আসন্ন নির্বাচন নিয়ে চলছে নানা হিসেব-নিকেশ

রাউজান পৌরসভা

রাউজান প্রতিনিধি | সোমবার , ২১ সেপ্টেম্বর, ২০২০ at ১০:২৮ পূর্বাহ্ণ

বছরের শেষ দিকে দেশের পৌরসভা নির্বাচন হতে পারে। এমন সম্ভাবনার মধ্যে রাউজান পৌরসভার নাগরিকরা সম্ভাব্য মেয়র-কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে হিসাব নিকেশ করতে শুরু করেছেন। পৌরবাসীদের মুখে এখন বিগত দুই মেয়াদে দায়িত্ব পালন করে আসা মেয়র-কাউন্সিলরদের কর্মকাণ্ড নিয়ে আলোচনা-সমালোচনা শুরু হয়েছে। বলা যায়, এক দশক ধরে পৌরসভার উন্নয়ন কাজে বিরাজ করছে স্থবিরতা। বিভিন্ন ওয়ার্ডে যা উন্নয়ন হয়েছে, তা শুধুমাত্র স্থানীয় সাংসদের বিশেষ ভূমিকার কারণে হয়েছে।
পৌরসভার অধিকাংশ বাসিন্দার অভিযোগ- বিগত দশ বছর ধরে পৌরসভার নাগরিকরা নির্ধারিত টেক্স পরিশোধ করেছে, কিন্তু পাননি কাঙ্ক্ষিত সেবা। খবর নিয়ে জানা যায়, রাজনৈতিক বিরোধ ও দলাদলির কারণে রাউজান পৌরসভার মেয়র-কাউন্সিলরগণ গত দশ বছরে একসাথে একবারও বসতে পারেননি। এমন পরিবেশে দুই মেয়াদে প্রথম পাঁচ বছর ছিলেন বিএনপির আবদুল্লাহ আল হাসান। তিনি তার মেয়াদকাল শেষ করেছেন ঘরে অথবা শহরের বাসায় বসে পৌরসভার দাপ্তরিক কাজ করে। এরপর আওয়ামীলীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে জেলা আওয়ামীলীগ নেতা দেবাশীষ পালিত মেয়র হন। শপথ নিয়ে পৌরসভা কার্যালয়ে টানা অনুস্থিতির মধ্যে তিনিও তার মেয়াদকাল শেষ করতে যাচ্ছেন।
নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পৌরসভার এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা থেকে তারা মুক্ত হতে চান। যারা নগরিকদের পাশে থেকে সেবাদান করতে পারবেন তাদেরকে দেখতে চান পৌরসভার মেয়র ও কাউন্সিলর পদে। এদিকে পৌরসভার নির্বাচনী হাওয়া লেগেছে স্থানীয় আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের মনে। তারা এখন দলে দলে ঘুরে বেড়াচ্ছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীদের সাথে নিয়ে। সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা নিজেদেরকে যোগ্যতার মাপকাটিতে এগিয়ে রাখতে নিজ নিজ কৌশলে করোনা মহাদুর্যোগে ত্রাণ সহায়তা, চিকিৎসা সেবাদানসহ করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের দাফন ও সৎকারে ভূমিকা রাখছেন। প্রকাশ্যে অথবা গোপনে দুস্থদের দান খয়রাত করে পৌরবাসীর আস্থা অর্জনের চেষ্টা করছেন। একইসাথে নৌকা প্রতীক নিশ্চিত করতে লবিং করছেন নিজ নিজ কৌশলে আওয়ামীলীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ে।
ওয়ার্ড পর্যায়ে নাগরিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, নির্বাচনকে সামনে রেখে করোনা মহামারিতে নাগরিকদের পাশে আছেন এপর্যন্ত তিন সম্ভাব্য প্রার্থী। তারা সকলেই স্থানীয় আওয়ামীলীগ,যুবলীগ নেতা। এই তিনজনের একজন বর্তমান উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পদক সাইফুল ইসলাম চৌধুরী রানা। যিনি রাউজান উপজেলা আওয়ামীলীগের প্রয়াত সভাপতি ও পৌরসভার সাবেক মেয়র শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর পুত্র। ছাত্রলীগের সাবেক নেতা রানা বিএনপি জামাত জোট সরকারের আমলে হামলা-মামলার শিকার হয়েছিলেন। তাঁকে কারাগারেও যেতে হয়েছিল ।
সর্বশেষ পৌর নির্বাচনে দলের তৃণমূল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী ছিলেন তিনি। তবে আওয়ামীলীগ রানাকে প্রতীক না দিয়ে নৌকার প্রার্থী করেন জেলা আওয়ামীলীগ নেতা ও পৌরসভার সাবেক মেয়র দেবশীষ পালিতকে। বিপুল জনসমর্থনের মাঝে বিদ্রোহী প্রার্থীর ভূমিকা নিয়ে রানা নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যান। তবে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের চাপে শেষ পর্যন্ত রানাকে নির্বাচন সরে আসতে হয়। রানা এবারও প্রার্থী হতে চান নৌকা প্রতীক নিয়ে। সমাজকর্মী হিসাবে পরিচিত রানা করোনাকালে কখনো সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরীর ত্রাণ তৎপরতার সাথে থেকে, আবার কখনো কখনো মানুষের পাশে থেকেছেন তাঁর বাবা শফিকুল ইসলাম চৌধুরীর নামে প্রতিষ্ঠিত ফাউণ্ডেশন থেকে ত্রাণ বিতরণ ও অসুস্থ মানুষকে চিকিৎসা সেবা দেয়ার মাধ্যমে। হাসপাতালে রোগীদের আনা-নেয়ায় তিনি ফ্রি সিএনজি সার্ভিস(দোয়েল সার্ভিস) চালু রেখেছেন।
নৌকা প্রতীক নিয়ে মেয়র পদে প্রার্থী থেকে এখন পৌর এলাকায় বিভিন্ন কর্মসূচি নিয়ে রাতদিন ঘুরে বেড়াচ্ছেন পৌরসভার প্রতিষ্ঠা থেকে ৯ নং ওয়ার্ডে দায়িত্ব পালনকারী কাউন্সিলর, বর্তমানে দ্বিতীয় প্যানেল মেয়র ও উপজেলা যুবলীগ সভাপতি জমির উদ্দিন পারভেজ। যিনি ছাত্রলীগের রাজনীতিতে থাকাকালে দুই দফায় হামলার শিকার হয়েছিলেন এনডিপি ক্যাডারদের হাতে। গুলিবিদ্ধ হয়ে আশঙ্কাজনক অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। সেই সময় তাকে হাসপাতালে দেখতে গিয়েছিলেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী, তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেত্রী শেখ হাসিনা। বৃক্ষরোপন ও শিক্ষার উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে একাধিকবার পুরস্কার গ্রহণকারী পারভেজ করোনাকালে দুস্থদের মাঝে ত্রাণ ও চিকিৎসা সহায়তা নিয়ে সাংসদ এবিএম ফজলে করিম চৌধুরী,তার পুত্র ফারাজ করিম চৌধুরী সাথে করোনা মোকাবেলায় কাজ করছেন। সেন্ট্রাল বয়েজ ও আশার আলো নামে দুটি স্বেচ্ছাসেবী দল নিয়ে করোনায় মৃত্যুবরণকারীদের লাশ দাফন ও সৎকার করছেন।
করোনা দুর্যোগে নিজের ওয়ার্ডের বাইরে গিয়ে বিভিন্ন ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সাবেক ছাত্রলীগ নেতা কাজী ইকবাল। যিনি উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি। কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের আশির্বাদ পেলে আবারও প্রার্থী হতে পারেন দেবাশীষ পালিত। দুই বারের মেয়র দেবাশীষ পালিত জন্মাষ্টমী উদযাপন পরিষদের একজন কেন্দ্রীয় নেতা। এছাড়া মেয়র পদে প্রার্থী হওয়ার আকাংক্সখার কথা জানিয়েছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ইয়াছিন মাহমুদ এবং বিলুপ্ত সুলতান ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান জাপা নেতা মেজবাউদ্দিন আকবর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধসাহেদের অস্ত্র মামলার রায় ২৮ সেপ্টেম্বর
পরবর্তী নিবন্ধসদরঘাট কালীবাড়ি মোড়ে অস্ত্রসহ আটক ১