্যাটসম্যান হেনরি নিকোলস প্রথম বলে এলবিডব্লিউর জোরাল আবেদনে বাঁচলেও বিদায় নেন পরের বলেই। দারুণ এক ডেলিভারিতে স্টাম্প এলোমেলো করে দেন এবাদত। নিজের পরের ওভারেই তিনি নেন আরেকটি উইকেট। এবার তার শিকার ব্লান্ডেল। রিভিউ নিয়েও এলবিডব্লিউর হাত থেকে বাঁচতে পারেননি তিনি। নিউজিল্যান্ডের রান তখন ৫ উইকেটে ১৩৬। দিনের বাকি সময়টা নিরাপদে পার করে দেন টেইলর ও রবীন্দ্র। ৩৯ রানে ৪ উইকেট নিয়ে বাংলাদেশের নায়ক এবাদত হোসেন।
এর আগে সকালে আগের দিনের ৬ উইকেটে ৪০১ রান নিয়ে দিন শুরু করা বাংলাদেশ প্রথম ইনিংসে অলআউট হয় ৪৫৮ রানে। গতকাল ২০.২ ওভার খেলে যোগ করতে পারে ৫৭ রান। মিরাজ ফিরেছেন হাফ সেঞ্চুরি থেকে তিন রান দূরে থাকতে। ইয়াসির আলি ফিরেছেন ২৬ রান করে। আজ ম্যাচের শেষ দিনে স্বাগতিকদের সামনে যেমন অপেক্ষা করছে আরও বড় চ্যালেঞ্জ। তেমনি বাংলাদেশের সামনে হাতছানি অভাবনীয় এক জয়ের। এখন দেখার বিষয় সে জয় তুলে নিতে পারে কিনা বাংলাদেশ।