ইউক্রেন যুদ্ধে বড় বাঁক, কিয়েভে সেনা কমানোর ঘোষণা মস্কোর

শান্তি আলোচনায় তুরস্কের সাফল্য

আজাদী ডেস্ক | বুধবার , ৩০ মার্চ, ২০২২ at ১১:১৫ পূর্বাহ্ণ

সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রজাতন্ত্র বেলারুশে চার দফা বৈঠকেও ‘শান্তির পথ’ খোলেনি এতদিন। কিন্তু তুরস্কে গতকাল মঙ্গলবার রাশিয়া-ইউক্রেনের আলোচনা শুরুর পরেই দেখা গেল নাটকীয় পটপরিবর্তন। যুদ্ধের ৩৪তম দিনে ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং চেরনিহিভ শহর দখলের অভিযানে আপাতত সেনা তৎপরতা কমাতে সম্মত হল ভ্লাদিমির পুতিনের দেশ।
আমেরিকার নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটোর গুরুত্বপূর্ণ সদস্য তুরস্ক। ন্যাটোতে যোগদানের জন্য ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির তৎপরতাকে যুদ্ধের ‘অন্যতম কারণ’ হিসেবে প্রকাশ্যে চিহ্নিত করেছে মস্কো। এই পরিস্থিতিতে কেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেন দখলের অভিযানে সাময়িক ইতি টানতে রাজি হলেন, তার নানা ‘ব্যাখ্যা’ শোনা যাচ্ছে কূটনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মুখে। আর সেই সঙ্গে অনিবার্যভাবে উঠে আসছে তুরস্কের ভূমিকার কথা।
২০২০ সালের শেষে নগোর্নো কারাবাখের দখল ঘিরে আজেরবাইজান-আর্মেনিয়া যুদ্ধের সময় প্রকাশ্যে আজেরবাইজানকে সামরিক সহযোগিতা দেওয়ার ঘোষণা করেছিলেন তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইপ এর্ডোয়ান। যদিও পুতিনের সমর্থন ছিল আর্মেনিয়ার দিকে। দু’মাসের যুদ্ধে আর্মেনিয়া কোণঠাসা হয়ে শান্তির পথে হাঁটতে বাধ্য হয়েছিল।
অনেকের মতে, রাশিয়ার উপর তুরস্কের এই প্রভাবের পিছনে রয়েছে ভৌগলিক অবস্থান। রাশিয়ার দখলে থাকা ক্রাইমিয়ার সেবাস্তিপোল বন্দরের সঙ্গে ইউরোপের জলপথ যোগাযোগের একমাত্র পথ হল কৃষ্ণসাগর হয়ে তুর্কী প্রণালীর মাধ্যমে ভূমধ্যসাগরের সাথে সংযোগ ঘটা এই কৃষ্ণ সাগরের তীরে পূর্ব ইউরোপের এবং ককেশাসের ৭টি দেশ রয়েছে। রাশিয়ার হাতে থাকা এক মাত্র সেবাস্তিপোল বন্দরই উষ্ণ স্রোতের কারণে সারা বছর সচল থাকে। যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে তুর্কি প্রণালী বন্ধ করার জন্য ইতোমধ্যেই তুরস্কের কাছে আবেদন জানিয়েছে ন্যাটোর একাধিক সদস্যরাষ্ট্র। ফলে শঙ্কা ছিল মস্কোর।
তুরস্কের কয়েকটি সংবাদমাধ্যমের দাবি, ডনবাসকে ‘স্বশাসন’ দেওয়ার রুশ প্রস্তাব বিবেচনায় রাজি হয়েছে কিয়েভ। এছাড়া, ২০১৪ সালের যুদ্ধে ইউক্রেনের হাত থেকে বেদখল হওয়া ক্রাইমিয়াকে তাদের দেশের অংশ বলে স্বীকৃতি দেওয়া হোক বলেও দাবি করেছিলেন পুতিন। সে বিষয়েও ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে। আলোচনায় ক্রাইমিয়ার পথে পশ্চিম ইউরোপে রুশ গ্যাস পাইপলাইন বসানোর প্রস্তাব নিয়েও আলোচনা হয়েছে বলে তুরস্ক সরকারের একটি সূত্র জানিয়েছে।
সেনা তৎপরতা কমানোর ঘোষণা : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ এবং চেরনিহিভ থেকে সেনা তৎপরতা কমাচ্ছে রাশিয়া। এমনই জানালেন রাশিয়ার উপ-প্রতিরক্ষা মন্ত্রী। ইস্তানবুলে গতকালের আলোচনার পর এ কথা জানান তিনি।
এই আলোচনায় বেশ কিছু শর্ত দিয়েছে উভয় পক্ষ। রাশিয়ার প্রতিশ্রুতি ইউক্রেনে সামরিক অভিযান নিয়ন্ত্রণ করবে তারা। অন্য দিকে, ইউক্রেন স্থিতাবস্থার পক্ষে রাজি হয়েছে। রাশিয়া-ইউক্রেন আলোচনায় সমাধানের সূত্র বেরতেই তেলের দাম ৫ শতাংশের বেশি কমে গিয়েছে। বাজারও চাঙ্গা হয়েছে। এদিকে ইউক্রেন একটি আন্তর্জাতিক চুক্তির আহ্বান জানিয়েছে যার অধীনে অন্যান্য দেশ তার নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পাবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধন্যাটো চাই না, নিরপেক্ষ দেশ হিসেবে সুরক্ষার নিশ্চয়তা চাই : ইউক্রেন
পরবর্তী নিবন্ধআনোয়ারায় র‌্যাবের হাতে অস্ত্রসহ যুবক গ্রেপ্তার