শীতের শুরু (অক্টোবর) থেকে মায়ের কাশি। মাস চারেক আগে বাম চোখের ছানি অপারেশন হয়েছে। প্রেশার বাড়তি ৩০ বছরেরও অধিককাল। চোখের ডাক্তারের পাশাপাশি কয়েকবার মেডিসিন ডাক্তার দেখানো হয়েছে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে ডাক্তার ভাই বলেন–আন্টি, আপনার চেয়ে আমার কাশির পরিমাণ বেশি। স্বস্তি নিয়ে মাকে বোনের বাসায় রাখলাম, পুরো জানুয়ারি জুড়ে। ৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় ছিলাম। দুপুরে বোনের ফোন পেয়ে জানলাম–মা‘র প্রেশারের কারণে সারা শরীরে ব্যথা, মাথা তুলতে পারছেন না। দ্রুত ক্লিনিকে নেয়া হল। ৭তারিখে মেডিসিন, অর্থোপেডিঙ ও নিউরো মেডিসিন বিশেষজ্ঞ দেখানোর পর পুনরায় বোনের বাসায় আনা হল– দুর্বলতাকে সাথী করে। ১০ ফেব্রুয়ারি নানার মৃত্যুবার্ষিকী। প্রতিবছরের ন্যায় এবারো বাবার বাড়িতে যাবার আগ্রহের কমতি ছিল না মায়ের। শরীর সায় না দেওয়ায় বোন ও তার মেয়েদের তৈরি হতে বলে বাথরুমে গিয়ে মাথাঘুরে পড়ে যান মা। আবার নিয়ে এলাম পার্কভিউতে। গাড়িতে আনা সম্ভব হয়নি বলে এম্বুল্যান্স নিয়ে ক্লিনিকে আনতে হয়। মাথায় চোট, অবশ্যম্ভাবী সিটিস্ক্যান। সিটিস্ক্যানে মাথায় তিনটি স্পটের দেখা মিলল। নিউরো সার্জারী ডাক্তার বুঝালেন–পড়ে যাবার ক্ষত আর স্পটগুলোর উৎপত্তি ভিন্নতর।
১২ তারিখে দুইবার এমআরআই করে অনকোলজির ডাক্তার বললেন – মরণব্যাধি ক্যানসারের কথা, আরো পরীক্ষা প্রয়োজন। মধ্য ফেব্রুয়ারিতে নিশ্চিত হলাম ফুসফুসে ক্যান্সার। ফেব্রুয়ারি আসলে অবারিত ভাবে আসে একুশ। চট্টগ্রামের সাহিত্যিক অঅবুল ফজল লিখেছিলেন -‘একুশ মানে মাথা নত না করা’।আমার মায়ের জীবনের সাথে মাথা নত না করাটা পুরোপুরি সমার্থক। দৃঢ়চেতা ও স্পষ্টভাষী মা আমার –স্বামী, ছেলে, মেয়ে, ভাই, বোন, দেবর, ননদ, ছেলের বউ, মেয়ের জামাই কারো অন্যায়ের কাছে কখনো হননি নত। ‘চির উন্নত মম শির’–আমার মা ৫মার্চ তিনধাপে বিমান পরিবর্তন করে এখন মুম্বাই টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালের এক কক্ষে লড়ে চলছেন। মা‘র কাছে প্রেরণা পেয়েছি– মা, মাটি, মানুষকে ভালোবাসার ও তাদের জন্য কিছু করার মন্ত্র। হাসপাতালের নিভৃত কক্ষে একাকী মায়ের দিকে তাকিয়ে প্রায়শঃ মনে হয় –আমার যথার্থ চেকআপের অবহেলায় কি সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়েছে সর্বগ্রাসী ব্যাধি? বুকের অব্যক্ত যাতনা ও চোখের নোনাপানি মনকে প্রবোধ দেয়। ‘আমার হার না মানা মা’ মরণব্যাধি ক্যান্সার আপনাকে হারাতে পারবে না– ইনশাআল্লাহ।