আসন্ন টিকাযুদ্ধের জন্য স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে প্রাপ্তি ও প্রয়োগসহ সর্বতো প্রস্তুতি নিতে হবে

কভিড-১৯ এর টিকাপ্রাপ্তি

| বৃহস্পতিবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২০ at ৫:১৮ পূর্বাহ্ণ

কভিড-১৯ মহামারীতে সারা পৃথিবী পর্যদুস্ত। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনস্বাস্থ্যসহ সব কটি খাত। এক্ষতি নজিরবিহীন। প্রথম ধাপের সংক্রমণ শেষে কিছু দেশে এরই মধ্যে শুরু হয়েছে দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণ। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বাংলাদেশেও আসন্ন শীতে বড় মাত্রাই দ্বিতীয় ধাপের সংক্রমণের আশংকা করছেন। কখন যে এ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবে তা বলা মুশকিল। আশা করা হচ্ছে, একটি সফল টিফা উদ্ভাবন ও তার নিরাপদ প্রয়োগই এ পরিস্থিতির পরিসমাপ্তি ঘটাতে পারে। জানা গেছে, ২০০ টিরও শুরু হওয়া টিকা কার্যক্রমের উল্লেখযোগ্য সংখ্যকই ক্লিনিক্যাল ট্রায়াল পর্যায়ে আছে। রাশিয়া আবার তড়িঘড়ি করে মানবদেহে টিকার প্রয়োগ শুরু করেছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে সবচেয়ে সম্ভাবনাময় হিসেবে চীনের সিনো ভ্যাক্স। অক্সফোর্ডের অ্যাস্ট্রাজেনকো ও যুক্তরাষ্ট্রের কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের নাম উঠে এসেছে। কিন্তু সেগুলো কখন চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছবে তা এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি। ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালে যত বেশি সফল টিকা অনুমোদিত হবে, আমাদের জন্য তা ততই মঙ্গলজনক। স্বাভাবিকভাবে অন্য দেশের মতো বাংলাদেশও টিকা পেতে প্রবল আকাঙ্ক্ষী। টিকা নিয়ে এবার বৈশ্বিক রাজনীতিও আগের চেয়ে ঢের বেশি দৃশ্যমান। এটি মাথায় রেখে আমাদের সময়োপযোগী পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।
একটি বৈশ্বিক রীতি হলো, প্রথম ব্যবহারযোগ্য টিকা সাধারণত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মাধ্যমে বিতরণ করা হয়। একটি নির্দিষ্ট মাথাপিছু আয়ের দেশগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বিনামূল্যে নির্দিষ্ট সংখ্যক টিকা দিয়ে থাকে। কভিড-১৯ টিকার ক্ষেত্রেও একই নীতি অনুসরিত হবার কথা রয়েছে। তবে এটা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। এ অবস্থায় কভিড-১৯ টিকার গবেষণা কার্যক্রমে সন্তোষজনক ফলাফল বিবেচনায় উৎপাদনকারী দেশগুলোর সঙ্গে এরই মধ্যে যোগাযোগ শুরু করেছে। অনেক দেশ যাতে টিকা উৎপাদনের প্রথম দিকেই তারা তা পায়। কিছু দেশ আবার উৎপাদনকারী দেশের প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি করেছে ও করছে। আমাদেরও এ ধরনের তৎপরতায় সামিল হতে হবে। না হলে টিকা প্রাপ্তিতে আমরা পিছিয়ে পড়ব। যেখানেই সফল ও নিরাপদ টিকার অনুমোদন হোক, সবার কাছ থেকে যাতে চাহিদা মতো টিকা পাওয়া যায় সেই পথ খোলা রেখে কৌশল ঠিক করতে হবে। সেজন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়য়ের টিকা কেন্দ্রিক কূটনৈতিক সক্রিয়তা বাড়াতে হবে। সর্বাধিক মাত্রায় সংক্রামিত এলাকাগুলোসহ কোথাও লকডাউন ঠিকভাবে কার্যকর না হওয়ায় সামাজিক ও শারীরিক দূরত্ব মেনে চলাসহ স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণের বিষয়টিতে সাধারণ শিথিলতাসহ কভিড-১৯ মহামারী মোকাবেলার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগগুলো সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন না হওয়ায় টিকাই এখন সর্বশেষ ভরসা। তাই বাংলাদেশের সব মানুষের জন্য টিকার ব্যবস্থা করা সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার হতে হবে। এ পথে চীনা টিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন একটি আশাব্যঞ্জক অগ্রগতি। কর্তৃপক্ষের বক্তব্য অনুযায়ী, চীনা কোম্পানিকে অনুমতি দেওয়ার ফলে বাংলাদেশ সিনোভ্যাঙের এক লাখ টিকা ও টিকাসামগ্রী বিনামূল্যে পাবে। এছাড়া ওই কোম্পানির কাছ থেকে টিকা কেনার ক্ষেত্রেও বাংলাদেশ অগ্রাধিকার পাবে। এখন প্রয়োজন চীনাটিকার পরীক্ষামূলক প্রয়োগের কাজটি দ্রুত সম্পন্ন করা। ভারতের বায়োটেকও বাংলাদেশে ট্রয়ালে আগ্রহ দেখিয়েছে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা এড়িয়ে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়ে তাদের এই আগ্রহকে কাজে লাগাতে হবে। মনে রাখতে হবে, দেশে যত বেশি ক্লিনিক্যাল ট্রয়াল হবে, আমাদের মানুষের শরীরে টিকার প্রতিক্রিয়া ততই সুস্পষ্ট হবে। আমাদের জলবায়ুর উপযোগী ও কার্যকর টিকা পাওয়ার সম্ভাবনাও তত বাড়বে। কাজেই এ ধরনের কার্যক্রমে আমাদের আরও বেশি আগ্রহ দেখাতে হবে।
টিকা পাওয়া দৌড়ে প্রতিটি দেশই নিজের মতো করে চেষ্টা করছে। কিন্তু বাংলাদেশ এখনো আশাব্যঞ্জকভাবে সচেষ্ট নয়। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে প্রয়োজন আমাদের কত মানুষের জন্য টিকা প্রয়োজন, কতটি উৎস থেকে তা আসবে, টিকা পাওয়ায় কারা অগ্রাধিকার পাবে, সেসব বিষয় নিশ্চিতে একটি সামগ্রিক রূপরেখা তৈরি করা। একই সাথে জরুরি টিকার অর্থায়ন করা। টিকা কেনার জন্য সরকার ৬০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে। কিন্তু এ অর্থ পর্যাপ্ত হবে বলে মনে হয় না। সেজন্য পর্যাপ্ত অর্থ সংগ্রহের কাজ এখনই শুরু করা দরকার। নিশ্চয়ই বাইরের উৎস সবার জন্য টিকা কিনতে গেলে রাষ্ট্রীয় কোষাগারে চাপ পড়বে। সেক্ষেত্রে টিকা প্রাপ্তির যুদ্ধে সরকারের সঙ্গে বড় কর্পোরেটদেরও যুক্ত করতে পারে। প্রয়োজনে এ ক্ষেত্রে একটি স্বতন্ত্র তহবিল সহায়ক হতে পারে। দ্বিতীয়ত টিকার প্রায়োগিক কৌশল এখনই নির্ধারণ করে রাখতে হবে। ১৭ কোটি মানুষের টিকাদান একসঙ্গে পাওয়া যেমন দুরূহ তেমনি তাদের টিকাদান নিশ্চিত করাও কম ঝক্কির নয়। সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচির আওতায় আমাদের একটি প্রাতিষ্ঠানিক কাঠামো আছে। সেটিকে আরও সম্প্রসারণ করতে হবে। তাদের সক্ষমতা আরো বাড়াতে হবে। টিকাদানের জন্য প্রয়োজনীয় জনবল তৈরি করতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা দরকার। গ্রাম পর্যায় পর্যন্ত কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। সেখানে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীদের কাজে লাগাতে হবে। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ে এনজিওগুলোর একটি শক্ত প্রাতিষ্ঠানিক ভিত্তি আছে। যথাযথ প্রশিক্ষিত করে তাদের যুক্ত করা গেলে টিকা দান কাজটি কঠিন হবে না। আমরা আশা করি স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আসন্ন টিকাযুদ্ধের জন্য প্রাপ্তি ও প্রয়োগ নিয়ে সর্বতো প্রস্তুতি নেবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধবিশ্বসাদা ছড়ি দিবস