আসছে শীত, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

টেনশন বাড়াচ্ছে ঝুঁকিপূর্ণ ৪২ বস্তি ও মার্কেট বাড়তি সতর্কতা ফায়ার সার্ভিসের

আজাদী প্রতিবেদন | বৃহস্পতিবার , ১৭ নভেম্বর, ২০২২ at ৭:২৯ পূর্বাহ্ণ

প্রত্যেক শীত মৌসুমে ছোট বড় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তাদের মতে, নভেম্বর থেকে মার্চ পর্যন্ত সময়টাকে অগ্নিঝুঁকি হিসেবে বিবেচনা করা হয়। মূলত এ সময়টাতে আবহাওয়া শুষ্ক থাকে। এই শুষ্ক আবহাওয়া আগুন দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার সহায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করে। তাই এই সময়টাতে বাড়তি সতর্ক অবস্থানে থাকেন ফায়ার কর্মকর্তারারা। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নগরীতে পুকুর কিংবা জলাধার নেই বললেই চলে। যা কিছু আছে সেগুলোও বিলীনের পথে। তাই বিষয়টিকে সামনে রেখে নগরীর দুই শতাধিক পয়েন্টে ফায়ার সার্ভিসের চাহিদা মোতাবেক ফায়ার হাইড্রেন্ট বা পানির বিতরণ লাইন স্থাপন করেছে চট্টগ্রাম ওয়াসা। এর বাইরে ফায়ার সার্ভিসে যুক্ত হয়েছে অগ্নিনির্বাপনের গাড়ি ও আধুনিক সরঞ্জাম।
চট্টগ্রাম ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, চার বছর আগে নগরীতে বিভিন্ন ফায়ার স্টেশনের অধিভূক্ত ৪২ বস্তি ও মার্কেটের তালিকা প্রকাশ করেছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিস কার্যালয়। পরবর্তীতে অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট ও বস্তিগুলোতে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা ব্যানারও সাঁটানো হয়। তবে ফায়ার সার্ভিসের কর্মকর্তারা বলছেন, বস্তিতে নিম্নবিত্তের লোকজন বসাবাস করে। অত্যন্ত ঘিঞ্জি এলাকা বলে অগ্নিদুর্ঘটনা হলে ফায়ার সার্ভিসের লোকদের আগুন নেভাতে খুব বেগ পেতে হয়। সরু গলির কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়িও সেখানে প্রবেশ করতে পারে না। এছাড়া বর্তমানে জলাধার নিশ্চিহ্ন হয়ে
গেছে। অন্যদিকে নগরীর বেশিরভাগ মার্কেটে ব্যবসায়ীদের কাছে অগ্নিনির্বাপক সরাঞ্জাম নেই। প্রত্যেক ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে ৫ কেজির ফায়ার এঙটিংগুইসার (অগ্নিনির্বাপন যন্ত্র) রাখলেও বড়সড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভূক্ত নগরীতে ঝুঁকিপূর্ণ ১৩ বস্তির মধ্যে রয়েছে-লামার বাজার ফায়ার স্টেশনের অধীনে ভেড়া মার্কেট বস্তি, ইপিজেড স্টেশনের অধীনে রেলওয়ে বস্তি, কলসি দীঘির পাড় কলোনি এবং আকমল আলী এলাকাধীন কলোনি। আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশনের অধীনে ঝাউতলা বস্তি, আমবাগান বস্তি, সেগুনবাগান বস্তি, কদমতলী রেলওয়ে বস্তি, বায়েজিদ ফায়ার স্টেশনের আওতায় ২নং গেইট রেলওয়ে বস্তি, ড্রাইভার কলোনি, অঙিজেন রাস্তা সংলগ্ন বস্তি, বার্মা কলোনি, রৌফাবাদ কলোনি এবং শেরশাহ কলোনি। অন্যদিকে ফায়ার সার্ভিসের তালিকাভূক্ত অগ্নিঝুঁকিপূর্ণ ২৯ মার্কেটের মধ্যে রয়েছে- কালুরঘাট ফায়ার স্টেশন এলাকার হক মার্কেট, স্বজন সুপার মার্কেট, বখতেয়ার মার্কেট, নজু মিয়া মার্কেট ও বলির হাট মার্কেট। এছাড়া লামা বাজার ফায়ার স্টেশন এলাকার ভেড়া মার্কেট, চাউলপট্টি, শুটকি পট্টি, খাতুনগঞ্জ, আসাদগঞ্জ, মিয়া খান নগর পুরাতন জুট মার্কেট এবং ওমর আলী মার্কেট। বন্দর ফায়ার স্টেশন এলাকার পোর্ট মার্কেট, বড়পুল বাজার, ইশা মিস্ত্রি মার্কেট, ফকির হাট মার্কেট, নয়া বাজার মার্কেট ও ফইল্লাতলী বাজার। ইপিজেড ফায়ার স্টেশন এলাকার চৌধুরী মার্কেট ও কলসি দিঘীর পাড় এলাকাধীন মার্কেট। চন্দনপুরা ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেটের তালিকায় রয়েছে চক ভিউ সুপার মার্কেট, কেয়ারি শপিং মল ও গোলজার মার্কেট। এছাড়া নন্দন কানন ফায়ার স্টেশন এলাকার মধ্যে রেয়াজুদ্দিন বাজার, জহুর হকার্স মার্কেট, টেরি বাজার ও তামাকুমণ্ডি লেইন। অপরদিকে আগ্রাবাদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় রয়েছে সিঙ্গাপুর সমবায় মার্কেট এবং কর্ণফুলী মার্কেট। তবে বায়েজিদ ফায়ার স্টেশন এলাকায় ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় কোনো মার্কেট নেই।
আগ্রাবাদ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী পরিচালক এম ডি আবদুল মালেক দৈনিক আজাদীকে বলেন, শীতের মৌসুম আবহাওয়া শুষ্ক থাকার কারণে আগুন লাগার ঝুঁকি অন্য সময়ের চেয়ে বেশি। এক্ষেত্রে মানুষকে সচেতন হতে হবে। অনেক বস্তি ও মার্কেটে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি প্রবেশের সুযোগ নেই। তাই অগ্নি নির্বাপণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের ভালোই বেগ পেতে হয়। তবে আমাদের কাছে ছোটখাটো কিছু সরাঞ্জাম এসেছে যেখানে বড় গাড়ি প্রবেশ করতে পারবে না, ছোটখাটো অগ্নিকাণ্ড কাজ করা যায়। এছাড়া ২৪ তলা পর্যন্ত আগুন নেভানোর মই যুক্ত হচ্ছে। সব কিছু মিলিয়ে ফায়ার সার্ভিস আগের চেয়ে অনেক বেশি স্বয়ংসম্পূর্ণ হচ্ছে। অন্যদিকে আমরা দেখি বস্তির ঘরগুলো সাধারণত বেড়া ও টিনের ছাউনির হয়ে থাকে। এছাড়া এতে অসংখ্য বৈদ্যুতিক তার পেছানো থাকে। এসব বৈদ্যুতিক তার থেকে শর্ট সার্কিটের কারণে আগুন লাগার সম্ভাবনা থাকে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধঅবৈধ সুবিধা নিতে না পেরেই মামলা করেছিলেন চাকরিচ্যুত দুদক কর্মকর্তা শরীফের বিরুদ্ধে অভিযোগ
পরবর্তী নিবন্ধ৪ ডিসেম্বর শেখ হাসিনার জনসভায় জনতার জাগরণ ঘটবে