আজ ১৮ অক্টোবর। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ পুত্র শহীদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিন। গতবছর মন্ত্রী পরিষদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২১ সাল থেকে রাষ্ট্রীয়ভাবে শেখ রাসেলের ‘জন্মদিন উপলক্ষ্যে দিবসটিকে শেখ রাসেল’ দিবস হিসেবে পালিত হবে। এর প্রতিপাদ্য শেখ রাসেল দীপ্ত জয়োল্লাস, অদম্য আত্মবিশ্বাস। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছোট ভাই শেখ রাসেল ১৯৬৪ সালের এই দিনে জন্মগ্রহণ করেছিলেন ধানমণ্ডির ঐতিহাসিক স্মৃতি বিজড়িত ৩২নং বাড়িতে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার পিতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাতা ফজিলাতুন্নিছা মুজিব সহ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের সাথে খুনিদের বুলেটের আঘাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছিল। তিনি ইউনিভার্সিটি ল্যাবরটারি স্কুলের ৪র্থ শ্রেণির মেধাবী ছাত্র শেখ রাসেল। এ দেশের শিশু কিশোর ও তরুণদের কাছে শেখ রাসেল এক ভালোবাসার নাম। রাসেল আজ দেশের আনাচে কানাচে এক মানবিক সত্তা হিসেবে সবার মাঝে বেঁচে আছেন। গত বছর তার জন্মদিন উপলক্ষ্যে দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠানে তাঁর বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, রাসেল যদি বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো একজন মহানুভব, দূরদর্শী ও আদর্শবান নেতা আমরা পেতাম যাকে নিয়ে দেশ ও জাতি গর্ব করতে পারতো। রাসেল বেঁচে থাকলে কী করতো এই ভাবনটা আমাকে প্রায় ভাবায়। আজ এত বছর পরেও শেখ রাসেলকে জাতি শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে। কারণ রাসেল তার মহানুভবতা ও ব্যবহারে ছিল অমায়িক। পাঁচ ভাইবোনের মাঝে রাসেল ছিল সর্বকনিষ্ঠ।
১৯৭৫ এর ১৫ আগষ্ট ভোর রাতে বঙ্গবন্ধু যখন বুঝতে পারলেন খুনিরা তাকে সপরিবারে হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে আক্রমণ করেছে। তখন তিনি পরিবারের একজন ব্যক্তিগত কর্মচারীকে নির্দেশ দিলেন শেখ রাসেলকে নিয়ে পালাতে ঠিক সে সময় ঐ কর্মচারী সহ রাসেলকে অভ্যুত্থানকারীরা আটক করে। আতংকিত হয়ে শিশু রাসেল কান্না জড়িত কণ্ঠে বলেছিলেন, ‘আমি মায়ের কাছে যাবো’। তখন বঙ্গবন্ধুর ব্যক্তিগত কর্মচারী এ এম এম মুহিতুল ইসলামকে জাপটে ধরে বলেন, ও আমাকে মারবে নাতো? খুনিদের মনে এতটুকু মায়া ছিল না যে একটি শিশুকে তারা প্রাণে বাঁচতে দিবে। কী নির্মম পৈশাচিক ঘটনা তখন খুনিরা রাইফেলের বাট দিয়ে মুহিতকে ভীষণভাবে আঘাত করে। তাকে মারতে দেখে রাসেল কান্নাকাটি করেছিল আর বলছিলো ‘আমি মায়ের কাছে যাবো, আমি মায়ের কাছে যাবো।’ এক ঘাতক এসে বলল, চল তোকে তোর মায়ের কাছে দিয়ে আসি। তখন খুশিতে শিশু রাসেল তাদের সাথে গেলে অবুঝ শিশু রাসেলকে তার মায়ের লাশের কাছে স্ট্যানগানের ব্রাশ ফায়ারে নির্মমভাবে হত্যা করলো। আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে প্রিয় নবী (সা:) এর প্রিয় দৌহিত্র, মা ফাতেমা (রা:) ও হযরত আলী (রা:) এর নয়নের মনি ইমাম হাসান (রা:) ও ইমাম হুসাইন (রা:) কে ফুরাত নদীর পারে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছিল। শহিদী কারবালার সেই বিয়োগান্ত ঘটনাকেও হার মানিয়েছিল ’৭৫ এর ১৫ আগস্টের হত্যাকাণ্ড। কারণ কারবালার ঘটনায় কোনো শিশুকে হত্যা করা হয়নি। ১৫ আগষ্ট কালো রাত্রিতে খুনিদের নির্মম বুলেটের আঘাতে নিহত শহীদ রাসেলের ঘটনাও জাতি কখনো ভুলতে পারবে না। গত বছর রাসেলের ৫৮ তম জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তাকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবেগপ্রবণ হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে ছোট ভাই শেখ রাসেলের শৈশবের স্মৃতিচারণ করেছিলেন। সেদিন দেশের সকল ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সামনে যারাই দৃশ্যটি দেখেছিলেন তারাও সেদিন চোখের পানিতে বুক ভাসিয়েছিলেন। এমন হৃদয়বিদারক ঘটনা যেন পুনরায় না ঘটে তার জন্য জাতিকে সদা সজাগ থাকতে হবে। পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদে যে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করা হয়েছিল, সে সকল কুশীলব ও মাস্টার মাইন্ডদের আইনের আওতায় এনে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করা হোক। খুনিদের রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কৃত করে যারা আজ মানবাধিকার লংঘনের কথা বলে তাদের বিরুদ্ধেও জাতিকে সোচ্চার হতে হবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি সে সকল খুনি ও স্বাধীনতা বিরোধী শক্তিদের এদেশে রাজনীতি করার কোনো যৌক্তিকতা বা অধিকার নেই। আসুন জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে ’৭১ এবং ’৭৫ এর খুনিদের রুখে দাঁড়ায় এবং তাদের আত্মীয় স্বজনদের সামাজিক ও রাষ্ট্রীয়ভাবে বয়কট করি। শহীদ শেখ রাসেলের ৫৯তম জন্মদিনে আল্লাহর দরবারে এই দোয়া করি তিনি যেন ’৭৫ এর ১৫ আগস্ট শেখ রাসেলসহ তাঁর পিতা, মাতা ও পরিবারের অন্যান্য সকল শহীদদের জান্নাতবাসী করেন। আমিন। জয় বাংলা জয় বঙ্গবন্ধু।
লেখক : শ্রম বিষয়ক সম্পাদক. চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগ।