রাশিয়ার ইউক্রেন আক্রমণের মাস পূর্তির দিনে বেলজিয়ামের রাজধানী ব্রাসেলসে ইউরোপীয় নেতা ও মিত্রদের সঙ্গে বৈঠকে বসছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যের প্রকাশ দেখাতে বৃহস্পতিবার নেটো, জি৭ ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন, এ সবগুলো জোট বৈঠকে মিলিত হচ্ছে। বাইডেন তিনটি বৈঠকের সবগুলোতেই অংশ নেবেন। ব্রাসেলসে ইইউয়ের কোনো সম্মেলনে এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্রের কোনো প্রেসিডেন্ট যোগ দিয়েছেন। খবর বিডিনিউজের।
ইউরোপে এ সফরে মার্কিন প্রেসিডেন্টের সামনে মোকাবেলা করার মতো বড় চ্যালেঞ্জগুলো কী কী তা নিয়ে বিবিসির পর্যালোচনা তুলে ধরা হল।
১. একতা প্রদর্শন : রাশিয়া ইউক্রেনে আক্রমণ করার পর প্রথমদিকে পরিস্থিতির চাপে ঐকমত্যের ক্ষেত্রে ঐতিহ্যগত বাধাগুলো একপাশে সরিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও এর পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো একযোগে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এসব সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে এ পর্যন্ত মিত্রদের সঙ্গে নিয়ে ধাপে ধাপে এগিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যুদ্ধ যতই এগিয়ে যাচ্ছে মিত্রদের মধ্যে মতবিরোধের সম্ভাবনা ততই বাড়ছে। বাইডেনকে পরিস্থিতি মোকাবেলা করতে হবে। তাকে মিত্রদের বোঝাতে হবে শক্তিশালী নেটো শুধু স্বল্পস্থায়ী পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্যই নয়, এটি নতুন বাস্তবতা মোকাবেলার জন্যও অপরিহার্য।
২. শরণার্থী সংকট : রাশিয়ার আক্রমণের মুখে ইউক্রেনে থেকে ইউরোপমুখি শরণার্থীর যে স্রোত তৈরি হয়েছে তার প্রধান অংশ পোল্যান্ডে গিয়ে আশ্রয় নিচ্ছে। লাখ লাখ শরণার্থীর জন্য সীমান্ত উন্মুক্ত করে দেওয়ায় পোল্যান্ডের ওপর যথেষ্ট চাপ সৃষ্টি হয়েছে। যদি দক্ষতার সঙ্গে এই চাপ সামলানো না যায় তাহলে দেশটিতে অস্থিরতা তৈরি হতে পারে, পাশপাশি অর্থনীতিও অস্থিতিশীল হয়ে উঠতে পারে। পোল্যান্ডকে নির্ভরযোগ্য এক ন্যাটো সদস্য হিসেবে ধরে রাখা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র উদ্বিগ্ন হয়ে আছে।
৩. সামরিক সমাধান : যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনকে অত্যাধুনিক দীর্ঘ পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা দেওয়ার প্রতিশ্রচতি দিয়েছে, কিন্তু বলা যত সহজ তা কার্যকর করা তত সহজ নয়। কারণ এসব অস্ত্র যুক্তরাষ্ট্রের ইউরোপীয় মিত্র দেশগুলোর ভেতর দিয়ে ইউক্রেনে পাঠাতে হবে। আর এ ধরনের বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র দেশটিতে পাঠাতে গেলে ইউক্রেনের প্রতিবেশী ন্যাটোভুক্ত দেশগুলো রাশিয়ার প্রতিক্রিয়ার শিকার হতে পারে, এমন উদ্বেগ আছে।
৪. নিষেধাজ্ঞার রোডম্যাপ : যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের নেতৃত্বে রাশিয়ার বিরচদ্ধে আরোপ করা কঠোর নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও দেশটি ইউক্রেনে পূর্ণ মাত্রার আক্রমণ চালানো থেকে পিছু হটেনি। পশ্চিমা মিত্র দেশগুলো জোর দিয়ে বলছে, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে নিষেধাজ্ঞার যন্ত্রণা বাড়তে থাকবে। কিন্তু তাদের আশ্বাসে সন্তুষ্ট না হয়ে ভিন্ন পথে রাশিয়ার আগ্রাসনের জবাব দেওয়ার জন্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় নেতাদের ওপর চাপ ক্রমেই বেড়ে চলছে।
৫. চীন প্রশ্ন : রাশিয়া থেকে চীনকে দূরে রাখতে এবং সম্ভব হলে মস্কোর নিন্দায় সোচ্চার হওয়ার জন্য রাজি করাতে আমেরিকা ও ইউরোপ, উভয়কেই সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। রাশিয়াকে চীন খোলাখুলি সাহায্য করলে বেইজিংয়ের বিরুদ্ধে যে নিষেধাজ্ঞার হুমকি দেওয়া হয়েছে তা ইতোমধ্যেই দেশটির অর্থনীতির ওপর চাপ ফেলছে। কিন্তু আসন্ন জি২০ অর্থনৈতিক সম্মেলনে রাশিয়ার অংশ নেওয়ার বিষয়ে চীন যেভাবে সমর্থন দিয়েছে তাতে বোঝা গেছে মস্কো থেকে বেইজিংকে দূরে রাখা ততোটা সহজ হবে না।