নগরীর ইপিজেড এলাকায় শিশু আয়াতকে অপহরণ করে হত্যা এবং পরে তাকে ছয় টুকরো করার আত্মস্বীকৃত খুনি আবির আলী এবং তার মা-বাবা ও বোন তদন্ত সংস্থা পিবিআইয়ের হেফাজতে বন্দি। এ অবস্থায় আয়াতের পিতা সোহেল রানাকে হত্যার হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, তবে কি আয়াতের খুনের ঘটনায় আরও কেউ জড়িত ছিল?
হোয়াটসঅ্যাপে একটি নম্বর থেকে এই হুমকি পাওয়ার কথা জানিয়েছেন তিনি। অজ্ঞাত নম্বর থেকে দেওয়া হুমকিতে আয়াতের বাবাকে হত্যার পর ১২ টুকরো করা হবে বলে শাসানো হয়েছে। গতকাল এই অভিযোগ করেন তিনি। এরপর নতুন করে আয়াত হত্যা নিয়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। নতুন করে উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে শোকসন্তপ্ত পরিবারে। হুমকির বিষয়ে আয়াতের বাবা সোহেল রানা বলেন, অপহরণের পর মেয়েকে ছয় টুকরো করে হত্যা করা হয়েছে। এখন আমাকে মেসেজ দিচ্ছে, আমাকে (হুমকি দেওয়া) চিনে রাখ। তোর মেয়েকে ছয় টুকরো করেছি, তোকে ১২ টুকরো করব।
তিনি বলেন, হুমকির এক পর্যায়ে বলছে, সে আয়াতকে মারার জন্য আবিরকে বলেছিল। হত্যার পর আবিরকে পালিয়ে যেতে বলেছিল। হুমকির পর আমরা উৎকণ্ঠার মধ্যে আছি। আয়াতকে হত্যার পেছনে এখানে কোনো চক্র থাকতে পারে। আমি পিবিআইকে বিষয়টি জানিয়েছি। পিবিআই বললে থানায় জিডি করব।
এদিকে আয়াতের বাবাকে নগরীর ইপিজেড থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করার কথা জানিয়েছেন হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই পরিদর্শক মনোজ কুমার দে। তিনি বলেন, হুমকির বিষয়টি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে থানায় জিডি করতে বলেছি। আয়াতের পরিবারকে সব ধরনের আইনি সহায়তা দেওয়ার জন্য আমরা প্রস্তুত আছি। হত্যার পর আয়াতের শরীরের ছয় টুকরো খণ্ডিতাংশের অবশিষ্ট অংশ উদ্ধারের কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।
গত ১৫ নভেম্বর ইডিজেড থানার বন্দরটিলা নয়ারহাট অফিস এলাকার বাসা থেকে নিখোঁজ হয় পাঁচ বছরের শিশু আলীনা ইসলাম আয়াত। তার খোঁজ না পেয়ে থানায় জিডি করে তার বাবা। তদন্তে নেমে ওই এলাকার সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আবির আলী নামে এক যুবককে আটক করা হয়। ওই যুবক আয়াতের পরিবারের সাবেক ভাড়াটিয়া। আয়াত আবিরকে ‘চাচ্চু’ বলে ডাকত।
আবির আলী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে দাবি করে, মুক্তিপণ দাবির জন্যই সে তার বাড়িওয়ালার নাতনিকে অপহরণ করে। মেয়েটি চিৎকার করায় তাকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে। পরদিন ১৬ নভেম্বর সকালে লাশের তিনটি টুকরো আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে বেড়িবাঁধের পর আউটার রিং রোড সংলগ্ন বে টার্মিনাল এলাকায় সাগরে ভাসিয়ে দেয়। ওইদিন রাতে বাকি তিন টুকরো আকমল আলী রোডের শেষ প্রান্তে একটি নালায় স্লুইচ গেটের প্রবেশ মুখে ফেলে দেয় আবির। অভিযানে আয়াতের রক্তমাখা কাপড় ও স্যান্ডেল, মরদেহ টুকরো করার কাজে ব্যবহার করা বঁটি ও অ্যান্টি কাটার উদ্ধার করা হয়।
গত ২৮ নভেম্বর রাতে আবির আলীর পিতা-মাতাকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই। গ্রেপ্তারের পর তাদের আদালতের মাধ্যমে তিন দিনের রিমান্ডে নেয়। এরপর পিবিআইয়ের অভিযানে সাগরপাড়ে আয়াতের খণ্ডিত পা ও মাথার টুকরো উদ্ধার করা হয়।