আমিন জুট মিলের ভূসম্পত্তি রক্ষাই বড় চ্যালেঞ্জ

৭৯ একর ভূমির মধ্যে ২৫ একর বেদখলে

আজাদী প্রতিবেদন | শুক্রবার , ১৫ অক্টোবর, ২০২১ at ৫:৩৫ পূর্বাহ্ণ

সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যাওয়া দেশের অন্যতম বৃহৎ পাটকল আমিন জুট মিলের প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার ভূমি এবং কোটি কোটি টাকা দামের যন্ত্রপাতি রক্ষা করাই বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। প্রতিষ্ঠানটি পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শ্রমিকদের স্থায়ীভাবে বিদায় করে দেওয়ার পর বিপুল পরিমাণ ভূসম্পত্তিসহ অবকাঠামো অনাদরে পড়ে রয়েছে। ৭৯ একর ভূমির মধ্যে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকার ২৫ একর ভূমি অবৈধ দখলে চলে গেছে। বাকি ভূমি যাতে ঠিকঠাকভাবে রক্ষা পায় সেজন্য আনসার পাহারা বসানো হয়েছে। অপরদিকে ৬০ বছরেরও বেশি আগে গড়ে তোলা নানা স্থাপনা ক্ষয়ে যাচ্ছে। বিভিন্ন ধরনের প্রায় দুই হাজার মেশিনও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জুট মিলস কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল আমিন জুট মিল পরিদর্শন করে ভূমি রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে। সূত্র জানিয়েছে, বিভিন্ন অনিয়ম, উদাসিনতা এবং অদূরদর্শী সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশে পাট শিল্প লাটে উঠে। বিশেষ করে সময়মতো প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না পাওয়া, অর্ধশতাব্দী আগেকার মেশিন দিয়ে উৎপাদন চালাতে গিয়ে উৎপাদন ব্যয় বেড়ে যাওয়ায় প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারা এবং সিস্টেম লসসহ বিভিন্ন সংকটে দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত্ব ২৬টি পাটকল গত বছর ১৯ জুন বন্ধ করে দেয়া হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রামের সর্ববৃহৎ আমিন জুন মিলসহ দশটি মিল রয়েছে। আমিন জুট মিল প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল ১৯৫৪ সালে।
নগরীর মুরাদপুর এলাকার ৭৯ একর জায়গার উপর গড়ে তোলা হয়েছিল এ মিল। ১৬৬ হেসিয়ান, ২৭৫ সেকিং, ৩৩ সিবিসি ও ১ হাজার ৩৪৪ অন্যান্য লুম নিয়ে গড়ে তোলা হয় বৃহৎ এই পাটকল। কারখানাটিতে প্রায় পাঁচ হাজার শ্রমিক কাজ করতেন। এর মাসিক উৎপাদন ক্ষমতা ছিল ১৮৫ মেট্রিক টন হেসিয়ান, ৯৯৩ মেট্রিক টন সেকিং, ৭২ মেট্রিক টন সিবিসি ও ১৪৪ মেট্রিক টন অন্যান্য লুম। গত বছরের ১৯ জুন কারখানাটি যখন বন্ধ করে দেওয়া হয় তখন এখানে ২ হাজার ৪শ’ জন স্থায়ী শ্রমিক এবং ২ হাজার ২শ’ জন অস্থায়ী শ্রমিক মিলে সর্বমোট ৪ হাজার ৬শ’ জন শ্রমিক কাজ করতেন। এক সময় পাটজাত পণ্য উৎপাদনে দেশের অন্যতম সেরা
কারখানাটি নানা সংকটে প্রায় ধ্বংস হতে বসেছিল। ১৯৫৪ সালে স্থাপন করা মেশিনের অধিকাংশই নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। জোড়াতালি দিয়ে চালানো হচ্ছিল একেকটি মেশিন। আবার কোনোটি সচল হলেও তার স্থায়িত্ব ছিল খুবই কম। এতে করে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার কোনো বিকল্প ছিল না বলেও সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো মন্তব্য করেছে।
কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার পর এর শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধের বিষয়টি সামনে আসে। পাটকল কর্পোরেশন ক্রমান্বয়ে শ্রমিকদের পাওনা পরিশোধ শুরু করে। ইতোমধ্যে প্রায় ৯৫ শতাংশ শ্রমিকের পাওনা পরিশোধ করা হয়েছে। বাকি শ্রমিক-কর্মচারীদের পাওনা পরিশোধ করে বিদায় করার জন্য প্রতিষ্ঠানটির শ্রমিক নেতাদের পক্ষ থেকে দাবি জানানো হয়েছে।
সূত্র বলেছে, এক বছরেরও বেশি আগে কারখানাটি বন্ধ করে দেওয়ার পর মেশিনগুলোতে মরিচা ধরতে শুরু করেছে। লোহালক্কড়ের এসব মেশিনের অনেকগুলো ইতোমধ্যে নষ্ট হয়ে গেছে। কারখানা থেকে দামি জিনিসপত্র চুরি হওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। তবে
সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে আমিন জুট মিলের বিশাল ভূ-সম্পত্তি রক্ষা। শহরের বুকে ৭৯ একর বা প্রায় ৪ হাজার ৭৮০ কাঠা জায়গার দাম কমপক্ষে পাঁচ হাজার কোটি টাকা। এই বিশাল ভূসম্পত্তির মধ্যে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা দামের অন্তত ২৫ একর জায়গা বেহাত হয়ে গেছে বলে সূত্র জানায়। গত দশ বছরেরও বেশি সময় ধরে কারখানাটি সংকটে থাকার সুযোগে বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান নানাভাবে ভূ-সম্পত্তি দখল করেছে। এদের কারো কারো বিরুদ্ধে আমিন জুট মিল কর্তৃপক্ষ মামলা করেছে। কারো বিরুদ্ধে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তবে বাস্তবতা হচ্ছে আমিন জুট মিলের জায়গায় অগুনতি স্থাপনা গড়ে উঠেছে। বহুতল পাকা ঘরবাড়ির পাশাপাশি বসতির মতো কাঁচা ঘরবাড়িও রয়েছে।
আমিন জুট মিল বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর এর সম্পত্তি রক্ষা করা কঠিন হয়ে উঠেছে বলে উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫৭ জন আনসার মোতায়ন করে ভূমি এবং কারখানার যন্ত্রপাতি রক্ষার চেষ্টা করা হচ্ছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কর্মকর্তা গতকাল দৈনিক আজাদীকে বলেন, দুইদিন আগে বিজেএমসির শীর্ষ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধিদল আমিন জুট মিলস পরিদর্শন করেছে। প্রতিনিধিদলটি কারখানার মহাব্যবস্থাপকসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠক করে ভূমি রক্ষার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা প্রদান করেছে। কারখানাটি চালু করার আর কোনো সম্ভাবনা নেই বলে উল্লেখ করে একজন শীর্ষ কর্মকর্তা গতকাল বলেন, এখন ভূমি রক্ষা করাটাই প্রধান কাজ। কারখানার মেশিনগুলোও পাহারা দিয়ে রাখা হয় বলেও তিনি উল্লেখ করেন। তিনি কারখানাটির ব্যাপারে সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে যেই ধরনের নির্দেশনা আসবে তা বাস্তবায়ন করা হবে বলেও জানান।
বন্ধ কারখানায় শ্রমিক রাজনীতির কিছু নেই। তবে সর্বশেষ সিবিএর সভাপতি মোহাম্মদ আরিফ শ্রমিকদের পাওনাগুলো দ্রুত পরিশোধ করে দেওয়ার জন্য কর্তৃপক্ষের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

পূর্ববর্তী নিবন্ধমীরসরাইয়ে এক পরিবারে তিনজন খুন
পরবর্তী নিবন্ধএমন শাস্তি হবে আর কেউ যেন সাহস না পায় : প্রধানমন্ত্রী