ইউক্রেন বন্দরে ২৯ নাবিকসহ আটকা বাংলাদেশি জাহাজ

আজাদী প্রতিবেদন | সোমবার , ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৫:৪২ পূর্বাহ্ণ

২৯ জন বাংলাদেশী নাবিকসহ ইউক্রেনের বন্দরে আটকা পড়েছে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি নামের একটি জাহাজ। বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের (বিএসসি) মালিকানাধীন জাহাজটি গত ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে ইউক্রেন রয়েছে। তবে জাহাজটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণ খাবার এবং জ্বালানি রয়েছে। জাহাজটি অপেক্ষাকৃত নিরাপদ জোনে থাকার কথা জানিয়ে বিএসসি থেকে বলা হয়েছে, এমভি বাংলার সমৃদ্ধিকে দ্রুত ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হচ্ছে। তবে ইউক্রেনের ওই বন্দরকে ঘিরে কৃষ্ণসাগরের চারদিকে রাশিয়ান বাহিনী মাইন পুঁতে রাখায় জাহাজ চলাচল কঠিন হয়ে উঠেছে। এতে করে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ঠিক কবে নাগাদ বের হতে পারবে তা নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বিপাকে পড়েছে এমভি বাংলার সমৃদ্ধি নামের জাহাজটি। ২৯ জন ক্রু নিয়ে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেনের ওলভিয়া বন্দরে পৌঁছে। ইতালির জন্য সিরামিক তৈরির কাঁচামাল বোঝাই করে ২২ তারিখ জাহাজটি বন্দর ত্যাগের কথা ছিল। কিন্তু ওলভিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের পাইলট না পাওয়ায় জাহাজটি বন্দর ত্যাগ করতে পারেনি। ৬০ নটিক্যাল মাইলের একটি চ্যানেল পাড়ি দিয়ে বলিভিয়া বন্দরে যাতায়ত করতে হয়। যে পথে বিদেশী জাহাজকে বলিভিয়া বন্দর কর্তৃপক্ষের পাইলটই পরিচালনা করেন। জাহাজের ক্যাপ্টেনের পক্ষে এই পথ পাড়ি দেয়া সম্ভব হয় না। ২৩ ফেব্রুয়ারি ভোর থেকে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় জাহাজটি আর বন্দরের বাইরে আসতে পারেনি। এই অবস্থায় জাহাজটি বন্দরে অন্যান্য জাহাজের সাথে আটকা পড়ে রয়েছে।
সূত্র বলেছে, বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের মালিকানাধীন জাহাজটি ডেনমার্কের ডেল্টা শিপিং নামের একটি কোম্পানি ভাড়া নিয়ে (চার্টার) পরিচালনা করে। সিংগাপুরে এই কোম্পানির অফিস রয়েছে। ডেল্টা শিপিং কর্তৃক পরিচালিত বিএসসির বাল্ক কার্গোবাহী জাহাজটি গত ২৬ জানুয়ারি ভারতের মুম্বাই বন্দর থেকে যাত্রা করে সুয়েজ খাল হয়ে ১৪ ফেব্রুয়ারি তুরস্কের এরগলি বন্দরে পৌঁছে। ওখান থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি জাহাজটি ইউক্রেনের ওলিভিয়া বন্দরে গিয়ে আটকা পড়ে।
জাহাজের ক্যাপ্টেনসহ সংশ্লিষ্টদের উদ্বৃতি দিয়ে বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনের নির্বাহী পরিচালক (বাণিজ্য) ড. পীযূষ দত্ত দৈনিক আজাদীকে বলেন, জাহাজটি নিরাপদে আছে। নিরাপদ জোনেই আছে। জাহাজটির ২৯জন বাংলাদেশী নাবিকের সকলেই সুস্থ এবং জাহাজে রয়েছেন। তাদের ৪০ দিনের খাবার এবং পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে। আমরা নিরাপদে জাহাজটিকে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সাথে যোগাযোগ করেছি।
সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইউক্রেনের বলিভিয়া বন্দর সংলগ্ন কৃষ্ণসাগরে মাইন ছড়িয়ে রেখেছে রাশিয়ার বাহিনী। চারপাশে যুদ্ধজাহাজের ছড়াছড়ি। এ অবস্থায় এমভি বাংলার সমৃদ্ধিকে বের করে আনা আদৌ সম্ভব নয়। ইউক্রেন রাশিয়া পরিস্থিতির উন্নতি এবং সাগর থেকে মাইন সরানো না হলে ওই এলাকা দিয়ে জাহাজ বের করে আনা সম্ভব হবে না। এতে করে ঠিক কতদিনের জন্য এমভি বাংলার সমৃদ্ধি ইউক্রেনে আটকা পড়লো তাও অনিশ্চিত বলে সূত্র মন্তব্য করেছে। অবশ্য ড. পিযুয দত্ত বলেন, ওখানে শুধু এমভি বাংলার সমৃদ্ধিই নয়, আরো অনেকগুলো জাহাজ আটকা পড়েছে। জাহাজগুলোকে নিরাপদে বের করে আনার একটি পন্থা নিশ্চয় বের করা হবে।
উল্লেখ্য, এমভি বাংলার সমৃদ্ধি জাহাজটি চীন থেকে কেনা। ২০১৮ সালের অক্টোবর থেকে জাহাজটি বাংলাদেশ শিপিং কর্পোরেশনের বহরে অন্তর্ভুক্ত হয়। বিপিসি জাহাজটিকে নাবিকসহ ভাড়া দিয়েছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবিয়ে ঠিক, প্রেমিকাকে খুন করে প্রেমিকের আত্মহত্যা
পরবর্তী নিবন্ধশিশু-কিশোরদের সামনে প্রকৃত ইতিহাস তুলে ধরতে হবে : প্রধানমন্ত্রী