আসা-যাওয়ার পথে

ওমর তানবীর | শুক্রবার , ১৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২২ at ৬:১৭ পূর্বাহ্ণ

হঠাৎ রাজেন্দ্রপুর কবি জিললুর রহমানের প্রেমের কবিতার বই। কবির সামপ্রতিক সময়ের ঢাকাবাস ও কোভিড অক্রান্ত সময়ের হাসপাতালবাসের নানা অনুভব কবিতায় প্রকাশ পেয়েছে। পরবাসকালীন সময়ে সহধর্মিণীর প্রতি কবির অনুরাগ এসব কবিতায় দৃশ্যমান হয়েছে।
নাম শুনে ভ্রমণকাব্য মনে হলেও পাঠক তা ভাবতেই পারেন। কবির এসব কবিতা রচিত হয়েছে আসা-যাওয়া আর যাত্রাপথে।
প্রেম এমন এক মানসাবস্থা যেখানে অন্যের জন্য আকুলতা-ব্যাকুলতা তীব্র হয়ে ওঠে। প্রেম এক ধরনের আকর্ষণ, মঙ্গলকামনা। প্রেম বিশুদ্ধ, স্বর্গীয়, মধুর, মহৎ।
তাইতো কবি হঠাৎ গাজীপুরের রাজেন্দ্রপুরে গিয়েও দয়িতার কথা মনে করছেন।
‘হঠাৎ রাজেন্দ্রপুর। রাজা নেই ইন্দ্র নেই, যেন আমিই দখল নিচ্ছি নতুন রাজ্যের। কিন্তু চারপাশে জমে থাকা ভারী কুয়াশার বিষণ্নতা বারবার মনে করিয়ে দেয় তুমি আমার পাশে নেই।’
প্রেমের ভাষা সর্বজনীন, আর প্রেমের কবিতাও সর্বজনবোধ্য। এদিক থেকে কবিতার সঙ্গে সাহিত্যের অন্যান্য শাখার একটি বড় পার্থক্য বিদ্যমান। গল্পপ্রবন্ধ এবং কবিতা একই ঐতিহ্যে লালিত নয়।
জন স্টলওয়ার্দি তাঁর The Penguin Book of Love Poetry বইয়ের ভূমিকায় বলেন:
‘ঘনঘোর অন্ধকার সময়প্রাঙ্গনে কেবল একটিমাত্র আলোকশিখা প্রজ্জ্বলিত নয়। বিচিত্র আলোকধারা এক সভ্যতা থেকে আরেক সভ্যতায় প্রবাহিত হয়েছে। আন্তরিক তাড়নায় মানবজাতির হৃদয়ে প্রেমের প্রদীপ জ্বলে উঠে, যা থেকে বিভিন্ন কালের ও স্থানের কবিগণ কবিতা লেখায় উদ্দীপনা পান।’
তাই কবির পূর্বের গ্রন্থের কবিতাগুচ্ছ আমার কাছে কিছুটা জটিল মনে হলেও এই কবিতাগুলো খুব সাবলীল মনে হয়েছে। সহজ উচ্চারণের পাশাপাশি এই কবিতাগুচ্ছে রয়েছে সুন্দর উপমা। চলন্ত ট্রেনের শব্দকে কবি প্রেমে কীভাবে রূপান্তর করেন তা দেখা যেতে পারে:
‘কখনও ইস্টিশনের হৈচৈয়ের গ্যাঞ্জাম, কখনও মনে হয় দাঁতেদাঁতে ঠোকাঠুকি, কখনও তোমার ভর্ৎসনার ভাষার মতো শব্দগুলো আমার কানের উপর হামলে পড়ে। তবে টের পাই, ট্রেনের গতি থাকলেও তোমার মতো হৃদয় থাকে না।’
দাম্পত্যপ্রেমের প্রথম স্পর্শ প্রেমময় জীবনের একটি অন্যতম অনুষঙ্গ। কবি সেটা খুবই সুন্দর করে প্রকাশ করেছে:
‘যেদিন তোমাকে প্রথম স্পর্শ করেছিলাম, তোমাকে মোমের মতো মনে হয়েছিল, তুলতুলে জেলির মতো মনে হয়েছিল, চোখের পাপড়ির মতো চঞ্চলা।’
এ-কাব্যগ্রন্থে প্রকাশিত প্রেম ও তার বহুস্তর দ্বন্দ্বপীড়িত আত্মা, নগরজীবনের যান্ত্রিকতা, ক্ষণিকতা, প্রেমের অপ্রিয় সত্য সম্বন্ধে জ্ঞান ও স্পষ্ট কথন।
ভালোবাসার মানুষের সাথে যখন ইচ্ছে যোগাযোগ স্থাপন করতে পারাটা প্রেমিক মনের শাশ্বত ইচ্ছে। প্রেমের বহিঃপ্রকাশ তথা ভালবাসার মানুষটিকে যখন যা ভাবনা তা বলতে না পারাটা আক্ষেপের। তাইতো কবি লিখেছেন-
‘তোমার নৈঃশব্দ আমাকে অস্থির করে রেখেছে। ফোনে রিং বাজে, অথচ নিরুত্তর। তোমার কানে তো দুল ছিল না, ফুলও না। কানে তালাও লাগাওনি নিশ্চয়। তবু সাড়া নেই।
আমার চারপাশে কেবল ফিরে ফিরে আসে কর্কশ রিংটোন।
তুমি কি ঈশ্বরের মতো হয়ে যাচ্ছো? কেবল তিনিই কোনো প্রত্যুত্তর করেন না।’

পূর্ববর্তী নিবন্ধছেঁড়া কাগজের গান
পরবর্তী নিবন্ধভেতর থেকে দেখা