আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে

| শুক্রবার , ৩ মার্চ, ২০২৩ at ৫:০৩ পূর্বাহ্ণ

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষি উৎপাদনে উৎকর্ষতা অর্জনে গবেষণায় অতিরিক্ত প্রচেষ্টা চালানোর জন্য বিজ্ঞানীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেন, আমি সবসময় মনে করি, গবেষণা ছাড়া শ্রেষ্ঠত্ব অর্জন করা সম্ভব নয়। আমরা কৃষিনির্ভর দেশ হওয়ায় আমরা কৃষিকে বাড়তি গুরুত্ব দিয়েছি।

সম্প্রতি গাজীপুর জেলায় বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের (ব্রি) ৫০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী এবং ‘বঙ্গবন্ধু পিয়েরে ট্রুডো কৃষি গবেষণা কেন্দ্র’ উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

খাদ্য উৎপাদন বাড়ানোর বিষয়ে ধারাবাহিক গবেষণার ওপর গুরুত্বারোপ করে তিনি বলেন, ‘ভৌগোলিক অবস্থান এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে বাংলাদেশ প্রায়ই প্রতিকূল পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। সুতরাং আমাদের ফসল উৎপাদন করতে হবে’। কৃষি গবেষণায় সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ শুধু খাদ্যশস্য উৎপাদনেই নয়, সবজি, ফলমূল ও অন্য কৃষিপণ্যের ক্ষেত্রেও দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে’। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশের সঙ্গে তাল মিলিয়ে নতুন জাতের ফসল দিয়ে উৎপাদন অব্যাহত রাখতে হবে।

স্থানীয় শিল্পকে আরও কার্যকর করতে দেশীয় বাজার সমপ্রসারণ এবং জনগণের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন তিনি। বলেছেন, আমরা রপ্তানি যেমন করব, তেমনই নিজের দেশের বাজারও যাতে সৃষ্টি হয় এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে, সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। তাহলেই আমাদের ইন্ডাস্ট্রিগুলো আরও কার্যকর হবে এবং উৎপাদন বাড়াতে পারবে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আজকের কূটনীতি শুধু রাজনৈতিক কূটনীতি নয়, এটি হতে হবে অর্থনৈতিক। সেজন্যই প্রতিটি দূতাবাসকে ব্যবসাবাণিজ্যরপ্তানি, কোন দেশে কোন পণ্যের চাহিদা বেশি; আমরা কী রপ্তানি করতে পারি বা কোথা থেকে আমরা বিনিয়োগ আনতে পারি, সেদিকে দৃষ্টি দিতে নির্দেশ দিয়েছি। বিভিন্ন দেশে যখন গিয়েছি, সেখানকার রাষ্ট্রদূতদের ডেকে এ বিষয়ে ব্রিফ করেছি। যেখানে যে পণ্যের চাহিদা বেশি, সে পণ্যটা আমাদের দেশে আমরা উৎপাদন করে রপ্তানি করবএভাবেই আমরা বাণিজ্য বৃদ্ধি করব।

প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামনের দিনগুলোতে চালের চাহিদা আরও বৃদ্ধি পাওয়ার প্রেক্ষিতে ধানের উৎপাদন বাড়াতে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। এ জন্য গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করার প্রতি গুরুত্বারোপ করে তাঁরা বলেন, দেশে একদিকে যেমন জনসংখ্যা বাড়ছে, অন্যদিকে তেমনি কৃষি জমি কমছে। ভুট্টা, শাকসবজিসহ অন্যান্য ফসলেও জমির ব্যবহার বাড়ছে। বাড়িতে যেসব ফসল হতো যেমন চালকুমড়া সেগুলো এখন মাঠে হচ্ছে। এসবের ফলে ধান চাষের জমি কমছে। এই জটিল পরিস্থিতিতে চালের উৎপাদন বাড়াতে হলে গবেষণায় আরও জোর দিতে হবে। একইসঙ্গে, উদ্ভাবিত জাতের দ্রুত সমপ্রসারণ করতে হবে। বর্তমান সরকার সকলের জন্য পুষ্টিজাতীয় খাবারের নিশ্চয়তা দিতে কাজ করছে। বাণিজ্যিকভাবে বিভিন্ন ফল উৎপাদনেও জমির ব্যবহার বাড়ছে। এ অবস্থায় সকল সংস্থা, বিজ্ঞানী ও কর্মকর্তাদেরকে সমন্বিতভাবে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা নিয়ে আগামীর চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে। চালের বাম্পার উৎপাদনের পরও কেন দাম কমছে না, তার প্রকৃত কারণ খুজে বের করতে বস্তুনিষ্ট গবেষণার প্রয়োজন।

বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ। কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদনের অনুকূল পরিবেশ রয়েছে এদেশে। শুধু ধান ও গম উৎপাদনে নয়, মাছ, সবজি, পশু পালন, গোশত উৎপাদন, আলু উৎপাদন, নানা ধরনের ফল উৎপাদনে বাংলাদেশে অনুকূল পরিবেশ রয়েছে। এসব খাতে উৎপাদনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ ভালো অবস্থানে রয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিলের তথ্য থেকে দেখা যায়, ধান উৎপাদন, সবজি উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের তৃতীয়, ইলিশ উৎপাদনে প্রথম, মাছ উৎপাদনে দ্বিতীয়, ছাগল উৎপাদনে চতুর্থ ও ছাগলের গোশত উৎপাদনের সপ্তম অবস্থানে রয়েছে। পোলট্রি ও ডিম উৎপাদন মানুষের চাহিদা মিটিয়ে যাচ্ছে। আলু উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বের সপ্তম এবং বছরে আলু উৎপাদন হয় ১ কোটি ১০ লাখ মেট্রিক টন। পুষ্টিকর খাদ্য দুধ উৎপাদনে বাংলাদেশের অবস্থান ভালো। বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎপাদনের এই অবস্থানকে আরো বৃদ্ধি ও গতিশীল করার জন্য সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কার্যকর পদক্ষেপ ও প্রয়োজনীয় আর্থিক ও কারিগরি সহযোগিতা বাড়ানো অত্যন্ত জরুরি। কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য উৎপাদন বৃদ্ধি অব্যাহত না রাখলে সঙ্কট আরো ভয়াবহ হতে পারে। ধান উৎপাদনে বাংলাদেশ বিশ্বে অন্যতম শীর্ষস্থানীয় হলেও চালের উৎপাদন বাড়েনি। বিশেষজ্ঞরা আগামী বছর খাদ্য সঙ্কটের যে আভাস দিয়েছেন, সেটা মোকাবেলা করতে হলে চালের মজুদ বাড়াতে হবে।

অর্থনীতিবিদরা বলেন, আমাদের প্রতিটি ক্ষেত্রেই উৎপাদন বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একাধিকবার বলেছেন, দেশের এক ইঞ্চি জমিও পতিত রাখা যাবে না। শুধু কৃষি ক্ষেত্রেই নয়, সম্ভাব্য প্রতিটি ক্ষেত্রেই আমাদের উৎপাদন বাড়াতে হবে। দেশে এমন অনেক ক্ষেত্র রয়েছে, যেখানে উৎপাদনক্ষমতা এখনো পূর্ণ মাত্রায় ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে না। উৎপাদন সক্ষমতার পুরো সদ্ব্যবহার করতে হবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ৭৮৬
পরবর্তী নিবন্ধএই দিনে