ভাষা আসলে বহমান নদীর মতন, ভাষার শব্দের খামখেয়ালিপনার অন্তনেই। পঞ্চাশ বছর আগের আরবী ফারসি ইংরেজী উর্দূ হিন্দি মুখের ভাষাও লেখার ভাষা আর এখনকার মুখের ভাষা ও লেখার ভাষায় রদবদলেরব্যাপারটা চোখে পড়ার মতো। ব্যাকরণের মানটাকে মেনেই এই বদলটাআসছে লেখার ভাষাতে। ভারতের কেরালা রাজ্যের ‘মালায়ালাম‘ ভাষারসাথে তামিলনাড়ু রাজ্যের ‘তামিল‘ ও শ্রীলংকার ‘তামিল‘ ভাষার লেখারঅক্ষরে পার্থক্য আছে কিন্তু শব্দার্থে যথেষ্ট মিল। মালায়ালীরা তামিলবোঝে, তামিলরা মালায়ালী বোঝে। আবার ওই তামিল ও মালায়ালামভাষার সাথে ভারতের কর্নাটক রাজ্যের ‘কানাড়ি‘ ভাষারও মিল আছে।কানাড়িভাষী মালায়ালাম ও তামিল বোঝে। উচ্চারণে হেরফের আছে।ওদিকে সংস্কৃত হতে অদলবদল হয়ে আগত অনেক শব্দ হিন্দিতে, তামিলে, মালায়ালামে, কানাড়িতে, এবং বাংলাতে আছে।
২১ ফেব্রুয়ারী ২০২৩ প্রকাশিত ইথনোলগ এর ২৬ তম সংস্করণ অনুযায়ী পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার দিক দিয়ে বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থানসপ্তম(৭ম)। আর মাতৃভাষার দিক দিয়ে বাংলা ভাষার বর্তমান অবস্থানপঞ্চম (৫ম)। এই তথ্য প্রতিবছরই পরিবর্তনশীল। ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ১৭নভেম্বর অনুষ্ঠিত ইউনেস্কোর প্যারিস অধিবেশনে একুশে ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালনের প্রস্তাব উত্থাপন করা হলে এতে ১৮৮টি দেশ সমর্থন জানায়। যার ফলশ্রুতিতে ২০০০ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি থেকে দিবসটি জাতিসংঘের সদস্যদেশসমূহে যথাযথ মর্যাদায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।
ইউনেস্কো ১৯৯৯ সালে দিনটিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবেঘোষণা করার আগ পর্যন্ত বাংলাদেশে এই দিনটিকে শহীদ দিবস হিসেবেপালন করা হতো। মাতৃভাষা আমাদের মানবিক সত্তার এক অপরিহার্যঅংশ। অথচ ববর্র কুখ্যাত পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী বাংলা ভাষাকেপ্রাপ্য মর্যাদা না দিয়ে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা রূপে অন্যায়ভাবে চাপিয়ে দিতেউদ্যত হলে, বাংলাদেশের সংগ্রামী ছাত্র–জনতা সংগ্রামে বিক্ষোভে মুখরহয়ে উঠে। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বীর বাঙালি শেষ পর্যন্ত বুকেররক্ত দিয়ে আদায় করে নিল মাতৃভাষার প্রাপ্য মর্যাদা । ভাষাআন্দোলনের সেই রক্ত স্বাক্ষরিত দিন বলেই আমাদের জাতীয় জীবনেএকুশে ফেব্রুয়ারির বড়ই তাৎপর্যময়। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে সকল শহীদের প্রতি রইল শ্রদ্ধা।