আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশীর সঙ্গে সমস্যার সমাধান করতে হবে

প্রধানমন্ত্রীর সাথে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সৌজন্য সাক্ষাৎ

আজাদী ডেস্ক | শুক্রবার , ৫ মার্চ, ২০২১ at ৪:৫৯ পূর্বাহ্ণ

প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে কোনো সমস্যা হলে সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমেই তার সমাধান করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে গণভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করতে গেলে প্রধানমন্ত্রী তাকে এ কথা বলেন। পরে প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের বিষয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন। তিনি বলেন, আলোচনার মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সমস্যা সমাধানের ওপর গুরুত্ব আরোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রতিবেশী দেশের মধ্যে সমস্যা থাকে। সেগুলো আমরা মনে করি সমঝোতা ও আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করা উচিত। করোনাভাইরাস মহামারী প্রতিরোধে বাংলাদেশে টিকাদান কার্যক্রম চলছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সবাইকে এ টিকার আওতায় আনা হবে।
কোভিড-১৯ মহামারীর শুরুতেই সবাইকে সম্পৃক্ত করে তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ নেওয়ায় বাংলাদেশে এ ভাইরাস মোকাবেলা করা সম্ভব হয়েছে বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। তিনি বলেন, মহামারীর মধ্যে দেশের বাইরে অবস্থানরত প্রবাসীদেরও দেশে ফিরিয়ে এনে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রতিকূলতার মধ্যেও বাংলাদেশের এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ের পাশপাশি করোনাভাইরাস মহামারী মোকাবেলা করার পরও বাংলাদেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছে। এরই মধ্যে দেশে রেমিটেন্সের প্রবাহ বেড়েছে। মহামারীর প্রাদুর্ভাবে দেশে যেন খাদ্য সঙ্কট দেখা না দেয়, সেজন্য সরকার কৃষিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে খাদ্য উৎপাদনে জোর দিয়েছে বলেও জানান শেখ হাসিনা। টিকা সরবরাহ করার পাশাপাশি মহামারীর সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়ানোয় ভারত সরকারকে ধন্যবাদ দেন প্রধানমন্ত্রী। খবর বিডিনিউজের।
ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শঙ্কর বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তার বাবা কে. সুব্রামারিয়ামের লেখা বই ‘লিবারেশন ওয়ার অব বাংলাদেশ’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাতে তুলে দেন। বাংলাদেশের জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্ম শতবার্ষিকী এবং স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীর আয়োজনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর অংশগ্রহণ প্রসঙ্গে দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ভারতের জন্য এটা অনেক বড় সম্মানের। জয়শঙ্কর বলেন, এ অঞ্চলের সব দেশই কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে সৃষ্ট প্রতিবন্ধকতা মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়েছে। কোভিডের প্রভাব কাটিয়ে ভারতের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়াচ্ছে এবং শিল্প কারখানাগুলোতে আগে যেখানে তিন শিফটে কাজ হত, এখন সেখানে ৪ শিফট কাজ হচ্ছে। মহামারীর সঙ্কটে বাংলাদেশের পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি এ বৈঠকে পুর্নব্যক্ত করেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
স্বল্পোন্নত দেশ থেকে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তীর্ণ হওয়ায় অভিনন্দন জানিয়ে জয়শঙ্কর বলেন, এটা অনেক বড় অর্জন। বাংলাদেশের যে উন্নয়ন, তা বিস্ময়কর। বাংলাদেশের এই অগ্রগতির জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বের প্রশংসা করেন ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রী।
সীমান্তে প্রাণক্ষয় অপরাধের কারণে : এর আগে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে জয়শঙ্কর বলেন, বাংলাদেশ সীমান্তে প্রাণক্ষয়ের পেছনে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডই মূল কারণ। তিনি বলেন, আমি মনে করি, আমরা একমত হয়েছি, যে কোনো মৃত্যুই দুঃখজনক। কিন্তু আমাদের নিজেদের জিজ্ঞেস করতে হবে, সমস্যাটি কেন হচ্ছে। এবং আমরা জানি সমস্যাটি কী। সমস্যা হচ্ছে অপরাধ। সুতরাং আমাদের মিলিত উদ্দেশ্য হওয়া উচিত ‘অপরাধহীন ও মৃত্যুহীন’ সীমান্ত। আমি নিশ্চিত, আমরা যদি এটা করতে পারি, অপরাধহীন ও মৃত্যুহীন সীমান্ত, তাহলে একসাথে এই সমস্যার সমাধান করতে পারব। তিনি বলেন, যেটাকে আমরা সীমান্ত হত্যা বলি, মূলত অনেকগুলো মৃত্যু হয় ভারতের বহু ভেতরে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী (মোমেন) এবং আমি এ ব্যাপারে আলোচনা করেছি, যেভাবে প্রতিবেশী ও বন্ধুর সঙ্গে আলোচনা হওয়া দরকার।
তিস্তা নদীর পানি বণ্টন চুক্তির সময়সীমা নিয়ে এক প্রশ্নে কৌশলী উত্তর দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করেছি। খুব শিগগির আমাদের সচিবদের বৈঠক রয়েছে। আমি নিশ্চিত, তারা এ বিষয়ে পরবর্তী আলোচনা চালিয়ে নেবেন। আমি মনে করি, আপনারা এক্ষেত্রে ভারত সরকারের অবস্থান জানেন, যা এখনো পরিবর্তন হয়নি। জয়শঙ্করের মতে, ভারত ও বাংলাদেশ যদি কানেক্টিভিটির জায়গায় ঠিকমত কাজ করতে পারে, তাহলে পুরো অঞ্চলই বদলে যাবে; বঙ্গোপসাগরীয় এলাকাকে তখন অন্যরকম মনে হবে।
এদিকে গতকাল সারাদিন কর্মব্যস্ত সময় কাটিয়ে রাত সাড়ে ৯টায় তেজগাঁও বঙ্গবন্ধু বিমান ঘাঁটি থেকে বিশেষ বিমানে দেশের উদ্দেশে রওনা হন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর।

পূর্ববর্তী নিবন্ধটিকা নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী
পরবর্তী নিবন্ধসিএমপির পুলিশ সদস্যের আধঘণ্টা হাজতবাস