আম্মা

রেশমা আনোয়ার | রবিবার , ২৪ জানুয়ারি, ২০২১ at ৭:৪৫ পূর্বাহ্ণ

প্রতি শুক্রবার আমার মনটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও খারাপ হয়ে যায়। কারণ ২০১৭ সালের ১ মহররম শুক্রবার আসরের শেষ দিকে মাগরিবের একটু আগে আম্মা দুনিয়া থেকে বিদায় নেন। অন্য দিনের চেয়ে আজ একটু বেশিই কষ্ট হচ্ছে। আমার ছোট বোন সহকর্মী রাফিয়ার আম্মা গতরাতে না ফেরার দেশে চলে যান। যিনি ছিলেন আমার এই ছোট্ট বোনটির আল্লাহর তরফ থেকে বটবৃক্ষ। আজ থেকে ওকে যুদ্ধ ক্ষেত্রে এক মেয়ে নিয়ে একাই যুদ্ধ করতে হবে। আমার বিশ্বাস মহান আল্লাহ পাক ওকে অপরিসীম ধৈর্য দিবেন, সব কিছু সহজ করে দিবেন।
আম্মা বড় মূল্যবান সম্পদ। যখন কাছে ছিল বুঝিনি। তবে আমার যে কোনো কষ্টে আমার আম্মার স্পর্শ ছিল আমার কষ্ট লাঘবের জায়গা। কত অবহেলাই না করেছি আম্মাকে। আমার জীবিত কোনো সন্তান নেই। ভাই বড়টার সন্তানদের নিজের পেটের সন্তানের মতো ভালোবাসি। হয়তোবা আরেকটু বেশি। মাঝে মাঝে আমার বাড়াবাড়ি দেখে একদিন আম্মা আমাকে একাকী বসিয়ে বুঝাবার চেষ্টা করেছেন “এমন করিস না। বাচ্চা গুলো বড় হলে আর কাছে থাকবেনা এভাবে। পরে বড় কষ্ট পাওয়ার চেয়ে এখন থেকেই বুকে পাথর বাঁধো”। আম্মার কথা শুনে প্রচণ্ড রেগে গেলাম। একটু খারাপ ব্যবহারও করেছিলাম। বাচ্চা গুলো আমাকে “মা” বলে ডাকে। তাই যারা আমাকে চিনে তারা কেউ ভাইয়ের মেয়ে কিংবা ভাতিজী বলতেন না।
আজ বাচ্চাগুলো অনেক বড় হয়ে গেছে। আমার কাছ থেকে অনেক দূরে। এটাইতো স্বাভাবিক। বাস্তব। আর এগুলোই আমার আম্মা আমাকে নানা ভাবে বুঝাবার চেষ্টা করতেন। বুকে পাথর বেঁধেছি। বোন রাফিয়ার জীবনেও এসে গেলো কঠিন বাস্তবতা। পৃথিবীর কোনো মানুষই এই “আম্মার” জায়গাটা পূরণ করতে পারবেনা। আমি হয়তো বড় বোনের মতো স্নেহ ভালোবাসা দিয়ে পাশে দাঁড়াতে পারবো। কিন্তু আম্মা নামের এই মানুষটার জায়গায় দাঁড়াতে পারবোনা কখনোই।
দুটো পুত্র সন্তান পৃথিবীতে এসে মা ডাকার আগেই চলে গেছে ওপাড়ে। অনেকেই আমাকে উদাহরণ হিসেবে বলে “রেশমার মতো হলে কি করবেন”? বুঝিয়ে বলছি। আমার এক কাজিনের প্রথম সন্তান মাস কয়েক বেঁচে থাকার পর কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। যদিও আমার সেই কাজিন এখন আরেক পুত্র সন্তানের মা। এক পর্যায়ে আমার অতি আপনজন আমার কাজিনের শ্বশুরকে বলেছিল আমার কাজিনের অবস্থা যদি আমার মতো হয় তখন কী করবে! সন্তান আল্লাহ পাকের আমানত। একে নিয়ে অহংকার কিংবা গর্ব করার কিছুই নেই। আমার আম্মা ছিলেন সেই মহিলা যিনি আমাকে বলেছিলেন আল্লাহর আমানত আল্লাহ নিয়ে গেছে। সময় মতো তোমার কাছে চলে আসবে। আর বলেছিলেন আমি যেন কোনো দিন সন্তানের জন্য চোখের পানি না ফেলি। আল্লাহ নারাজ হবেন। আম্মা, কোথায় পেতেন এতো মনোবল, ধৈর্য শক্তি, সহ্য শক্তি? এক অসাধারণ মহিলা ছিলেন আপনি। তাইতো আমার অগাধ বিশ্বাস আপনি জান্নাতুল ফেরদৌসের বাগানে মহা সুখে আছেন। ‘আম্মা’- যার স্নেহ, ভালোবাসা, মায়া মমতা পেতে এক পয়সাও খরচ করতে হয় না। যাদের আম্মারা এখনো বেঁচে আছেন তারা একটু সময় করে আম্মার পাশে বসে গল্প করুন, গালে চুমু দিন, জড়িয়ে ধরুন…

পূর্ববর্তী নিবন্ধশিশুদের বই পড়ার প্রতি উৎসাহিত করে তুলুন
পরবর্তী নিবন্ধআলহাজ্ব নাজিম উদ্দিন স্মরণে