সরকারি চাকরিতে নিয়োগে কোটা ব্যবস্থার সংস্কারের দাবিতে চলা আন্দোলনে সমর্থন জানালেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের ‘রাজাকার’ স্লোগানে ভীষণ মর্মাহত হয়েছেন শিক্ষাবিদ, লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল। তিনি বলেছেন, কোটা সংস্কার করতে হবে, এই বিষয়টাকে আমি সমর্থন করি। তবে আন্দোলনের নামে মুক্তিযুদ্ধকে অসম্মান করার ব্যাপারটি কোনোভাবেই সমর্থন করি না। খবর বিডিনিউজের।
চাকরির কোটা সংস্কারের দাবিতে দুই সপ্তাহ ধরে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মধ্যে গত রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সাফ জানিয়ে দেন, সরকারি চাকরিতে কোটার বিষয়টি আদালতেই ফয়সালা করতে হবে। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি বলেন, কোটা আন্দোলন করার আগে তো তাদের রেজাল্টগুলো দেখা উচিত ছিল যে, কোথায় তারা দাঁড়িয়েছে! দ্বিতীয়টি হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি তাদের এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতিপুতিরা পাবে না, তাহলে কি রাজাকারের নাতিপুতিরা (চাকরি) পাবে?
প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যে মর্মাহত হয়ে রোববার রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষালয়ে আন্দোলনকারীরা বিক্ষোভ দেখান; যেখানে স্লোগান দেওয়া হয়, ‘তুমি কে আমি কে, রাজাকার–রাজাকার; কে বলেছে কে বলেছে, স্বৈরাচার, স্বৈরাচার’।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কণ্ঠে ‘রাজাকার’ স্লোগানে মর্মাহত মুহম্মদ জাফর ইকবালের হাতে একটি চিরকুট সোমবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে। তিনি লিখেছেন, ‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমার বিশ্ববিদ্যালয়, আমার প্রিয় বিশ্ববিদ্যালয়। তবে আমি মনে হয় আর কোনোদিন এই বিশ্ববিদ্যালয়ে যেতে চাইব না। ছাত্রছাত্রীদের দেখলেই মনে হবে, এরাই হয়তো সেই রাজাকার। আর যে কয়দিন বেঁচে আছি, আমি কোনো রাজাকারের মুখ দেখতে চাই না। একটাই তো জীবন, সেই জীবনে আবার কেন নতুন করে রাজাকারদের দেখতে হবে?’
জাফর ইকবালের লেখা চিরকুটটি ফেইসবুকে শেয়ার করেছেন যুবলীগনেত্রী চৈতালী হালদার, কবি শিমুল সালাহ্উদ্দিনসহ অনেকেই। চিঠিটির সত্যতা জানতে ফোন করা হলে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মুহম্মদ জাফর ইকবাল বলেন, হ্যাঁ, এটা আমারই লেখা।
কোটা সংস্কার আন্দোলন নিয়ে তার বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি বলেন, যৌক্তিকভাবে কোটা সংস্কার করার যে দাবি, তার সঙ্গে আমার সমর্থন রয়েছে। তবে আন্দোলনের নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যখন নিজেদের ‘রাজাকার’ বলে স্লোগান দেয়, তা কোনোভাবেই সমর্থন করা যায় না।