আমাদের সন্তান যেনো পারে আলো ছড়াতে

দিলরুবা আক্তার চৌধুরী | শনিবার , ১৬ জানুয়ারি, ২০২১ at ৬:২২ পূর্বাহ্ণ

প্রতিটি মানুষের জীবনে সেরা প্রাপ্তি সন্তান। আর তাদের মানবিক মূল্যবোধ সম্পন্ন আদর্শবান মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার মাঝেই জীবনের পূর্ণতা। পরিবার হচ্ছে শিশুর প্রথম পাঠশালা আর প্রধান ও প্রথম শিক্ষাগুরু হচ্ছে পিতামাতা। আমরা মুখে যতই বলি শিক্ষক হচ্ছে মানুষ গড়ার কারিগর প্রকৃত অর্থে মানুষ গড়ার ভিত্তি তৈরি করেন বাবা মা তথা পারিবারিক পরিবেশ। তাই আপনার শিশুকে ছোটবেলা থেকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা দিন, খারাপকে বর্জন আর ভালোকে অর্জন করার শিক্ষা দিন। আর বাবা মা নিজেদেরকে সন্তানের কাছে আদর্শবান মানুষ হিসেবে উপস্থাপন করুন। সন্তানের সাথে বন্ধুত্ব গড়ে তুলুন। সন্তান কাদের সাথে মেলামেশা করে কোথায় যায় তার খোঁজ রাখুন। প্রয়োজনে তাদের বন্ধুদের বাবা মায়ের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলুন। তাদের বোঝানোর চেষ্টা করুন জীবনে ভালো বন্ধুর গুরুত্ব আর খারাপ বন্ধু যে জীবনে সর্বনাশ ডেকে আনে। মাঝে মাঝে সন্তানের সাথে স্কুলে যান, তাদের শিক্ষক, বন্ধুবান্ধব ও অভিভাবকের সাথে কথা বলুন। সন্তান যতই বলুক আমার হাত ধরবেনা, আমার পেছনে পেছনে আসবেনা, বন্ধুরা আমাকে ফিডার খাওয়া বেবী বলে শুনবেন না। বন্ধুরা দেখুক আপনার সন্তানের সাথে আপনার এটাচমেন্ট কেমন। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন খুন, ধর্ষণ, ছিনতাই, মাদকাশক্তির কারণে নানা অপকর্ম যেভাবে খবরের শিরোনাম হচ্ছে তাতে বারবার আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে অভিভাবকের ভূমিকার গুরুত্ব। প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা পয়সা সন্তানের হাতে দেবেন না এটাই একদিন কাল হবে হয়তো দেখবেন সে বিপথে গিয়ে আপনার টাকাই চুরি করছে। কোথাও যেতে চাইলে সাথে করে নিয়ে পৌঁছে দিন তা সম্ভব না হলে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখুন কোথায় কি করছে। আজকাল ছেলেমেয়েদের আরেক বাহানা দিনে পড়াশোনা হয় না তাই রাত জেগে পড়াশোনা করে। আপনি সতর্ক থাকুন আপনার সন্তান রাত জেগে কি করে, রুম লক করতে দেবেন না। মাঝে মাঝে রুমে খাবার দেয়ার ছলে দেখে আসুন, গল্প করুন আপনার ঘুম আসছেনা তাই। মনে রাখবেন বিশ্ব এখন হাতের মুঠোয় স্মার্ট ফোনে, তাই অনেক খারাপ কিছু হাতের নাগালে। বাবা মায়ের সাবধানতাই সন্তানকে খারাপ কিছু থেকে রক্ষা করতে পারে। এখন একটা সত্যিকার ঘটনা তুলে ধরছি আমাদের অভিভাবকের আরো সতর্ক হওয়ার স্বার্থে। একদিন খবর পেলাম আমার কর্মস্থলের হোস্টেলে দিনের বেলায় কেউ থাকেনা সে সুযোগে কিছু ছেলে ঢুকে পড়েছে নিরিবিলিতে আড্ডা দিতে, সিগারেট খেতে।আমি সাথে সাথে তিনজন সহকর্মী ও দুজন স্টাফ নিয়ে হোষ্টেলে যাই ওদের আটকিয়ে বিস্তারিত জানি কে কোথায় পড়ে। বয়স তাদের বিশের মধ্যে।কলেজ ফাঁকি দিয়ে এখানে আসার জন্য ভয় লাগাই, ছবি তুলে রাখি পুলিশকে, অভিভাবককে জানাবো বলি।
আমার এক সহকর্মী একজনকে দেখিয়ে ফিসফাস করে বললো ও এলাকার অমুকের ছেলে, আমি তাকে বললাম অমুককে বলো তার ছেলে কলেজে না গিয়ে এখানে আড্ডা দিচ্ছে।কিছুদিন আগে জানলাম অমুকের ঐ ছেলে প্রেমের কারণে আত্মহত্যা করেছে। শুনে চোখে পানি এসে গেলো। তার বাবার সাথে সেদিন পথে দেখা হলো, আমাকে দেখে সামনে এসে সেকি আহাজারী, কান্না করতে করতে বললেন আমার ছেলে যদি কোনো অন্যায় করে থাকে মাফ করে দেবেন। বলেন বাসায় যেতে ইচ্ছে করেনা ছেলের মায়ের বিলাপ দেখে, ছেলের শূন্যতা বুকে হাহাকার বাজে। পরিশেষে বলবো- “আমাদের সন্তান যেনো থাকে দুধেভাতে, সুসন্তান হয়ে যেনো পারে আলো ছড়াতে”।

পূর্ববর্তী নিবন্ধভালোবাসো?
পরবর্তী নিবন্ধসরকারের যুগপূর্তি : আমাদের প্রত্যাশা ও প্রাপ্তি