চট্টগ্রামের প্রায় আশি হাজার শিক্ষার্থী ১০টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য আবেদন করেছে। আড়াই হাজারের কম আসনের বিপরীতে এই বিপুল সংখ্যক শিক্ষার্থী আবেদন করে। কোনো কোনো শ্রেণিতে একেকটি আসনের বিপরীতে ৪শ জনেরও বেশি শিক্ষার্থীর আবেদন জমা পড়েছে। আগামী ২৬ নভেম্বর এসব শিক্ষার্থীর ফল ঘোষিত হবে।
জানা যায়, বিগত তিন বছরের মতো এবারও লটারির মাধ্যমে মাধ্যমিক স্কুলে শিক্ষার্থী ভর্তি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। ২০২৪ শিক্ষাবর্ষে দেশের সব মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য নতুন নীতিমালাও প্রণয়ন করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। নতুন নীতিমালায় সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এন্ট্রি শ্রেণিতে ও আসন শূন্য থাকা সাপেক্ষে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সব শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হয়। গত ২৪ অক্টোবর সকাল ১১টা থেকে ১৮ নভেম্বর বিকাল ৫টা পর্যন্ত টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে এই আবেদন গ্রহণ করা হয়। সারা দেশের সব আবেদন কেন্দ্রীয়ভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। লটারিও হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। আবেদনকারীদের মধ্য থেকে লটারি বিজয়ীদের সংশ্লিষ্ট স্কুলে ভর্তির জন্য ফলাফল প্রকাশ করা হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপপরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকা মহানগরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন আজাদীকে বলেন, চট্টগ্রাম মহানগরীর ১০ সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে বিভিন্ন শ্রেণিতে ভর্তির জন্য অনলাইনে সর্বমোট ৭৮ হাজার ৫৯৯টি আবেদন জমা পড়েছে। নগরীর ১০ সরকারি বিদ্যালয়ের বিভিন্ন শ্রেণিতে ২ হাজার ৪২৪টি আসন রয়েছে। এতে করে প্রতিটি আসনের বিপরীতে ৩২ জনের বেশি শিক্ষার্থী আবেদন করেছে।
ভর্তির অনলাইন আবেদন বিশ্লেষণ করে জানা গেছে, পঞ্চম শ্রেণিতে সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে। দশটি সরকারি স্কুলে পঞ্চম শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে ১ হাজার ৫৪৫টি। এর বিপরীতে ৩৯ হাজার ২১১টি আবেদন জমা পড়েছে। ষষ্ঠ শ্রেণিতে আসন রয়েছে ৫০০টি। আবেদন জমা পড়েছে ২৫ হাজার ২৪৫টি। সপ্তম শ্রেণিতে মাত্র ১০টি আসন রয়েছে। এর মধ্যে আবেদন জমা পড়েছে ২ হাজার ৬৭৩টি। অষ্টম শ্রেণিতে ১০টি আসনের বিপরীতে অনলাইনে আবেদন জমা পড়েছে ২ হাজার ৮২৬টি। নবম শ্রেণিতে মোট আসন রয়েছে ৩৫৯টি। আবেদন জমা পড়েছে ৮ হাজার ৩৮৮টি।
ভর্তির জন্য সবচেয়ে বেশি আবেদন জমা পড়েছে চট্টগ্রাম কলেজিয়েট স্কুলে। নগরীর অন্যতম সেরা এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ১১৪টি ও দিবা শাখায় ১২০টি আসন, ষষ্ঠ শ্রেণির দিবা শাখায় ২০টি, সপ্তম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ১০টি এবং অষ্টম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ১০টি মিলে মোট ২৭৪টি আসনের বিপরীতে ১৬ হাজার ২০৩টি আবেদন জমা পড়ে।
ডা. খাস্তগীর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ১১৬টি ও দিবা শাখায় ১১৯টি এবং নবম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৬০টি এবং দিবা শাখায় ৬০টি মিলে ৩৫৫ আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৯ হাজার ৭৭৪টি।
গভ. মুসলিম হাই স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৫৯টি ও দিবা শাখায় ৬০টি, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৬০টি, দিবা শাখায় ৬০টি এবং নবম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৬০টি ও দিবা শাখায় ৬০টি মিলে মোট ৩৫৯টি আসন রয়েছে। এর বিপরীতে ১২ হাজার ১৫৯টি আবেদন জমা পড়েছে।
নাসিরাবাদ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৫৬টি, দিবা শাখায় ৫৮টি এবং ষষ্ঠ শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৬০টি ও দিবা শাখায় ৬০টি মিলে মোট আসন রয়েছে ২৩৪টি। আবেদন জমা পড়েছে ৯ হাজার ৬৪৪টি।
চট্টগ্রাম সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ১২০টি এবং দিবা শাখায় ১১৯টি মিলে মোট আসন রয়েছে ২৩৯টি। বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৩ হাজার ৭১২টি।
চট্টগ্রাম সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৫৯টি এবং দিবা শাখায় ৬০টি এবং ষষ্ঠ শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৬০টি ও দিবা শাখায় ৬০টি মিলে মোট ২৩৯টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৯ হাজার ৩৭৭টি।
বাকলিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় (বালিকা) ৫৮টি, দিবা শাখায় (বালিকা) ৬০টি, ষষ্ঠ শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় (বালিকা) ৬০ ও দিবা শাখায় (বালক) ৬০টি, নবম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় (বালিকা) ৬০টি এবং দিবা শাখায় (বালক) ৫৯টি মিলে মোট ৩৫৭টি শূন্য আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ৭ হাজার ৫৮৫টি।
সিটি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ১১৮টি এবং দিবা শাখায় ১২০টি আসন মিলে মোট ২৩৮টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ২ হাজার ৭৪৬টি।
হাজী মুহাম্মদ মহসিন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণির প্রাতঃ শাখায় ৫৯ এবং দিবা শাখায় ৬০টি মিলে ১১৯টি আসনের বিপরীতে আবেদন জমা পড়েছে ২ হাজার ৫৫৪টি।
চট্টগ্রাম সরকারি মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজের পঞ্চম শ্রেণিতে ১০টি শূন্য আসন রয়েছে। আবেদন জমা পড়েছে ৪ হাজার ৮৪৫টি।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের উপ–পরিচালক (মাধ্যমিক) ও ঢাকা মহানগরী সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভর্তি কমিটির সদস্য সচিব মোহাম্মদ আজিজ উদ্দিন জানান, অনলাইন আবেদনের ভিত্তিতে লটারির মাধ্যমে ভর্তির প্রক্রিয়া সম্পন্ন হবে। আগামী ২৬ নভেম্বর লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, লটারির পর জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ভর্তির পুরো ব্যাপার মনিটরিং করা হবে।
চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ সাদি উর রহিম জাদিদ আজাদীকে বলেন, ভর্তির প্রক্রিয়া অনলাইন আবেদনে কেন্দ্রীয়ভাবে লটারির মাধ্যমে করা হবে। জেলা পর্যায়ে কোনো লটারি হবে না। একজন শিক্ষার্থী সর্বোচ্চ ৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ভর্তির জন্য টেলিটকের মাধ্যমে অনলাইনে আবেদন করতে পেরেছে বলে জানান তিনি।
চট্টগ্রাম জেলা শিক্ষা অফিসার উত্তম খীসা বলেন, লটারি আগামী ২৬ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সবকিছু সেন্ট্রালি করা হচ্ছে। ফল প্রকাশের পর স্কুলগুলোতে নির্ধারিত সময়ে শিক্ষার্থী ভর্তির কার্যক্রম সম্পন্ন হবে।