‘আমি রোজা রেখেছি, ইফতার শেষে আমাকে মেরো’

| শনিবার , ৯ এপ্রিল, ২০২২ at ৬:২৯ পূর্বাহ্ণ

‘আমি রোজা রেখেছি, ইফতার শেষে আমাকে মেরো’ অতর্কিত মারধর সহ্য করতে না পেরে বাঁচার জন্য এমন আকুতি জানিয়েও শেষ রক্ষা পায়নি কক্সবাজারের পিএমখালীর মোরশেদ আলী ওরফে মোরশেদ বলী (৩৮)। খবর বাংলানিউজের।
হামলার সময় মারধর সহ্য করতে না পেরে হামলাকারীদের আকুতি জানিয়ে মোরশেদ বলেন, এখন বেশি ক্লান্ত লাগছে, একটু পর ইফতার করবো। ইফতার শেষ করলেই তোমরা আমায় মেরো। কক্সবাজারের পিএমখালীর মোরশেদ আলী ইফতারি কেনার জন্য স্থানীয় চেরাংঘর স্টেশনে বের হলে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে প্রতিপক্ষের লোকজন মোরশেদকে জনসম্মুখে পিটিয়ে ও কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে রাত ৮ টার দিকে হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়।
স্থানীয়দের ভাষ্য, একটি সেচ প্রকল্প নিয়ে বিরোধের জের ধরে এ হামলার ঘটনা ঘটেছে। মোরশেদ পিএমখালী ইউনিয়নের মাইজপাড়ার মৃত মাওলানা ওমর আলীর ছেলে।
নিহতের ভাই জয়নাল আবেদীন ও আইনজীবী জাহেদ আলী জানান, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে মোরশেদ ইফতারি কিনতে চেরাংঘর বাজারে যান। সেখানে আগে থেকে ওৎ পেতে থাকা মাহমুদুল হক, জয়নাল, কলিম উল্লাহসহ তাদের গোষ্ঠীর অন্তত ১৫-২০ জন লোক লোহার রড, ছুরি ও লাঠি নিয়ে মোরশেদের ওপর হামলা চালায়। রোজা রাখার কারণে তিনি খুব ক্লান্ত ছিলেন। যে কারণে হামলার শুরুতেই তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।
স্থানীয়রা জানান, এ সময় মোরশেদকে মাটিতে ফেলে মধ্যযুগীয় কায়দায় প্রায় ২০ মিনিট উপর্যুপরি আঘাত করে এবং কোপায়। হামলাকারীরা সন্ত্রাসী প্রকৃতির হওয়ায় কেউ এ সময় তাদের বাধা দিতে আসেনি। পরে স্থানীয়রা মুমূর্ষু মোরশেদকে কক্সবাজার সদর হাসপাতালে নিয়ে যান। অবস্থা আশঙ্কাজনক হলে আইসিওতে স্থানান্তর করার পর সেখানকার চিকিৎসকরা রাত ৮টার দিকে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মোরশেদের পরিবার ও স্থানীয়রা জানান, সরকারি একটি সেচ প্রকল্প দীর্ঘদিন ধরে ইজারা নিয়ে পরিচালনা করে আসছিল মোরশেদের পরিবার। সেই সেচ প্রকল্পের পানির স্কিম নিয়ে হামলাকারীদের সঙ্গে বেশ কিছুদিন ধরে মোরশেদের বিরোধ চলছিল। হামলাকারীরা চাষিদের ভোটে নির্বাচিত স্কিম পরিচালনাকারীদের পানির পাম্পের পাশে জোরপূর্বক নিজেদের পাম্প বসানো বা চলমান প্রকল্প দখল করতে চেয়েছিল। কিন্তু মোরশেদ তাতে বাধা দেন। এছাড়া কিছুদিনের মধ্যে ওই সেচ প্রকল্প নতুন করে ইজারা হওয়ার কথা রয়েছে। ইজারা পাওয়ার জন্য মোরশেদের পরিবার আবারো আবেদন করে। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে প্রতিপক্ষ।

নিহতের স্বজনদের অভিযোগ, মাহমুদুল হক মেম্বার, জয়নাল আবেদিন হাজারি, কলিম উল্লাহ, আবদুল মালেকসহ হামলার মূল নির্দেশদাতা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি সিরাজুল মোস্তফা আলাল।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে আওয়ামী লীগ নেতা সিরাজুল ইসলাম আলালের মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
কক্সবাজার সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ মুনীর-উল-গিয়াস বলেন, খবর পেয়ে সদর হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলে যায় পুলিশের পৃথক টিম। মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে শুক্রবার জুমার নামাজের পর তার দাফন সম্পন্ন হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন আছে। ওসি আরো বলেন, এ ঘটনায় জড়িতদের ছাড় দেওয়া হবে না।

পূর্ববর্তী নিবন্ধজাতীয় রপ্তানি ট্রফি পেল হা-মীম গ্রুপ
পরবর্তী নিবন্ধপটিয়ায় ২০ হাজার পরিবারে ইফতার সামগ্রী দিল কেডিএস গ্রুপ