আহলে বায়তের মহব্বত না থাকলে সে অন্তর মরুভূমি

শাহাদাতে কারবালা মাহফিলের সমাপনীতে ধর্ম উপদেষ্টা

| মঙ্গলবার , ৮ জুলাই, ২০২৫ at ৮:১৫ পূর্বাহ্ণ

সাম্য, সুবিচার, মানবিক মর্যাদা সমুন্নত করে অবক্ষয় ও অপরাধমুক্ত ইনসাফভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠায় রাষ্ট্রকে এগিয়ে আসার এবং এজন্য সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানানোর মধ্য দিয়ে জমিয়তুল ফালাহ মসজিদে ৪০তম ১০ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক শাহাদাতে কারবালা মাহফিল শেষ হয়েছে। মাহফিলে বক্তারা নবী দৌহিত্র হযরত ইমাম হোসাইনের (রা) ত্যাগ, বীরত্ব ও সাহসিকতার আদর্শ ধারণ করে যুবসমাজের উজ্জীবন এবং যুদ্ধ সংঘাত সহিংসতামুক্ত মানবিক বিশ্ব গড়ার আহ্বান জানান। শেষ দিনের মাহফিলে সভাপতিত্ব করেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের প্রধান পৃষ্ঠপোষক ও চেয়ারম্যান এবং পিএইচপি ফ্যামিলির চেয়ারম্যান সুফি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রধান অতিথি ছিলেন ধর্ম উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন। তিনি বলেন, আহলে বায়তের মহব্বত না থাকলে সে অন্তর মরুভূমি। পৃথিবীতে আর কোনো পাপিষ্ঠ ইয়াজিদের আবির্ভাব যাতে না ঘটে সেদিকে আমাদের সজাগ থাকতে হবে। আমাদের মতের মধ্যে ভিন্নতা থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের স্রষ্টা এক তথা আল্লাহ পাক। হযরত মুহাম্মদ (.) আমাদের প্রিয় নবী (.)

আহলে বায়তে রাসূল (.) আমাদের চেতনা ও আদর্শের প্রতীক। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, পৃথিবীর কোটি কোটি মুসলমানের অন্তরে আহলে বায়তে রাসুলের (.) ইশক ভালোবাসা ও মহব্বত বিদ্যমান। এই মহব্বতই আমাদের নাজাতের উসিলা হবে নিঃসন্দেহে। দেড় হাজার বছর ধরে কারবালার এই শোকাবহ ঘটনা স্মরণ করে মুসলিম উম্মাহর রক্তক্ষরণ ঘটেছে। দেড় হাজার বছর ধরে একজন পিতামাতাও নিজেদের সন্তানের নাম ইয়াজিদ রাখেনি। অথচ লাখো কোটি মুসলমানের নাম হাসান ও হোসাইন। আমার নিজের নামও হোসাইন। এই নামের জন্য আমি নিজেকে গর্ববোধ করি। আহলে বায়তে রাসূলের (.) চেহারার মধ্যেও নূর বা জ্যোতি বিদ্যমান। তাঁদের শান মর্যাদা অনেক উঁচুতে। ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেঙের উন্নয়নে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারও খুবই আন্তরিক। আগামীদিনে কীভাবে এই মসজিদের আরো উন্নয়ন করা যায় আমরা বিবেচনা করে দেখবো। মাহফিলে অতিথি ছিলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা, রাজনীতিবিদ একরামুল করিম। তিনি জমিয়তুল ফালাহ মসজিদ কমপ্লেঙের উন্নয়নে ধর্ম উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, খুবই দুর্ভাগ্য যে গত ১৭ বছরে এই মসজিদে ১৭টি ইটও বসানো হয়নি। মসজিদের ওযুখানা ও শৌচাগারের অবস্থা খুবই খারাপ। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এক টাকার বিনিময়ে এই মসজিদের জন্য জায়গা দিয়েছিলেনতা হয়তো আমরা অনেকেই জানিনা। প্রয়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল নোমান এই মসজিদের উন্নয়নে ভূমিকা রেখেছেন। সভাপতির বক্তব্যে সুফি মিজানুর রহমান বলেন, দুঃখের পরই সুখ আসে এটাই আল্লাহর বিধান ও হুকুম। কঠিন বিপদ ও প্রতিকূলতার মাঝেও ইমাম হোসাইন (রা), নবী পরিবার তথা আহলে বায়তে রাসূল (.) আজান ইকামতসহ জামাতের সঙ্গে নিজেদের তাঁবুতে নামাজ পড়েছেন। কঠিন বিপদেও নামাজ পরিত্যাগ না করা, সর্বাবস্থায় সত্য ও ন্যায়নীতির ওপর প্রতিষ্ঠিত থাকা, বিপদে ধৈর্যধারণ, তকদিরের ভালো মন্দ বিশ্বাস রাখা এটাই শাহাদাতে কারবালার দর্শন এবং হযরত ইমাম হোসাইনের (রা) শিক্ষা। আলোচনা করেন আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের চেয়ারম্যান শায়খুল হাদীস কাযী মঈন উদ্দিন আশরাফী, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস মুহাম্মদ আবুল হাসনাত। ধন্যবাদ বক্তব্য দেন জমিয়তুল ফালাহ মসজিদের খতিব সৈয়দ আবু তালেব মুহাম্মদ আলাউদ্দীন। কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বক্তব্য দেন মাহফিলের প্রধান সমন্বয়ক পিএইচপি ফ্যামিলির ফিন্যান্স ডাইরেক্টর মুহাম্মদ আলী হোসেন সোহাগ চৌধুরী। স্বাগত বক্তব্য দেন শাহাদাতে কারবালা মাহফিল পরিচালনা পর্ষদের সেক্রেটারি জেনারেল প্রফেসর কামাল উদ্দীন আহমদ। অতিথি ছিলেন, জামেয়া আহমদিয়া সুন্নিয়া কামিল মাদ্রাসার গভর্নিং বডির চেয়ারম্যান প্রফেসর আবুল মহসিন মুহাম্মদ ইয়াহিয়া খান, দরবারে ইছাপুরীর শাহজাদা সৈয়দ শফিউল আজম, রাউজান দারুল ইসলাম কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শিব্বির আহমদ ওসমানি। পরিচালনা পর্ষদের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক দিলশাদ আহমেদের নির্মিত বিগত দিনের চমৎকার একটি ভিডিও ডকুমেন্টারি মাহফিলে পরিবেশিত হয়। কোরআন মজিদ থেকে তেলাওয়াত করেন কারী এরশাদ উল্লাহ, নাতে রাসূল (.) পরিবেশন করেন শায়ের মহিউদ্দীন তানভীর ও শায়ের মনির উদ্দিন কাদেরী। সঞ্চালনা করেন, . জাফর উল্লাহ ও মাওলানা আহমদুল হক।

পূর্ববর্তী নিবন্ধবেতন না পেয়ে ইপিজেডে সেই কারখানার শ্রমিকদের ফের সড়ক অবরোধ
পরবর্তী নিবন্ধপবিত্র আশুরা পালিত