আমাদের সময়ের ডা. খাস্তগীর গার্লস হাইস্কুল

নিলুফারুল আলম | সোমবার , ২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২২ at ১১:৩৮ পূর্বাহ্ণ

পূর্ব প্রকাশিতের পর
সাহিত্যিক আবুল ফজলের মৃত্যুতে তাঁর সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়েছিল এবং আলাপ-আলোচনা হয়েছিল। ধনীর বৌ হয়েও নিরহঙ্কারী ছিল। নিলুফার কায়সার এর পান খাবার অভ্যাস ছিল। অল্প বয়সে দুরারোগ্য ক্যানসার আক্রান্ত হয়ে তার মৃত্যু ঘটে। আতাউর রহমান কায়সারের ফুফাতো বোন আমার সহপাঠী ছিল। তার নাম উম্মে ছালেমা। সেও মেধাবী ছিল এক সময়ে পথিমধ্যে তার সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয়। সে ছিল সেন্ট প্লাসিড স্কুলের শিক্ষিকা।
বাঁশখালীর আর একজন হলেন কামরুন্নাহার জাফর। ডাঃ জাফরের স্ত্রী। সদরুল পাশার মামী। তিনি পাকিস্তান আমলে রাষ্ট্রীয় কোন উচ্চ পদে আসীন ছিলেন। তিনি আমার এক বৎসরের সিনিয়র ছিলেন। সদরুল পাশার মা সেলিনা আপা কামরুন্নাহার জাফরের ননদ দু’জনে সহপাঠী ছিলেন। সেলিনা আপা খাস্তগীর স্কুলের সেরা সুন্দরী ছিলেন (প্রয়াত) সদরুল পাশার খালা জিন্নাত আরা আমার সহপাঠী ছিলেন।
চট্টগ্রাম কলেজের প্রফেসর জালালউদ্দীনের চার মেয়ে ডাঃ খাস্তগীর স্কুলের ছাত্রী। বড় মেয়ে মদিরা আপা আমার অনেক সিনিয়র ক্লাসে ছিলেন। মেজ মেয়ে নুরুননাহার রেনু তিনিও আমার সিনিয়র ছিলেন। ৩য় মেয়ে জেবুন্নাহার আইভি আমার সহপাঠী ছিলেন। ৪র্থ জন গুলনাহার ডলি আমার দু’বছরের জুনিয়র ছিল। তারা মেধার চেয়ে বেশি সুন্দরী ছিল। আইভি ও ডলি নৃত্যের মধ্যে বেশ সুনাম অর্জন করেছিল। তাঁরা চন্দনপুরায় থাকতেন। পরে তাদের পিতা ঢাকা বদলি হয়ে যাওয়ায় সেখানে তাঁদের শিক্ষা-দীক্ষা চলে। জেবুন্নাহার আইভি রাজনীতিতে সক্রিয় অংশগ্রহণ করে। রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের সাথে তিনি বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছিলেন। ২০০৪ সালে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলায় আক্রান্ত হয়ে তাঁর মর্মান্তিক মৃত্যু ঘটে। আর এক বুনিয়াদী বংশ একে খানের মেয়ে কোহিনূর আপা। এম. আর সিদ্দিকীর স্ত্রী। এ খাস্তগীর স্কুলের ছাত্রী মিরসরাইয়ে লতিফা সিদ্দিকী কলেজ কোহিনূর আপার নামে প্রতিষ্ঠিত। যার ফলে সেখানকার হাজার হাজার শিক্ষার্থী শিক্ষাগ্রহণ করতে সমর্থ হয়েছে। একে খানের ভাগ্নি নুরী, নিলু, বেবী তারাও অত্যন্ত মেধাবী, সুন্দরী এবং রাষ্ট্রীয়ভাবে পরিচিত ছিল।
বিশিষ্ট শিল্পপতি সোলেমান চৌধুরীর বাড়ি চান্দগাঁয়ে চৌধুরী বাড়িতে। শহরের আবাসস্থলে ছিল এখনও আছে এনায়েত বাজার। শিল্পপতি হলেও তিনি শিক্ষানুরাগী ছিলেন। তাঁর তিন মেয়ে খাস্তগীর স্কুলের ছাত্রী ছিল। রওশন (পেয়ারী) আমার সহপাঠী ছিল। মেজ মেয়ে গুলশান আমার এক বছরের জুনিয়র ছিল। ছোট মেয়ে রানী আমার ছোট বোনের সহপাঠী ছিল। তারা মেধাভিত্তিক উত্তীর্ণ হতো। রওশন মেধাবী হলেও দশম শ্রেণি পড়াকালে তার বিয়ে হয়ে যায়। সংসার জীবনে সে দশ সন্তানের জননী হয়েছিল। সে তার সন্তানদের উচ্চ শিক্ষায় শিক্ষিত করে নিজে বেশি শিক্ষিত হতে না পারার ক্ষোভ মিটিয়ে ছিল। ২/৩ জন প্রায় ডাক্তারও হয়েছিল। গুলশান ঢাকায় কোন এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষিকা ছিলেন। বর্তমানে তারা তিন বোনই প্রয়াত।
পেঁচো মিঞার মেয়ে জাকিয়া আপা, ডাঃ আবদুল গণির শালী জলি আপা, ডাঃ আঞ্জুমান আপা ডাঃ চেমন আরা আমার অনেক সিনিয়র ছিলেন। আমি যখন ৫ম শ্রেণিতে তারা তখন ১০ম শ্রেণিতে অধ্যয়নরত ছিলেন। তাঁরা অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। ডাঃ আবুল হাসেমের দু’কন্যা সে সময়ে এ স্কুলে পড়তেন বড় জনের নাম মোহসেনা, ছোট জন জেবুন্নেছা আপা খাস্তগীর স্কুলে শিক্ষকতা করেছেন। বর্তমানে অবসরের পর প্রয়াত।
আমার এক বৎসরের সিনিয়র ছিলেন ডাঃ কামরুজ্জামানের কন্যা নিরহংকারী কামরুন আপা, গল্প পড়ুয়া আপা ছুটি হলে আমার কাছ থেকে বই খুঁজতেন। তিনি অধ্যাপক, সাহিত্যিক মমতাজ উদ্দীন স্যারের স্ত্রী ছিলেন। ডাঃ জুলফিকার আলীর মেয়ে বিলকিস আপা কামরুন আপার সহপাঠী অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন। স্কুল জীবনে দুরারোগ্য রোগে মৃত্যুবরণ করেন।
ও. আর নিজামের মেয়ে ফরিদা নিজাম মুক্তিযোদ্ধা রসুল নিজামের বোন আমার এক বৎসরের সিনিয়র ছিলেন। তিনি মেধাবী ছিলেন। সম্ভবত বিখ্যাত স্থপতি নভেরা তাঁদের আত্মীয় সম্পর্কিত ছিলেন।
জওশন আরা বুলবুল আপা, জাহানারা জুবলী আপা সাব-রেজিস্ট্রারের দু’মেয়ে খাস্তগীর স্কুলের ছাত্রী। দু’জনে মেধাবী গালর্স গাইড ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অগ্রণী ছিলেন। তাদের প্রতি বড় আপার কৃপা দৃষ্টি ছিল। জওশন আরা বুলবুল আপা সাহিত্যিক মাহবুব উল আলম চৌধুরীর স্ত্রী। যিনি মাতৃভাষার প্রথম কবিতা লিখে বাংলাদেশ জোড়া সারা জাগিয়েছিলেন। জাহানারা জুবলী আপার স্বামী নজরুল গবেষক রফিকুল ইসলামের স্ত্রী। বর্তমানে দু’জনের স্বামী প্রয়াত।
নুর আহমদ চেয়ারম্যান। চট্টগ্রাম পৌর সভার প্রথম চেয়ারম্যান তাঁর দু’কন্যা খাস্তগীর স্কুলের ছাত্রী। তাঁরা আমার সিনিয়র ছিলেন। চেয়ারম্যানের বড় ছেলের মেয়ে কামরুন্নাহার লালু আমার সহপাঠী ও নিকট বান্ধবী ছিলেন।
চট্টগ্রামের খান্দানী বংশ দোভাষ পরিবারের আবু সৈয়দ দোভাষীর দু’মেয়ে মাছুমা আপা, মাহমুদা আমার সহপাঠী এই স্কুলের ছাত্রী। তারা সুন্দরী চলাফেরায় রাজকীয় ভাব ছিল। কিন্তু আমার সঙ্গে বন্ধুত্বভাব ছিল মাহমুদার। শুনেছি চন্দনপুরায় সুন্দর মসজিদটি তাদের। বর্তমানে দোভাষ পরিবার থেকে সিডিএর চেয়ারম্যান নিযুক্ত হয়েছেন।
নজির আহমদ চৌধুরীর মেয়েরা এ স্কুলে পড়তেন। তাঁর ভাগ্নি রোকেয়া আমার সহপাঠী ছিল। নজির আহমদ চৌধুরী রোড উক্ত ব্যক্তির নামে নামকরণ হয়। চট্টগ্রামের খ্যাতিমান পরিবারগুলোর মেয়েরা সে সময় খাস্তগীর স্কুলেই পড়েছেন। এই বৃদ্ধ বয়সে এসে অনেকের নাম বিস্মৃত হচ্ছি।
আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী মরিয়ম কবির আমার জুনিয়র নিলুফার কবির শিল্পপতি কবির আহমদের দু’কন্যা। তারা দু’বোনের বিয়ে বিশিষ্ট ব্যক্তির সঙ্গে হয়েছিল। মরিয়ম কবির আমার বিয়েতে ‘অপরাজিত’ বইটি উপহার দেয়। তা আমি এখনও সংরক্ষণ করে রেখেছি আমার বান্ধবীর স্মৃতিরূপে।
আমার আর এক সহপাঠী প্রতিমা দেবী। সে এ স্কুলে অধ্যয়ন করে উক্ত স্কুলের শিক্ষিকা পদে যোগ দেয়। ডাঃ আবদুল গণির এক মেয়ে এ স্কুলে অধ্যয়ন করতে দেখেছি। তিনি আমার কয়েক বৎসরের সিনিয়র ছিলেন। তিনি জলি আপার বোনঝি ছিলেন। জলি আপার ছোট বোন আলিমুন্নেছা লিলি আমার সহপাঠী ছিল (প্রয়াত)।
চট্টগ্রাম কলেজের অধ্যাপকের মেয়েরা এ স্কুলে পড়েছিল। অধ্যাপক ওমদাতুল ইসলামের মেয়ে আবেদা খাতুন এমি এবং তাঁর ভাই অধ্যাপক হেদায়তুল ইসলামের মেয়ে আইভি আমার সহপাঠী ছিল। আমার সহপাঠী নার্গিস জাকিয়া সুলতানা চট্টগ্রাম কলেজের প্রফেসরের মেয়ে ছিল। পেড্রোলা পাম্পের মালিক নাদের খানের বোন ছাকিনা আমার সহপাঠী ছিল। তাদের বাড়ি ফটিকছড়ি। তাই সে হোস্টেলে থাকতো। তার আর এক বোন পড়তো আমাদের জুনিয়র। তাঁর স্বামী ডাঃ জামালুদ্দিন ইউসুফ বোধ হয়। তাঁর বড় মেয়েকে আমার মামাতো ভাই ফেরদৌস খানের বড় ছেলে ফাইয়াজ খানের সঙ্গে বিয়ে দিয়েছে। মগরাজার মেয়েও চাকমা রাজার ভাগ্নি এ রকম কিছুটা জানতাম যুথিকা (উনিকা) আমার সহপাঠী ছিল। আরও চাকমা মেয়ে আমাদের সঙ্গে পড়তো তাদের নাম মনে করতে পারছি না। তারা ৩ জনে হোস্টেলে থাকতো তাদের উচ্চ শিক্ষার অভিলাষ ছিল বলে তারা ডাঃ খাস্তগীর পড়তে এসেছিল।
দেওয়ানহাট থেকে কিছু ছাত্রী আসতো। দু’ সুলতানের মেয়েরা পড়তো এই দেওয়ানহাট থেকে একজন ব্যারিস্টার সুলতান, আর একজন কন্ট্রাকটার সুলতান। বিশিষ্ট শিল্পপতি বেগম রাইস মিলের মালিকের মেয়ে কামরুন্নাহার আমার সহপাঠী ছিল। বড় লোক হলেও তার কোন অহংকার ছিল না।
ডাঃ খাস্তগীর গার্লস হাইস্কুলে দু’টি বাস চালু ছিল। এ বাসগুলো বড় বাস ও ছোট বাস নামে অভিহিত ছিল। দু’বাসে দু’জন দাই থাকতো ছাত্রীদের নিরাপত্তার জন্য। একটা বাস টাইগারপাস রেলওয়ে অফিসের কর্মকর্তা ও অফিসারের মেয়েদের বহন করে স্কুলে আনা-নেওয়ার কাজ করতো। অন্য বাসটা অন্যান্য বাস যাত্রী ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের আনা- নেওয়ার কাজ করতো। আমার সঙ্গে পড়তো বেগম মোমেনা, রওশন আক্তার তারা কুমিল্লাবাসী ছিল। আমার পৌঢ়ত্ব জীবনে রওশন আক্তারের সঙ্গে দেখা হয়। তার স্বামী ডাঃ মালেক চট্টগ্রামে চান্দগাঁয়ে নিজস্ব বাড়ি ঘর তৈরি করে এখানে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। বহু বছর আগে তারা ইহলোক ত্যাগ করেন। তাদের ছেলে- মেয়ে হয়ত ঐ বাড়িতে আছে।
আমার বুবুর ননদ হাফছা এ স্কুলের ছাত্রী ছিলেন। তিনি হোস্টেলে থাকতেন। তাঁর স্বামী উচ্চ চাকরিজীবী ছিলেন। তাঁর এক ছেলে ঢাকায় ইবনে সিনা হাসপাতালের বড় ডাক্তার।
কবি ও শিক্ষক ওহীদুল আলমের আমি জ্যেষ্ঠ কন্যা ডাঃ খাস্তগীর গার্লস হাই স্কুলের ছাত্রী, আমার পরবর্তী বোন হাসিনাতুল আলম, সেজ বোন নার্গিস আলম এবং কথা সাহিত্যিক আবুল ফজলের একমাত্র কন্যা মমতাজ জাহান বর্তমানে মমতাজ লতিফ এ স্কুলে অধ্যয়ন করেছে। আমার অধ্যয়নের শেষের দিকে এ স্কুলে সাহিত্যিক, সাংবাদিক মাহবুব উল আলমের কন্যা মদীনাতুন আলম ও জহরতুল আলম এ স্কুলে ভর্তি হয়। জওহর চতুর্থ শ্রেণিতে পড়াকালীন অকালে প্রাণ হারায়। হাজার হাজার ছাত্রীর সমাবেশ এ স্কুলে। সবার পরিচয় প্রদান করা সম্ভব হচ্ছে না। স্মৃতি ভ্রান্তির কারণে ভুল ত্রুটি থাকা অসম্ভব নয় যা মার্জনার আবেদন থাকলো।
ডাঃ খাস্তগীর গার্লস হাইস্কুলে পাঠদান পদ্ধতির মধ্যে শুদ্ধ উচ্চারণ, সুন্দর পরিচ্ছন্ন হস্তাক্ষর, ড্রইং, পেইনটিং, উল এবং কাপড়ের সেলাই শেখার পদ্ধতি চালু ছিল। পাঠ্যবই ছাড়া জ্ঞানার্জনের জন্য গল্প বই পড়ার জন্য লাইব্রেরি থেকে বই দেবার নিয়ম ছিল। যারা এ স্কুলে লেখাপড়া করেছে তাদের চালচলন ও কথাবার্তায় আধুনিকতার ছোঁয়া স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান হয়।
চট্টগ্রাম শহরের খান্দানী পরিবার হাতি কোম্পানী। তাঁর নাতনি জেবুন্নেছা আপা সুন্দরী ও মেধাবী ছিলেন। উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তার সাথে তাঁর বিয়ে হয়েছিল। ডাঃ সৈয়দুল হকের মেয়ে জাহানারা আমার সহপাঠী ছিল। মেধাবী ছিল। গল্প বই পড়ুয়া ছিল। সে পুলিশ লাইন হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা ছিল। আমার বাবার মৃত্যুর খবর শুনে সে আমার বাবার বাসায় আমার বাবাকে দেখতে আসে। বর্তমানে সে প্রয়াত।
একবার আমাদের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের নিয়ে বনভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। অর্থাৎ স্টাডি ট্যুরের ব্যবস্থা। স্কুল থেকে কোর্মা, পোলাও ইত্যাদি রান্না করে বাসযোগে আমরা পতেঙ্গা সি বিচে উপনীত হই। সঙ্গে আমাদের শিক্ষকরা ছিলেন। প্ল্যান ছিল সমুদ্র জলে দাপাদাপি করে গোসল করা, সকলে সেভাবে আর এক সেট জামা কাপড় নিয়ে তৈরি হয়ে গিয়েছিল। আপারা হোটেলে নাস্তা করতে গেলেন। আমরা প্রায় সকলে পানিতে নেমে পড়লাম। বেশি পানিতে না গিয়ে বুক পানিতে ছিলাম। কিছুক্ষণ পর দেখি আমাদের এক বান্ধবী মরিয়ম কবির পানির অতলে ডুবে যাচ্ছে, তার গা এলিয়ে দিয়েছে। তার শরীরটা তখন এত ভারি হয়ে গিয়েছিল যে তাকে উঠানো সম্ভব হচ্ছিল না। অনেক কষ্টে আমরা প্রায় কয়েকজন মিলে পানি থেকে তাকে তুলে সাগর পাড়ে বালির উপর সুইয়ে দিলাম। খবর পেয়ে আপারা দৌড়ে এসে পৌঁছলেন। প্রাথমিক চিকিৎসার পর তার জ্ঞান ফিরে এলো। এবার সকলে ভেজা কাপড় পাল্টিয়ে ভোজের জন্য সব তৈরি করতে লাগলো। বালির উপর চাদর বিছানা হলো। রান্না করা ডেকচিগুলো বাসন কোসন গ্লাস বাস থেকে নামানো হল। এবার আর একটি নির্মম দুর্ঘটনা শুরু হয়ে গেল। সাইমুন আরম্ভ হল অর্থাৎ বালির ঝড়। সবাই তাড়াহুড়ো করে খাবার সরঞ্জামাদি বাসে তুলে নিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। সে বালির ঝড়ে আমাদের চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে যাবার উপক্রম হলো। বাতাসের গতিবেগ এত বেশি যে বাসটাকে প্রায় বাঁকা করে ফেলে দেবার অবস্থা। তাৎক্ষণিক এ ঝড় আসায় বাসটাকে সমুদ্র পাড় থেকে সরানো যাচ্ছিল না। আতঙ্কিত মনে সকলে আল্লাহর নাম জপতে লাগলো। অনেকে নামাজ, রোজা আরও কত কি নিয়ত করে ফেলেছিল। প্রায় অনেকক্ষণ ধরে চলল ঝড়। যেখানে খাবারের আয়োজন করা হয়েছিল সেখানে জোয়ারের পানি এসে একাকার করে ফেলেছিল। ভাগ্যিস খাবারের জিনিষপত্রগুলো তোলা হয়েছিল, তা না হলে সমুদ্রের অতলে ডুবে যেত সব। সেদিন ৭০/৮০ জন ছাত্রী ও শিক্ষিকাদের জীবন কিভাবে বেঁচে গেছিল তা একমাত্র আল্লাহর রহমত ছাড়া আর কিছু নয়। সন্ধ্যা হয় হয় এমন সময় আমরা স্কুল প্রাঙ্গণে সহি-সালামতে এসে পৌঁছে ছিলাম। বনভোজনের আনন্দ নয়, মরণ পাড় থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম বলে আল্লাহর দরবারে হাজার শোকর আদায় করেছিলাম। ডাঃ খাস্তগীর গার্লস স্কুলের এ স্মৃতি আমার মনে অম্লান হয়ে থাকবে।
লেখক : সাহিত্যিক

পূর্ববর্তী নিবন্ধনারী ফুটবলাররাই আমাদের ফুটবল অঙ্গনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ
পরবর্তী নিবন্ধঢাকায় কুরিয়ার সার্ভিসের কাভার্ডভ্যানে বিস্ফোরণ একজন নিহত