আয়বর্ধক প্রকল্প বনাম নগরীর নান্দনিক সৌন্দর্য : সিটি মেয়রকে খোলা চিঠি

| শনিবার , ২৬ জুন, ২০২১ at ৬:৫৭ পূর্বাহ্ণ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র তাঁর প্রতিষ্ঠানকে আত্মনির্ভরশীল করার জন্য নানামুখি আয়বর্ধক প্রকল্প নিতে যাচ্ছেন। এটি নিঃসন্দেহে একটি ভালো উদ্যোগ। কিন্তু যে কোন প্রকল্প বাস্তবায়ন এর আগে ভালোভাবে চিন্তা-ভাবনা না করলে কিংবা নগরবিদদের পরামর্শ ব্যতিরেকে কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে তা হিতে বিপরীত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ইতোমধ্যে অনেক প্রকল্পের করুণ পরিণতি নগরবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। সিটি কর্পোরেশন বা সরকারি কোন প্রকল্প বাস্তবায়নকালে দেখা যায় কিছু স্বার্থান্বেষী মহল স্বীয় স্বার্থ সিদ্ধির জন্য মেয়র মহোদয়কে বিভ্রান্তমূলক তথ্য দিয়ে প্রলুব্ধ করে যে অমুক প্রকল্প বাস্তবায়ন করলে সিটি কর্পোরেশন লাভবান হবে। এই সময় মেয়র মহোদয়ের উচিত হবে প্রস্তাবিত প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গেলে নগরবাসীর কোনো অসুবিধা হবে কিনা বা নগরের সৌন্দর্যহানী হবে কিনা। লাভ-ক্ষতির চুলচেরা বিশ্লেষণ করে নগর পরিকল্পনাবিদদের পরামর্শক্রমে হাতে প্রকল্প নেয়া উচিত বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করেন। এখানে একটি বিষয়ে উদাহরণ দেয়া যেতে পারে। এমনিতেই জনবহুল চট্টগ্রাম শহরে খালি জায়গার বড় সংকট। সরকারি-বেসরকারি মালিকানাধীন জায়গাগুলো ইতোমধ্যে দখল হতে হতে এখন খুব একটা খালি জায়গা অবশিষ্ট নেই। এই জন্য নগরে আলো বাতাসের চরম সংকট। বৃক্ষরাজি নিধন করে ইট পাথরের ইমারত নির্মাণ করতে এখানে নি:শ্বাস ফেলার আর জো নেই। সিটি কর্পোরেশনের মালিকানাধীন অবশিষ্ট খালি যে জায়গাগুলো আছে সেখানে কোন বিল্ডিং বা ইমারত নির্মাণ করে করে সেখানে ফুলের বাগান বা উদ্যান করা যেতে পারে। এই শহরে ব্যক্তি মালিকানাধীন মার্কেটের কোনো অভাব নেই। প্রয়োজনের তুলনায় আরো বেশি মার্কেট হয়ে গেছে। অনেক মার্কেট এখন অচল হয়ে গেছে। এই অবস্থায় সিটি কর্পোরেশন যদি সামান্য খালী জায়গায় মার্কেট তৈরি করে তাহলে এর দীর্ঘ মেয়াদী বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেবে। নগরের সৌন্দর্যের অঙ্গহানি হবে। পরিবেশের চরম ক্ষতি হবে। বর্তমান মেয়র সমপ্রতি ঘোষণা দিয়েছেন, তিনি আগামী পঞ্চাশ বছরকে সামনে রেখে নগরীর উন্নয়ন রূপরেখা প্রণয়ন করবেন। এটি খুবই একটি যুগোপযোগী যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। অভিজ্ঞ নগর পরিকল্পনাবিদের পরামর্শক্রমে তিনি যদি তা বাস্তবায়ন করেন তাহলে অবশ্যই এর সুফল নগরবাসী পাবেন। কিন্তু আয় বর্ধক প্রকল্পের নামে যত্রতত্র মার্কেট বা ইমারত নির্মাণের সময় খেয়াল করতে হবে যে এতে ব্যক্তি মালিকানাধীন কারো জায়গা বা বিল্ডিং ক্ষতিগ্রস্ত হবে কি না বা এলাকাবাসী নির্মিতব্য মার্কেটের মাধ্যমে কোন লাভবান হবে কিনা? তা প্রয়োজনে এলাকার সুশীল সমাজের সাথে আলাপ-আলোচনা করা দরকার। মনে রাখতে হবে যে সিটি কর্পোরেশন কোন বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান নয়। নগরবাসীর সেবাই সিটি কর্পোরেশনের অন্যতম কাজ।

মুহম্মদ নুরুল আবসার
সম্পাদক-মাসিক আন্দরকিল্লা, মোমিন রোড, চট্টগ্রাম

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাহানারা ইমাম : জ্যোতির্ময় মনীষা
পরবর্তী নিবন্ধজীবন বাঁচাতে মাদক সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জানুন