ইউক্রেনে অস্ত্র পাঠানো নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে রাশিয়ার হুঁশিয়ারি

‘যুদ্ধে আড়াই থেকে ৩ হাজার সেনা নিহত হয়েছে’

| রবিবার , ১৭ এপ্রিল, ২০২২ at ১০:৫৬ পূর্বাহ্ণ

রাশিয়ার ভূখণ্ডে আঘাত হানার মতো অত্যাধুনিক অস্ত্র ইউক্রেনে না পাঠানোর জন্য ওয়াশিংটনের প্রতি দাবি জানিয়েছে মস্কো, অন্যথায় অনির্দিষ্ট অপ্রত্যাশিত পরিণতির ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে বলে সতর্ক করেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেছেন, রাশিয়ার সঙ্গে সাত সপ্তাহের যুদ্ধে তার দেশের আড়াই থেকে ৩ হাজার সেনা নিহত এবং প্রায় ১০ হাজার আহত হয়েছে। এই সময়ে কতো বেসামরিক নিহত হয়েছে তার কোনো হিসাব নেই বলে শুক্রবার সিএনএনকে জানিয়েছেন তিনি। এখন আট সপ্তাহে পড়া যুদ্ধে রাশিয়ার ১৯ হাজার থেকে ২০ হাজার সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছেন জেলেনস্কি। খবর বিডিনিউজের।
রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, এই স্টাফ সদস্যদেরকে যত দ্রুত সম্ভব রাশিয়া ফেডারেশন ছেড়ে চলে যেতে হবে। রাশিয়ার এই সিদ্ধান্তকে অন্যায় বলে নিন্দা করে ইইউ বলেছে, রাশিয়া কর্তৃপক্ষের নেওয়া শুক্রবারের এই সিদ্ধান্তের কোনও ভিত্তি নেই। পুরোপুরিভাবে পাল্টা জবাব দিতেই এমন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। বিবিসি জানায়, ইইউ দেশগুলো থেকে গত মাসে কয়েক ডজন রুশ কূটনীতিককে বহিস্কার করা হয়েছে।
গত মার্চ মাসের শেষে আয়ারল্যান্ড, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস এবং চেক রিপাবলিক সমন্বিতভাবে একটি নির্দেশ দিয়ে মোট ৪৩ জন রুশ দূতাবাস কর্মীকে গুপ্তচরবৃত্তির সন্দেহে বহিস্কার করেছে।
চলতি সপ্তাহে আনুষ্ঠানিক একটি কূটনৈতিক প্রতিবাদসহ বাইডেন প্রশাসনের কাছে ধারাবাহিক কয়েকটি সতর্ক বার্তা পাঠিয়েছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্রের দুই প্রশাসনিক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, দিমাশ নামে পরিচিত ওই কূটনৈতিক নোটটি নিয়মিত চ্যানেলের মাধ্যমেই পাঠানো হয়েছে, তবে তাতে প্রেসিডেন্ট ভ্‌লাদিমির পুতিন বা রাশিয়ার অন্য কোনো উর্ধ্বতন কর্মকর্তার স্বাক্ষর নেই। ওই কর্মকর্তাদের একজন জানিয়েছেন, এতে শীর্ষ কর্মকর্তাদের কারও স্বাক্ষর না থাকলেও এ থেকে এমন ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র যেসব অস্ত্র পাঠিয়েছে তা (যুদ্ধে) প্রভাব ফেলেছে।
রাশিয়ার ওয়াশিংটন দূতাবাস ওই দিমাশ দেওয়ার পরদিন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেনের জন্য আরও ৮০ কোটি ডলার অস্ত্র সহায়তার ঘোষণা দেন। অত্যাধুনিক আক্রমণাত্মক এসব অস্ত্রের সরবরাহ নিয়ে রুশরা উদ্বিগ্ন, সতর্কবার্তাগুলো থেকে এমন ধারণা পাওয়া গেছে। মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাশিয়া প্রকাশ্যে যেসব হুমকি দিয়েছে ওই নোটের সুরেও তার ছাপ আছে। এতে ইউক্রেনের ভূখণ্ডে অস্ত্রের চালান ঢোকার পর সেগুলোকে লক্ষ্যস্থল করা হতে পারে বলে সতর্ক করা হয়েছে।
অস্ত্রের চালান চূড়ান্ত পর্যায়ে ইউক্রেনের সেনাদের হাতে পড়ার আগে ন্যাটোভুক্ত দেশের ভূখণ্ডে থাকাকালেই সেগুলোকে লক্ষ্যস্থল করা হবে বা অন্তর্ঘাত চালানো হবে কি না, অপ্রত্যাশিত পরিণতির মধ্যে তাও অন্তর্ভূক্ত কি না-সেগুলো পর্যালোচনা করে দেখা হচ্ছে। ওয়াশিংটন পোস্ট প্রতিবাদ জানিয়ে পাঠানো নোট নিয়ে প্রথম প্রতিবেদন করেছে। গেল সপ্তাহে বাইডেন ইউক্রেনকে যেসব অস্ত্র দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছেন সেগুলোর মধ্যে দীর্ঘ পাল্লার কামানও রয়েছে। সামনের দিনগুলোতে রাশিয়া ইউক্রেনের দনবাস অঞ্চলে নতুন করে আক্রমণ শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। তখন যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া ওই কামানগুলো দনবাসের খোলা প্রান্তরে ভিন্ন ধরনের এক যুদ্ধের সূচনা করবে বলে বিশ্বাস মার্কিন কর্মকর্তাদের।
গত মাসে মস্কো জানিয়েছিল, ইউক্রেনের যুদ্ধে ১৩৫১ জন রুশ সেনা নিহত ও ৩৮২৫ জন সেনা আহত হয়েছে। দুপক্ষের জানানো এসব সংখ্যার কোনোটিই তারা স্বতন্ত্রভাবে যাচাই করে দেখতে পারেনি বলে জানিয়েছে। ইউক্রেন জানিয়েছে, মারিউপোলে তারা রাশিয়ার অবরোধ ভাঙার চেষ্টা করছে। এ পরিস্থিতিতে দেশটির দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় বন্দরনগরীটিতে লড়াই আরও তীব্র হয়ে উঠেছে।
রাশিয়ার আক্রমণ শুরু হওয়ার আগে মারিউপোলে ৪ লাখ লোক বসবাস করলেও শহরটি এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। অবরুদ্ধ শহরটিতে কয়েক হাজার বেসামরিক নিহত এবং লাখখানেক বাসিন্দা আটকা পড়ে আছে। এক ব্রিফিংয়ে ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আলেকজান্দার মোতুজেনিক বলেন, মারিউপোলের পরিস্থিতি অত্যন্ত জাটিল ও কঠিন। এই মুহূর্তেও লড়াই চলছে। শহরটিতে তাণ্ডব চালাতে রাশিয়ার সেনাবাহিনী ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত ইউনিটগুলোকে মোতায়েন করে চলছে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধপৃথিবীতে ফিরেছেন চীনের তিন নভোচারী
পরবর্তী নিবন্ধসীতাকুণ্ডে ট্রেনে কাটা পড়ে প্রাণ গেল যুবকের