মধ্যপ্রাচ্যের প্রায় সব দেশই কোন না কোন সময় বিশ্বকাপ খেলেছে। কেবল কাতার কখনো খেলেনি। ছোট্ট একটি দেশ হিসেবে কাতার বিশ্বকাপ আয়োজন করে এরই মধ্যে ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। আর সে হিসেবে প্রথমবারের মত বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছে স্বাগতিক কাতার কোন রকম বাছাই পর্ব না খেলেই। তাই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ পাওয়া কাতার নিজেদের বিশ্বকাপ যাত্রাটাকে রাঙাতে চায়। গড়তে চায় ইতিহাস। যদিও প্রতিপক্ষ ইকুয়েডর বিশ্ব্কাপে প্রায় নিয়মিত অতিথি। ২০০২, ২০০৬ ও ২০১৪ সালের পর চতুর্থবারের মত বিশ্বকাপে খেলছে লাতিন আমেরিকার দেশ ইকুয়েডর। তাই অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে শুরুতেই এগিয়ে যেতে চায় দলটি। কাতারের আল-খোরের আল-বায়াত স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় রাত ১০টায় শুরু হবে ম্যাচটি। এর মাধ্যমে পর্দা উঠবে কাতার বিশ্বকাপের।
কাগজে কলমে কাতারের চাইতে বেশ এগিয়ে রয়েছে ইকুয়েডর। যে কারনে ম্যাচটিতে জয়ের সম্ভাবনায়ও এগিয়ে রয়েছে সফরকারীরা। দক্ষিণ আমেরিকান বাছাইপর্বে কঠিন চ্যালেঞ্জ পেরিয়ে ইকুয়েডর চতর্থ স্থান লাভ করেছিল। কিন্তু স্বাগতিক হিসেবে ঘরের মাঠের বাড়তি সুবিধা পুরোপুরি কাজে লাগাতে কাতারও প্রস্তুত। বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে এ পর্যন্ত কোন স্বাগতিক দল পরাজিত হয়নি। ইতিহাস এদিক থেকে কিছুটা হলেও কাতারের পক্ষে কথা বলছে। ১৯৭৮ সালের পর বিশ্বকাপে উদ্বোধনী কোন ম্যাচ গোলশুন্য ভাবে শেষ হয়নি। কাতার এ পর্যন্ত টানা পাঁচ ম্যাচে অপরাজিত রয়েছে। সেপ্টেম্বরে চিলির সাথে ২-২ গোলে করার পর একে একে কাতার হারিয়েছে গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, পানাম ও আলবেনিয়াকে। এসবই কাতারকে বাড়তি আত্মবিশ্বাস যোগাচ্ছে। গত পাঁচ বছর ধরে স্প্যানিশ কোচ ফেলিঙ সানচেজ বাসের অধীনে কাতার নিজেদের ধীরে ধীরে প্রস্তুত করেছে। এত বড় আসরে অতীতে খেলার অভিজ্ঞতা না থাকায় অনেক কিছুতেই তাদের মানিয়ে নেয়াটাও একটি বড় চ্যালেঞ্জ। তাই কাতারের লক্ষ্য স্বাগতিক হিসেবে নিজেদের সেরাটা দিয়ে যতটা সম্ভব সবাইকে আকৃষ্ট করা। সে সাথে ভাল খেলা উপহার দেয়া।
গ্রুপের অপর দুটি দল সেনেগাল ও ২০১০ বিশ্বকাপের ফাইনালিস্ট নেদারল্যান্ডসকে মোকাবেলা করা কাতারের পক্ষে কতটা সম্ভব হবে তা নিয়ে শঙ্কা থেকেই যায়। তবে কাতার ভাবছে আপাতত প্রথম ম্যাচটি নিয়ে। যদিও অক্টোবরের চারটি প্রীতি ম্যাচের জয় কাতারকে দারুন আত্মবিশ্বাসী করে তুলেছে। শেষ ম্যাচে আলবেনিয়ার বিপক্ষে একমাত্র গোলটি করেছিলেন তারকা স্ট্রাইকার আলমোয়েজ আলি। দেশের হয়ে এ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ৪২ গোল করেছেন আলি। তাই জয় দিয়ে শুরু করাই মুল লক্ষ্য স্বাগতিক কাতারের। ২০১০ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার মত দ্বিতীয় কোন স্বাগতিক দল হিসেবে গ্রুপ পর্ব থেকে বিদায় নিতে চায়না কাতার। এদিকে আগে তিনবার তিনবার বিশ্বকাপে খেলার অভিজ্ঞতা থেকে ইকুয়েডর প্রথম থেকেই এগিয়ে যেতে চায়। ১৬ বছর আগে তারা শেষ ১৬ তে গিয়েছিল। বাকি দুটি আসরে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছে। বিশ্বকাপের আগে প্রীতি ম্যাচে খেলা পাঁচটি ম্যাচের কোনটিতেই কোন গোল হজম করেনি ইকুয়েডর।
সর্বশেষ ইরাকের বিপক্ষে গোলশূন্য ড্র করেছে। দুই বছর আগে দলের দায়িত্ব পাওয়া আর্জেন্টাইন কোচ গুস্তাভো আলফারোর অধীনে এভাবেই পুরো ইকুয়েডর বিশ্বকাপের আগে আত্মবিশ্বাস বাড়ানোর চেষ্টা করেছে। কাতার এর আগে তিনবার ইকুয়েডরের বিপক্ষে ঘরের মাঠে খেলেছে যার মধ্যে একটিতে জয়, একটি ড্র ও একটি পরাজিত হয়েছে। আলবেনিয়ার বিপক্ষে শেষ প্রীতি ম্যাচে স্ট্রাইকার আহমেদ আয়েলদিন ইনজুরিতে পড়ে ২৬ মিনিটে মাঠ ছাড়েন। এই একটি ইনজুরি ছাড়া আপাতত কোন ঝুঁকি নেই কাতার শিবিরে। যদিও কাতারের মেডিকেল টিম আশ্বস্ত করেছন আয়েলদিনের ইনজুরি ততটা গুরুতর নয়। তাই সব ধরনের সুযোগ সুবধিাকে সাথে নিয়ে কাতার বিশ্বকাপের শুরুটা করতে চায় জয় দিয়ে। গড়তে চায় নতুন ইতিহাস।